ধর্ষণ থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করার বিধান

প্রশ্ন: ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করা কি জায়েজ?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন কোনও অবস্থায় আত্মহত্যা করা জায়েজ নয়। সুতরাং, দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অসুস্থতা, হতাশা, শত্রুর আক্রমণ, সম্ভ্রমহানি, সম্ভ্রমহানির পর লোকলজ্জা ইত্যাদি কোনও কারণেই আত্মহত্যা করা যাবে না।
ইসলামের দৃষ্টিতে তা কবিরা গুনাহ এবং জাহান্নামে যাওয়ার একটি কারণ।
যাহোক, কোন নারী যদি ধর্ষকের কবলে পড়ে তাহলে তার জন্য আত্মরক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করা ফরজ। তারপরও যদি নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে জুলুমের শিকার হল। জালিমরা আল্লাহর কাছে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু জুলুমের শিকার ঐ নারী গুনাহগার হবে না বা এ জন্য আল্লাহর নিকট অপরাধী বলে গণ্য হবে না।
➧ প্রতিরোধ করতে গিয়ে যদি সে ধর্ষককে হত্যা করে ফেলে তাহলে ইসলামি আদালতে তার কোনও শাস্তি হবে না আর যদি সে এতে নিহত হয় তাহলে আখিরাতে শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ»
“যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ।
– যে ব্যক্তি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহিদ।
– যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহিদ।
– এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সেও শহিদ।” (আবু দাউদ, তিরমিযি-হাসান সহিহ)
➧ ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন, “আমার জানামতে পূর্বাপর কোন আলমের মধ্যে এ বিষয়ে দ্বিমত নাই যে, জোর পূর্বক ধর্ষণের শিকার নারীর উপর কোন হদ বা দণ্ড প্রয়োগ করা হবে না যদি সঠিকভাবে প্রমাণিত হয় যে, সে অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“إنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ”
“আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ‌ আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি ও জোরপূর্বক কৃত অন্যায় ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (ইবনে মাজাহ, হা/২০৪৫, বায়হাকি-সুনানুল কুবরা, হা/৭। হাদিসটি হাসান)
[উৎস: আল ইস্তিযকার ৭/৫১১]
❑ সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি:
প্রশ্ন: যদি কোনও মুসলিম নারী ধারণা করে যে, কাফের শত্রুরা তার ইজ্জতের উপরে হামলা করবে তাহলে কি তার জন্য নিজের সম্ভ্রম রক্ষা এবং মুজাহিদদের তথ্য গোপনের উদ্দেশ্যে যে কোনোভাবে আত্মহত্যা করা জায়েজ?
উত্তর:
لا يجوز لها أن تقتل نفسها، ولو خافت أن يقع بها ما ذُكر قهرا، وهي معذورة إن حصل ما خافت دون رضاها. اهـ
“তার জন্য আত্মহত্যা করা জায়েজ নয় যদিও তার সাথে জোরপূর্বক উল্লেখিত কিছু ঘটার আশঙ্কা করে। সে যা আশঙ্কা করছিলো তা যদি তার ইচ্ছার বাইরে সংঘটিত হয় তাহলে সে নির্দোষ বলে গণ্য হবে।”
❑ শাইখ আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি রহঃ
প্রশ্ন: যদি কোনও মুসলিম মহিলাকে আক্রমণ করা হয় এবং আক্রমণকারীরা তার সাথে অনৈতিক আচরণ করতে চায় তবে এ ভয়ে সে আত্মহত্যা করতে পারে কি?
উত্তর: জায়েজ নয়। (আল হুদা ওয়ান নূর ক্যাসেট সিরিজ, ক্যাসেট নং ৪৫১)
মোটকথা, কোনও নারীর জন্য ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে আত্মহত্যা করা বৈধ নয়। বরং তাকে সর্বশক্তি দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হবে। তারপরও সে আক্রান্ত হলে আল্লাহর নিকট অপরাধী বলে গণ্য হবে না। কারণ সে জুলুমের শিকার হয়েছে। বরং জালিমকে কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে আল্লাহ তাআলার বিচারের কাঠগড়ায় দণ্ডয়মান হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা জালিমদেরকে প্রতিহত করুন এবং নারীদেরকে সর্বপ্রকার অন্যায় ও জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।