তাবলিগ জামাতকে না বলার ১২টি কারণ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسول الله -أما بعد:
নিম্নে তাবলিগ জামাতকে ‘না’ বলার বা প্রত্যাখ্যান করার অসংখ্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও গুরুতর ১২টি কারণ উল্লেখ করা হল:

◈ ১. তাবলিগ জামাতের অবস্থা হল, ঘরের ফাউন্ডেশন মজবুত ভাবে তৈরি না করে ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকার মত বা ভেঙ্গে পড়া ঘরকে মজবুত ভিত্তির উপরে নির্মাণ করার পরিবর্তে কোনমতে ঠেকা দিয়ে রাখার মত কিংবা যে গাছের শেকড়ে ঘুণ ধরেছে তার মূল সমস্যা বাদ দিয়ে গাছের আগায় পানি ঢালার মত। কেননা মানুষের আকিদা সংশোধন, শিরক, বিদআত, ইসলামবিরোধী নানা মতবাদ, ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার থেকে এদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লম্বা দাড়ি রাখা, মাথায় পাগড়ি পরা, লম্বা জুব্বা পরা, বোরকা পরা, মিসওয়াক করা, চিল্লায় বের হওয়া ইত্যাদি।

◈ ২. চতুর্দিকে শিরকের জমজমাট আসর, মানুষ কবর পূজায় লিপ্ত ও বিভিন্ন বাতিল দল ও ফিরকায় দিশেহারা। কিন্তু এসব ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নেই। কেননা এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে!

◈ ৩. মানুষ বিদআত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি ‘হাজার বছরের ঐক্য’ নষ্ট হবে এবং মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া সৃষ্টি হবে।

◈ ৪. এই জামাতের ভিত্তি জাহালত বা মূর্খতার উপরে প্রতিষ্ঠিত। ফলে মানুষকে দীনী ইলম বা ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানান্বেষণের দিকে উৎসাহিত করার চেয়ে তাদের কথিত ‘চিল্লা’য় বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করাই তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। ফলশ্রুতিতে মূর্খরা মাথায় পাগড়ি বেঁধে ফাজায়েলের কিতাব নিয়ে জনগণের সামনে ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে যায়।তারপর স্বভাবতই ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা ও ভুলভাল ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে।
অনুরূপভাবে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ মহিলারাও পাড়ায়-মহল্লায় দ্বীন সম্পর্কে সাধারণ মহিলাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ও বিদআতি কথাবার্তা প্রচারে নিয়োজিত রয়েছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে কথা বলা এবং আমল করার পূর্বে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা ফরজ।

◈ ৫. দীনী ইলম অর্জনে অনীহা ও গুরুত্ব হীনতা:

যার কারণে আপনি দেখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাবলিগের একজন মুরুব্বি যে, ১০-১৫ বা ২০ বছর ধরে তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত তাকে যদি ইসলামের প্রাথমিক এবং মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তার উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। যেমন:
– ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?
– ইসলাম এবং ঈমানের রোকন কয়টি ও কী কী?
– দীনের স্তর কয়টি ও কী কী?
– ইবাদত কাকে বলে?
– ইবাদতের রোকন কয়টি ও কী কী?
– ইবাদত কবুলের শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
– ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো কী কী?
– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সঠিক অর্থ এবং এর শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
– এছাড়াও শিরক, কুফর, নিফাক, উসিলা, শাফাআত ইত্যাদি। বিষয়টি আপনারা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

◈ ৬. উদ্ভট কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল-জইফ হাদিস বর্ণনা:
এই মূর্খদের ওয়াজ বা বয়ানের মূল ভিত্তি হলো, বুজুর্গদের বুজুর্গির বর্ণনা, উদ্ভট স্বপ্ন, কিচ্ছা-কাহিনী, জাল-জইফ হাদিসের বয়ান এবং ভিত্তিহীন ফজিলতের ফুলঝুরি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনার পরিণতি জাহান্নাম।

◈ ৭. সংস্কার ও সংশোধনে অনীহা:

তাবলিগ জামাতের প্রধান সিলেবাস ফাজায়েল নামক কিতাবগুলো অসংখ্য ভ্রান্ত কথাবার্তা, জাল-জইফ হাদিস এবং ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে পরিপূর্ণ। এসব কিতাবের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় শত শত গ্রন্থ রচিত হলেও তারা মোটেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না‌। বরং তারা উল্টো সংস্কার প্রত্যাশীদেরকে গালাগালি, নানা অপবাদ ও তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করে ছলে-বলে-কৌশলে ভুলগুলোকেই সঠিক প্রমাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত!

◈ ৮. দলাদলি, কোন্দল ও রক্তপাত:

এই জামাতটি বর্তমানে দুই ভাগে (জুবায়ের পন্থী ও সাদ পন্থী) বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে চরম কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। মসজিদ ভাগাভাগি, মসজিদে মারামারি, এক মসজিদে দু গ্রুপের আলাদা আলাদা জামাত, একই ময়দানে আলাদা আলাদা ইজতিমা। এমনকি একদল আরেক দলকে কাফের বা ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল বলেও আখ্যায়িত করছে। সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে দুই গ্রুপের লোমহর্ষক রক্তাক্ত মারামারি জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।

