প্রশ্ন: এক ভায়ের সম্পদের উপর আরেক ভায়ের কতটুকু হক রাখে? যদি কোনো ভাই তার অসুস্থ দরিদ্র ভাইকে সাহায্য সহযোগিতা না করে হজ-উমরা পালন করে, এমন জায়গায় দান-সদকা করে যেখানে লোকেরা তাকে চিনবে অথচ তার আপন ভাই-বোনদের খোঁজ-খবর নেয়া বা তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা দরকার মনে করে না। এসব লোকদের হজ্জ-উমরা ও দান-সদকা কি কবুল হবে?
উত্তর:
এক মুসলিমের উপরে আরেক মুসলিমের কিছু অবশ্য পালনীয় কর্তব্য রয়েছে। যেগুলোকে বলা হয় পারস্পরিক “হক বা অধিকার।” সেগুলো হল পাঁচটি:
▪১) সালামের উত্তর দেওয়া
▪২) রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করা বা রোগী দেখতে যাওয়া।
▪৩) মারা গেলে জানাযার অনুগমন করা।
▪৪) দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা।
▪৫) হাঁচির জবাব দেয়া।
(বুখারী ও মুসলিম-আবু হুরায় রা. হতে বর্ণিত)
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « حَقُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلاَمِ، وَعِيَادَةُ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ العَاطِسِ ». متفقٌ عَلَيْه
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, উপরোক্ত পাঁচটির সাথে আরেকটি তা হল: পরামর্শ চাইলে সু পরামর্শ দেওয়া।
এগুলো অপরিহার্য পালনীয় অধিকার। এগুলো পালন না করলে গুনাহগার হতে হবে।
এর পাশাপাশি আরও এমন কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, সেগুলো অবশ্য পালনীয় না হলেও অত্যন্ত সওয়াবের কাজ এবং মুসলিম হিসেবে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার দাবি।
যেমন:
● অভাব-অনটন ও বিপদ-আপদে যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করা।
● সমস্যা ও সংকটে পাশে থাকা।
● খোঁজ-খবর নেওয়া।
● একে অপরের সুখে-দুখে কাছে থাকা।
● কল্যাণ কামনা করা।
● দোয়া করা।
● দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা।
● কোন বিষয় না জানলে শিক্ষা দেওয়া।
● ভুল করলে সংশোধন করা
● দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা ইত্যাদি।
এই বিষয়গুলো মুসলিম হিসেবে একে অপরের প্রতি ঈমানই দায়িত্ব। আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হলে সে ক্ষেত্রে এই দাবিটি আরো জোরালো হয়।
তাই ভাই-বোন বা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আরো বেশি সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
যাহোক, কোন ভাই যদি তার আপন ভাইকে তার বিপদ মুহূর্তে সামর্থ্য থাকার পরেও সাহায্য-সহযোগিতা না করে বা দরিদ্র অবস্থায় তাকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না দেয় তাহলে এর জন্য গুনাহগার না হলেও নিঃসন্দেহে বিশাল সোয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। এই ক্ষেত্রে গুনাহগার না হওয়ার কারণ হল, ভাইয়ের ভরণপোষণ ও দায়-দায়িত্ব পালন অপর ভাইয়ের জন্য ফরজ নয়।
সে কারণে উক্ত ভাইয়ের নামাজ, রোজা, হজ, উমরা, দান-সদকা বা অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী কবুল হবে না- এমনটি বলার সুযোগ নেই। তবে সে বিশাল সোয়াব থেকে বঞ্চিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার তৌফিক দান করুন।
আল্লাহু আলাম
◆◆◆◆◆❖❖❖◆◆◆◆◆◆
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।