জাতীয়তাবাদ (Nationalism)​ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

প্রশ্ন: জাতীয়তাবাদ (Nationalism) কী? এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে মানব রচিত বিভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠান জন্য দল গঠন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করার বিধান কি?

উত্তর:

নিম্নে জাতীয়তাবাদের পরিচয়, উত্থান, পতন, প্রকারভেদ, এ সম্পর্কে ইসলামের বিধান, এর ক্ষতিকারক দিক সমূহ, ইসলামে মর্যাদার মাপকাঠি, মানব রচিত বিভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠান জন্য দল গঠন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করার বিধান ইত্যাদি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হল:

❑ জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?

জাতীয়তাবাদ শব্দটি ইংরেজি ন্যাশনালিজম (Nationalism) শব্দের বাংলা পরিভাষা। এটি একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। (উৎস: উইকিপিডিয়া) অন্য কথায়, জাতীয়তাবাদ একটি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারণা যেখানে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়।

❑ জাতীয়তাবাদের উত্থান ও পতনের সময়কাল:

জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা। ১৮ শতকে এর উদ্ভব ঘটে। ম্যাকিয়াভেলি (Machiavelli) কে আধুনিক জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়। একটি অবিভক্ত ইতালি রাষ্ট্রের ধারণা তিনিই প্রথম দেন। তবে ইংরেজরা জাতীয়তাবাদ বা জাতি সত্তার পথিকৃৎ। (source: bcssolutionbd)

১৮ শতক হল, জাতীয়তাবাদের উত্থানের যুগ। কিন্তু মতবাদটি এর অন্তর্নিহিত অর্থের কারণে ১৯১৪ সালের পর থেকে নেতিবাচক রূপ লাভ করে। গ্লেন্ডা স্লুগা বলেন, ২০শ শতাব্দী হল জাতীয়তাবাদের মোহমুক্তি এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের উন্মেষের সময়। [Glenda Sluga, Internationalism in the Age of Nationalism (University of Pennsylvania Press, 2013) ch 1]

❑ জাতীয়তাবাদ এর প্রকারভেদ:

জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন:
● ভাষাগত জাতীয়তাবাদ। যেমন: বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, আরব জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি।
● ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ। যেমন: বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ..ইত্যাদি।
● বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদ। যেমন: কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ।
● লিঙ্গ ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। যেমন: নারীবাদী-পুরুষবাদী জাতীয়তাবাদ।
● নৃতাত্ত্বিক বা গোষ্ঠী ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ (যেমন: কুর্দি জাতীয়তাবাদ) ইত্যাদি।

❑ ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়তাবাদ:

জাতীয়তাবাদ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, শরিয়া বিরোধী ও সম্পূর্ণ হারাম মতবাদ। কেননা, মহান আল্লাহ মানবজাতির জন্য একমাত্র জীবনাদর্শ হিসেবে ইসলাম দান করেছেন। এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চূড়ান্ত জীবন ব্যবস্থা। কারণ তা সরাসরি মহান সৃষ্টকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল কৃত।
সুতরাং ইসলাম ছাড়া যত মতবাদ, মতাদর্শ, আইডোলজি এবং থিয়োলজির আবির্ভাব হবে সবই বাতিল, অগ্রহণযোগ্য ও জাহেলিয়াত হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমন: ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, কম্যুনিজম বা সমাজতন্ত্র ইত্যাদি। কোন মুসলিমের জন্য এ সকল মতবাদে বিশ্বাস রাখা জায়েজ নাই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু (ধর্ম/মতাদর্শ) অনুসন্ধান করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।” (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)

❑ জাতীয়তাবাদ ইসলাম বিরোধী মতবাদ ও মানব সভ্যতার জন্য ধ্বংসাত্মক:

নিম্নে জাতীয়তাবাদ কেন ইসলাম বিরোধী মতবাদ এবং মানব সভ্যতার জন্য ধ্বংসাত্মক সে সম্পর্কে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হল:

