তাওহীদ, শিরক এবং সাধারণভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার জন্য ক্লাস বা কোর্সে অংশ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প উপায় আছে কি?

প্রশ্ন: আমি সম্মান করি আকিদা কোর্সকে। কিন্তু আমি একটা বিষয় জানতে চাই। তা হল, এ যুগে শিরক সম্পর্কে ভালভাবে পুরোপুরি বুঝতে হলে আকীদা কোর্স করতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয় কিংবা আরও বিভিন্ন কিছু করতে হয়। কিন্তু সাহাবীরা তো এমনটি করতেন না। তাহলে কিভাবে এত জলদি আবু-বকর (রা:), বিলাল (রা:), খাদীজা (রা), সুমাইয়া (রা) এবং আরও অনেকে শিরক সম্পর্কে বুঝেছেন? আকীদা কোর্স ছাড়া এবং বিভিন্ন নামে যেমন- তাওহীদ উলুহিয়্যা, তাওহীদ রুবুবিয়্যাহ ইত্যাদি নামে শিখা ছাড়া এমন কি কোন সহজ জ্ঞান আছে যা দ্বারা শিরক সম্পর্কে পুরো জ্ঞানার্জিত হবে? যেন আমার মধ্যে শিরক প্রবেশ না করে এবং আমার পরিবারকেও সতর্ক করতে পারি?

উত্তর:

ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি হল, বিজ্ঞ এবং আল্লাহওয়ালা আলেমদের সংশ্রবে থেকে সরাসরি জ্ঞানার্জন করা।

সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট থেকে সরাসরি জ্ঞানার্জন করেছেন, হাদিস শিখেছেন এবং দ্বীনের বিষয়গুলো জেনে নিয়েছেন। তাদের পরে তাবেঈনগণ সাহাবীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে জ্ঞানার্জন করেছেন। এভাবে যুগে যুগে মুসলিম জাহানে শিক্ষকদের সংস্পর্শে থেকে সরাসরি জ্ঞানার্জনের ধারা অব্যাহত ছিল।

কাল পরিক্রমায় একাডেমিক্যাল সিস্টেমে পরিবর্তন আসে। পড়াশোনার জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান যেমন, স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচী, ক্লাস, সেমিস্টার, পরীক্ষা, সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে আসে। এ ছাড়াও কোচিং, বিষয়ভিত্তিক কোর্স ইত্যাদি নানাভাবে জ্ঞানার্জনের মাধ্যম আবিষ্কৃত হয়। এগুলো সব জ্ঞানচর্চার আধুনিকায়ন-যা পূর্বযুগে বিদ্যমান ছিল না।

যাহোক, উপায়-উপকরণ ও পদ্ধতি যাই হোক না কেন, সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য হল, জ্ঞানার্জন। সুতরাং জ্ঞানার্জনের এ সকল আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করা মোটেই দূষণীয় নয়-যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবী, তাবেঈ ও সালাফদের যুগে এ সবের প্রচলন ছিল না।

অনুরূপভাবে যে কোন জটিল বিষয়কে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজবোধ্য করার জন্য বিজ্ঞ আলেম ও শিক্ষকগণ যারপর নাই চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছেন। তারা একই বিষয়কে একাধিক ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করেছেন যেন শিক্ষার্থীরা সহজে তা বুঝতে পারে। জ্ঞানার্জনের জন্য এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এই একটি উদাহরণ হল, তাওহীদকে তিনভাগে বিভাজন করে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা। অনুরূপভাবে শিরক, কুফর, নেফাক, সুন্নত, বিদআত, তাওয়াসসুল, শাফাআত ইত্যাদি তাওহীদ কেন্দ্রিক বিষয়গুলো। বরং দ্বীনী বা দুনিয়াবী সকল বিষয়ই এই পদ্ধতিতে সাজানো।
সুতরাং আমরা যদি এ ক্লাসিফিকেশনের আলোকে তাওহীদ ও সুন্নাহকে বুঝার চেষ্টা করি তাহলে আশা করা যায়, বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে দলীল ভিত্তিক বুঝতে সক্ষম হবে।

মনে রাখতে হবে, এই সাজানো-গোছানো বিষয়, পয়েন্ট ও পার্ট-পার্ট আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্জন করা কাল-পরিক্রমায় জ্ঞানী ও গবেষকদের বহু প্রচেষ্টা ও অভিজ্ঞতার ফল। সুতরাং আমরা তাদের রেখে যাওয়া পরিশ্রমের ফসল কাজে লাগিয়ে অল্প পরিশ্রমে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারি।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব