জামাআতে সালাতের গুরুত্ব: এ ক্ষেত্রে পিতামাতা যদি ছেলেকে মসজিদে যেতে বাধা দেয় তাহলে করণীয়

প্রশ্ন: পিতা-মাতা ছেলেকে মসজিদে গিয়ে জামাআতে সালাত পড়তে না দিলে কী করা উচিৎ? উল্লেখ্য যে, তাদেরকে ভদ্রভাবে বুঝালেও বুঝবে না।

উত্তর:

বাবা-মা যদি যদি তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করতে নিষেধ করে তাহলে তাদের কথা শুনা তার জন্য আবশ্যক নয়। কারণ মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-পুরুষদেরকে জামাআতে সালাতের আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ﴾
“আর সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং সালাতে রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” (সূরা বাকারা: ৪৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ سمعَ النداءَ فلمْ يُجِبْ مِن غيرِ عذرٍ فلا صلاةَ لَه
“যে ব্যক্তি আজান শুনে তাতে তাতে সাড়া দিলো না তার সালাতই হবে না। তবে যদি ওজর থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।” [সহীহ ইবনু হিব্বান ৫/৪১৫, ৪৫০, সহীহুত তারগীব ১/২৪০]

এ মর্মে কুরআন-হাদিসে আরও অনেক গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বাবা-মা বা অন্য কারো নিষেধাজ্ঞা গ্রহনযোগ্য নয়।

◖প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে সৃষ্টি জগতের কারও আনুগত্য করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق
“স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।” (মুসনাদে আহমদ,সহিহুল জামে, হা/৭৫২০ -ইমরান বিন হুসাইন রা. হতে বর্ণিত)
আরেক হাদিসে এসেছে:
لا طَاعَةَ في مَعْصِيَةٍ، إنَّما الطَّاعَةُ في المَعروفِ
“আল্লাহর অবাধ্যতায় (কারো) আনুগত্য নাই। আনুগত্য তো হবে কেবল ভালো কাজে।” (সহিহুল বুখারী)
সুতরাং বাবা-মা নিষেধ করলেও মসজিদে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা কতর্ব্য।

◖ অবশ্য এর পরও সন্তানের জন্য তাদের সাথে কোনভাবেই খারাপ আচরণ করার সুযোগ নাই। তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ
“পিতা-মাতা যদি তেমকে আমার সাথে শিরক করতে জোর-জবরদস্তি করে, যার জ্ঞান তেমর নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহবস্থান করবে।” (সূরা লোকমান: ১৫)
এর পাশাপাশি তার দায়িত্ব হবে, যথাসাধ্য নম্র ও ভদ্র ভাষায় পিতামাতাকে জামাআতে সালাতের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রেে তাদেরকে জামাআতে সালাত সংক্রান্ত কোন বই পড়তে দিতে পারেন, কোন ভালো আলেমের বক্তৃতার ক্লিপ শুনাতে পারেন অথবা কোন আলেমকে দিয়ে কৌশলে তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলাতে পারেন। তারা যদি বুঝে তবে ভালো। কিন্তু বুঝতে না চাইলে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করার কারণে আখিরাতে সওয়াব পাবেন। আর তারা আপনাকে নিষেধ করার কারণে গুনাহগার হবে। কারণ বাবা-মার দায়িত্ব ছিল, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে মসজিদে যেতে আদেশ করা বা বাধ্য করা। কিন্তু তা না করে উল্টা বাধা দিলে নি:সন্দেহে এতে তাদের কবিরা গুনাহ হবে।

আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পিতামাতাকে সন্তানদের প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য বুঝার তাওফিক দান করুন, বিভ্রান্তদেরকে হেদায়েত করুন এবং অজ্ঞদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।