তুবা এক সুবিশাল জান্নাতি বৃক্ষ

প্রশ্ন: তুবা কি? ইউটিউব ভিডিওতে একটি গজল শুনলাম। সেখানে বলা হচ্ছে, “তুবা নামক গাছের পাতায় লেখা আছে মানুষের হায়াত।” এই কথাটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর:
“তুবা নামের গাছের পাতায় লেখা আছে মানুষের হায়াত।” এটা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
আমাদের জানা থাকা দরকার যে, সৃষ্টি জগতের আদি থেকে অন্ত যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে আর ঘটবে সব কিছু লেখা আছে মহান আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত ফলক লাওহে মাহফুজে; অন্য কোথাও নয়। মানুষের জীবন-মৃত্যু, জীবিকা, বিবাহ, ভালো-মন্দ কোন কিছুই এর বাইরে নয়। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُّبِينٍ
“আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু ‘স্পষ্ট কিতাবে’ সংরক্ষিত রেখেছি।” (সূরা ইয়াসিন: ১২)

ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন: স্পষ্ট কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল, লাওহে মাহফুজ (সংরক্ষিত ফলক)।
তিনি আরও বলেন:
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّـهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۗ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَابٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّـهِ يَسِيرٌ
“তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমণ্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।” (সূরা হজ্জ: ৭০) ইবনে

আবু মুহাম্মদ আব্দুল হক আতিয়া রহ. (গ্রানাডা) বলেন: এখানে ‘কিতাব’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, লাওহে মাহফুজ (সংরক্ষিত ফলক)-যেমনটি বলেছেন ত্ববারী রহ.। এ ছাড়াও এ প্রসঙ্গে একাধিক আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।

❑ তুবা কি এবং তা কাদের জন্য?

আল্লাহ তাআলা বলেন:
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ
“যারা (আল্লাহর ওপর) বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে ‘তুবা’ (জান্নাতের বৃক্ষবিশেষ)। আর শুভ পরিণাম তাদেরই।” (সুরা : রাদ: ২৯)

তুবার ব্যাখ্যা:

উক্ত আয়াতে তুবা দ্বারা কী উদ্দেশ্য এ মর্মে হাদিস, সাহাবী ও তাবেঈদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

● উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আবু তালহা (রহ.) ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন فرح وقرة عين ‘তুবা’ অর্থ “আনন্দ ও চোখের শীতলতা।”
● ইবরাহীম নাখঈ বলেন: তুবা অর্থ: خير لهم “তাদের জন্য কল্যাণ।”
● সুদ্দী ইকরিমা থেকে বর্ণনা করেন: তুবা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জান্নাত।
● ইবনে জারির ত্বাবারী শাহর ইবনে হাওশাব থেকে বর্ণনা করেন: طوبى شجرة في الجنة “তুবা হল, জান্নাতের একটি বৃক্ষ।”
● আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
طوبى : شجرة في الجنة مسيرة مائة سنة ، ثياب أهل الجنة تخرج من أكمامها
“তুবা হল বেহেশতের একটি গাছ। ১০০ বছরের পথ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। এই গাছের পাপড়ি থেকেই বেহেশত বাসীদের পোশাক তৈরি হবে।” (সহিহ ইবনে হিব্বান, হা/৭৪১৩, সহিহুল জামে-আলবানী হা/৩৯১৮)
[তাফসিরে ইবনে কাসির থেকে নেয়া]

❑ আরও যারা তুবা’র অধিকারী হবেন:

◐ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
طوبَى لِمَن وُجِدَ في صَحيفَتِه استِغفارًا كثيرًا
“তুবা (জান্নাতের তুবা নামক বৃক্ষ) ঐ ব্যক্তির জন্য যার আমলনামায় প্রচুর পরিমাণ ইস্তিগফার পাওয়া গেছে।” (সহিহ ইবনে মাজাহ হা/৩০৯৩)

◐ তিনি আরও বলেন:
طوبى لِمَنْ هُدِيَ لِلإِسْلامَ وكان عَيْشُهُ كَفَافًا ، وقَنَعَ
“তুবা (জান্নাতের তুবা নামক বৃক্ষ) ঐ ব্যক্তির জন্য যে ইসলামের পথের সন্ধান প্রাপ্ত হয়েছে, যার নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে জীবিকার ব্যবস্থা আছে (কমও নয়; বেশিও নয়) এবং তাতে সে পরিতুষ্ট।” (সুনানে তিরমিযী, হা/২৩৪৯ সহিহ হাসান)
কোন কোন বৈশিষ্টের মানুষ তুবা’র অধিকারী হবে তাদের প্রসঙ্গে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৎকর্ম করার মাধ্যমে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং তার নিয়ামতের ফল্গুধারায় আমাদের জীবনকে সিক্ত করুন। আমীন।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।