◈ ৯. এদের মাধ্যমে কিছু মানুষ দাড়ি ছেড়েছে, মাথায় টুপি পরেছে, মহিলারা বোরকা পরেছে, নামাজি হয়েছে, নানা পাপকর্ম থেকে ফিরে এসেছে তা ঠিক। কিন্তু শিরক যুক্ত ঈমান এবং বিদআত যুক্ত আমল আল্লাহর কাছে কোনই কাজে লাগবে না সে ব্যাপারে তারা নিতান্তই বেখবর। তাই তো আল্লাহ বলেছেন,
قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُم بِٱلۡأَخۡسَرِینَ أَعۡمَـٰلًا
ٱلَّذِینَ ضَلَّ سَعۡیُهُمۡ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَا وَهُمۡ یَحۡسَبُونَ أَنَّهُمۡ یُحۡسِنُونَ صُنۡعًا
“(হে নবী আপনি বলুন), আমি কি তোমাদেরকে সেসব মানুষের ব্যাপারে বলবো যারা আমলের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারা হল, সে সব লোক, যাদের কর্ম প্রচেষ্টা দুনিয়ার জীবনেই বাতিল যায় অথচ তারা মনে করে যে, তারা ভালো কাজ করেছে!” [সূরা কাহফ: ১০৩ ও ১০৪]

◈ ১০. এই জামাতটি নিজেদের টাকায় দাওয়াতি কাজ করে বলে গর্ব করে। কিন্তু তারা নিজেদের টাকায় মূলত: বিদআত প্রচারে লিপ্ত। নিজে বিদআত করার চেয়ে বিদআত প্রচারের ভয়াবহতা বেশি। কারণ এর দ্বারা যত মানুষ বিদআতি কাজ করবে তাদের প্রত্যেকের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে।

◈ ১১. কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা:

তাবলিগ জামাত জি/হাদের আয়াতগুলোকে তাদের কথিত চিল্লা ও গাশতের পক্ষে ব্যবহার করে, ‘চিল্লা’র জন্য নির্ধারিত ৩ দিন, ৪০ দিন (এক চিল্লা), ১২০ দিন (তিন চিল্লা) বা ১ সাল ইত্যাদির পক্ষে কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এগুলোকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা, টঙ্গীর মাঠে এক ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত ৪৯ কোটি গুণ সওয়াবের বর্ণনা, তিন বার টঙ্গীর ইজতিমায় শরিক হলে এক হজের সমপরিমাণ সওয়াব বা এটিকে ‘গরিবের হজ’ বলা। (সাধারণ কিছু মূর্খ এমন কথা বললেও তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র থেকে এর প্রতিবাদ বা সংশোধনী মূলক বক্তব্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না)।
টঙ্গী ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ হল, আখেরি মুনাজাত। মানুষ এখন ফরজ সালাত আদায়ের চাইতে আখেরি মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। আখেরি মুনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য নামাজি, বেনামাজি, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদআতি, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি মানুষ দলে দলে টঙ্গীর ময়দানের দিকে ছুটতে থাকে। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ বাসের হ্যান্ডেল ধরে, নৌকায় বসে, পিকআপ প্রভৃতির মাধ্যমে ইজতিমায় যোগদান করে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আঁচল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি এই মুনাজাত সম্প্রচারিত হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমিন আমিন বলতে থাকে। সে দিন ঢাকা শহরে অফিস-আদালতে অঘোষিত ছুটি পালিত হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, এই আখেরি মুনাজাতে অংশ গ্রহণ করতে পারলে জীবনের সব গুনাহ মোচন হয়ে যায়। অথচ এভাবে নিয়ম করে সম্মিলিত মুনাজাত করাই বিদআত (দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত কাজ)। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

◈ ১২. উম্মতের শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক সালাফি আলেমগণ (যেমন: শাইখ বিন বায, শাইখ উমাইমিন, শাইখ আলবানি, শাইখ সালেহ আল ফাওযান প্রমুখ) তাবলিগ জামাতের সাথে বের হওয়া, তাদের বই পড়া এবং তাদের ইজতিমায় শরিক হওয়াকে হারাম বলেছেন এবং উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

➤ তাবলিগ জামাতের কোথায় কী সমস্যা এবং সেগুলোর খণ্ডন বিষয়ে নিম্নোক্ত বইগুলো পড়া যেতে পারে:

■ ১. শাইখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত তুওয়াইজিরি কর্তৃক রচিত এবং শায়খ মুখলেসুর রহমান বিন মনসুর অনুদিত নিম্নোক্ত গ্রন্থটি:
القول البليغ في التحذير عن جماعه التبليغ
“প্রচলিত তাবলীগ জামাত •সংশয় •সতর্কতা •সমাধান”
বইটি ক্রয় করা যাবে এখান থেকে:
https://ehsan.com.bd/product-details/procholito-tobjeage-jomayet
■ ২. তাবলীগ জামা’ য়াত ও দেওবন্দিগণ
সম্পাদনায়: শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম
বইটি ক্রয় করা যাবে এখান থেকে:
➣ রকমারী: https://www.rokomari.com/book/75374/tableeg-jama-at-o-deobondigon-paperback
➣ অথবা এখান থেকে:
https://www.boibazar.com/book/tableeg-jamaat-o-deobondigon-paperback
■ ৩. ডাউনলোড করুন: (PDF): ইলিয়াসী তাবলীগ ও দীনে ইসলামের তাবলীগ
https://drive.google.com/file/d/1qrLLTQFT_wNZAp6b-pTtllrqyLOTq8hc/view?usp=sharing

▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।