দুআর প্রথমে ও শেষে দরূদ পাঠের গুরুত্ব এবং দুআ সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল

প্রশ্ন: ১. দোয়ায় হাত তুলে কি দরুদ শরীফ পড়া যাবে নাকি হাত তোলার আগেই দরূদ পড়তে হবে?
২. দোয়ায় কোন সুরা বা আয়াত পড়া যাবে কিনা (সুরা ফাতিহা, সুরা নাস, সুরা ফালাক, আয়াতুল কুরসি)? যদি পড়া যায় তাহলে তার আগে কি বিসমিল্লাহর রহমানির বলা যাবে কি না?
৩. দোয়া কিভাবে শেষ করতে হবে? অনেকে সুরা সফফাতের শেষ তিন আয়াত দিয়ে দোয়া শেষ করে। এটা সহীহ কিনা?

উত্তর:

নিম্নে এ সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:

◈ ক. একাকী দুআ-মুনাজাত করার অন্যতম একটি আদব হল, দু হাত উত্তোলন করা এবং দুআ করার পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দরূদ পেশ করা যদিও তা অপরিহার্য নয়। তবে এটি দোয়া কবুলের অন্যতম কারণ।

ফাযালা ইবনে উবাইদ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোককে সালাতে দুআ করতে শুনলেন। কিন্তু সে তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদও পড়েনি। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন:
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ رَبِّهِ سُبْحَانَهُ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ»
“যখন তোমাদের কেউ সালাত পড়বে (অর্থাৎ সালাতে দুআ করবে) তখন সে যেন প্রথমে তার মহান প্রতিপালকের প্রশংসা ও গুণগান করে অত:পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরূদ পেশ করে। তারপর যা ইচ্ছে দুআ করে। (সহিহ আবু দাউদ হা/১৩১৪, তিরমিযি)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ اَنسِ رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : كُلُّ دُعَاءٍ مَحْجُوْبٌ حَتَّى يُصَلّى عَلَى النَّبِىِّ صلي الله عليه وسلم. (حسن ، رواه الطبرانى-قال المحدث الألباني فى السلسلة الصحيحة الجزء أو الصفحة:2035 أنه حسن لشواهده

“আনাস রা. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতক্ষণ রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়া হবে না ততক্ষণ তা বাধাগ্রস্ত অবস্থায় থাকবে (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট পৌঁছবে না এবং দুআও কবুল করা হয় না।) [ত্বাবরানী: ২০৩৫ শাইখ আলবানী বলেন: অন্যান্য শাওয়াহেদ এর মাধ্যমে হাদিসটি হাসান]
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস আছে।

◈ খ. দুআর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা হিসেবে সূরা ফাতিহার প্রথম কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করা যেতেে পারে। কারণ এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর প্রশংসা রয়েছে।
এরপরে করণীয় হল, কুরআন ও হাদিসের দুআগুলো যথাসাধ্য পাঠ করার পাশাপাশি নিজের ভাষায় একান্ত একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা ও‌ বিনয়-নম্রতা সহকারে আল্লাহর নিকট নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে দুআ করা।

◈ গ. দুআ শেষ করার সময় পুনরায় নবি-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দরূদ পেশ করা ভালো কিন্তু তা জরুরি নয়।
ইমাম নওবি রহ. বলেন:
أجمع العلماء على استحباب ابتداء الدعاء بالحمد لله تعالى والثناء عليه ، ثم الصلاة على رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وكذلك تختم الدعاء بهما، والآثار في هذا الباب كثيرة مرفوعة
“এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত যে, দুআর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পেশ করা মুস্তাহাব। অনুরূপভাবে এ দুটির মাধ্যমে দুআ শেষ করাও মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে অনেক মারফূ আসার রয়েছে।” (আল আজকার: ১৭৬)

◈ ঘ. দুআর মাঝে যে সকল আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা বা দুআ আছে সেগুলো পাঠ করতেও আপত্তি নাই।

◈ ঙ. দুয়া শেষ করার সময় কেউ যদি মাঝে-মধ্যে সূরা সাফফাতের শেষের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো পড়ে তাহলেও আপত্তি নাই:
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّـهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
“অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী তোমার প্রতিপালক তারা যে সব কথা বলে থাকে (তার প্রতি যে সব অপবাদ দিয়ে থাকে) সেগুলো থেকে পূত-পবিত্র। রাসূলদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর নিমিত্তে। ”(সূরা সাফফাত: ১৮০-১৮২)
কেননা এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী-রাসূলদের প্রতি সালাম রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ফরজ সালাত শেষে বা বৈঠক শেষের দুআ হিসেবে উক্ত আয়াতগুলো পাঠ করা ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলো সহিহ সনদে প্রমাণিত নয় বরং মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল। সুতরাং তা আমলযোগ্য নয়।

আল্লাহু আলাম
▬▬▬✪◯✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।