ধূমপান করার বিধান কি? ধূমপান করলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয়না এ কথা কি সঠিক?

প্রশ্ন: ধূমপান করার বিধান কি? “ধূমপান করলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয়না” এ কথা কি সঠিক?
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর:
নি:সন্দেহে তামাক (Tobacco) থেকে তৈরি সকল প্রকার নেশা বস্তু গ্রহণ করা হারাম। যেমন: আগুন দিয়ে সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, হুঁকো, সীসা বা অন্য কোন মাধ্যমে ধূমপান করা। অনুরূপভাবে পানের সাথে চিবিয়ে জর্দা খাওয়া, ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে গুল বা নাকে ঠুসে (নস্যি) ব্যবহার করা ইত্যাদি। এগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কেননা মানব দেহে এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব মারাত্মক ভয়ঙ্কর। আধুনিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে, এর ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয় যা ধূমপানে অভ্যস্ত মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে।

তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ বলেন, “তামাক অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। একখানি সিগারেটে যতখানি তামাক আছে তা চিবিয়ে খেলে পুরপুরি শরীরে যদি প্রবেশ করত তা থেকে দ্রুত মৃত্যু অনিবার্য। তবে ধূমপানের ফলেও ধীরে ধীরে আয়ু কমে আসতে থাকে-শুধু ক্যান্সারের প্রবণতার জন্যেই নয় হৃদরোগের জন্যেও বটে।” (উইকিপিডিয়া)
সুতরাং যারা এ সকল ক্ষতিকর দ্রব্য গ্রহণে অভ্যস্ত তাদের জন্য ফরজ হল, অনতিবিলম্বে এগুলো বর্জন করা এবং খাঁটি অন্তরে আল্লাহর নিকট তওবা করা।

❒ ধূমপান করলে কি ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না?

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মদ পান করে কেউ যদি যদি নেশাগ্রস্ত হয় তথা মদের প্রভাবে মাতাল বা মস্তিষ্ক বিকৃত হয় তাহলে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না (অন্যান্য ইবাদত নয়)। অর্থাৎ ৪০ দিন সালাত কবুল না হওয়ার বিধানটি কেবল মদ-গাজা বা নেশা দ্রব্য পান করার মাধ্যমে যারা নেশাগ্রস্ত বা মাতাল হয় তাদের উপর প্রযোজ্য; সাধারণ ধূমপানকারীদের উপর নয়। কারণ ধূমপান, গুল-জর্দা ইত্যাদি সেবনের মাধ্যমে সাধারণত: মানুষ নেশায় বুদ হয়ে মতালামি বা পাগলামি করে না। সুতরাং এসব হারাম ও ক্ষতিকর দ্রব্যাদি সেবনের ফলে গুনাহগার হলেও তাকে উক্ত হাদিসের আওয়াতায় ফেলার সুযোগ নাই।

এ প্রসঙ্গে হাদিস হল, আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَـلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.
‘‘কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে তওবা করে নেয় তা হলে আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারও তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অবশ্য যদি সে তওবা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারও তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কিন্তু যদি সে তওবা করে নেয় তা হলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহর হক হয়ে যায়, কিয়ামতের দিন তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো।
সাহাবিগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি?
তিনি বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ।”
(সহিহ ইবনে মাজা, হা/২৭৩৮, সহিহুল জামে লিশ শাইখ আলবানী, হা/৬৩১৩ নং হাদিস)

◆ উক্ত হাদিসে স্পষ্টভাবে ৪০ দিনের সালাত কবুল না হওয়ার জন্য মাদকদ্রব্য পান করার মাধ্যমে নেশাগ্রস্ত তথা মাতাল বা মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে। সুতরাং এ শর্ত না পাওয়া গেলে তা প্রযোজ্য হবে না।
◆ আরেকটি বিষয় হল, উক্ত হাদিসে একমাত্র সালাতের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং ’মাদকাসক্ত হয়ে মস্তিস্কৃ বিকৃত হলে ৪০ দিন সালাত ছাড়া অন্য কোন ইবাদত কবুল হবে না’ তা বলার সুযোগ নেই। আল্লাহু আলাম।

আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।