❖ ১) জাতীয়তাবাদী ইসলামের বিপরীতে মানব রচিত একটি কুফরি মতবাদ:

জাতীয়তাবাদ ইসলামের বিপরীতে মানব রচিত একটি কুফরি মতবাদ। এটিকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস রাখা ইসলামের ভিত্তিমূল থেকে সরে যাওয়ার নামান্তর। কেননা এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ইসলামের বড় বড় মূলনীতির গায়ে কুঠারাঘাত করা হয়। যেমন: “আলহুব্বু ফিল্লাহ ওয়াল বুগযু ফিল্লাহ” আল্লাহর জন্য ভালবাসা; আল্লাহর জন্যই শত্রুতা পোষণ করা, নেকি ও আল্লাহ ভীতির কাজে পরস্পরকে সাহায্য করা এবং গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনে কাজে সাহায্য না করা এবং ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ তথা আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্যই সম্পর্কচ্ছেদ ইত্যাদি। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশের একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, নাস্তিক ইত্যাদি অমুসলিম ভিনদেশী একজন মুসলিমের থেকে প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আল্লাহর বন্ধুর চেয়ে আল্লাহর দুশমন বেশি অগ্রাধিকার পায় এবং আরও কী কী সমস্যা হয় নিচের পয়েন্টগুলো প্রণিধানযোগ্য।

❖ ২) জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ জাতিতে জন্মবলে দম্ভ করতে শেখায় এবং এক ভূখণ্ডের মানুষ আরেক ভূখণ্ডের মানুষের প্রতি, এক ভাষার মানুষ অন্য ভাষার মানুষের প্রতি, এক বর্ণের মানুষ অন্য বর্ণের মানুষের প্রতি মনে হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণার জন্ম দেয়। যেমন:
এক ব্যক্তি এশিয়ার অধিবাসী বলে ইউরোপ বা আমেরিকা বাসীদের নিকট ঘৃণিত, অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত ও অধিকার বঞ্চিত হতে একান্তভাবে বাধ্য। এক ব্যক্তি শুধু কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াই শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির দৃষ্টিতে তার ঘৃণিত হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। সাদা-কালোর প্রভেদের মূলে এই জাত্যভিমান, জাতীয়তার দম্ভ। নিগ্রোদেরকে জীবন্ত দগ্ধীভূত করা আমেরিকার সভ্য নাগরিকদের পক্ষে কিছুমাত্র অপরাধের কাজ নয়। কারণ তারা নিগ্রো। জার্মান জাতি এবং ফরাসি জাতি পরস্পরকে ঘৃণা করতে পারে। কারণ, তারা দুটো স্বতন্ত্র জাতিতে বিভক্ত।

❖ ৩) উগ্র জাতীয়তাবাদ বিশ্বে বার বার যুদ্ধ বাঁধিয়েছে। যেমন: প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদের উত্থান একটি। ১৯ শতকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সার্বিয়া, পোল্যান্ডে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি অন্যতম কারণ হল জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ইহুদী জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্ব।

বলা হয়, জাতীয়তাবাদের মুশকিল হল, জাতির একটা ‘শত্রু’ দরকার— একটা অপর, যার বিরুদ্ধতার মাধ্যমেই জাতির একাত্মতা তৈরি হয়!

❖ ৪) জাতীয়তাবাদ ভৌগোলিক সীমারেখাকে সীমিত করে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মিশ্রণ রোধ করে দেয়। ও অন্যদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদের সৃষ্টি হয়।

❖ ৫) জাতীয়তাবাদীরা নিজেদের সব কিছুকে বড় করে দেখে, অপরের সব কিছুকে ছোট করে দেখে। আমাদের দু শ বছরের প্রভুরা নীলচাষীদের পেটে লাথি মেরে হত্যাকে বৈধ ভাবত। কারণ, নীলচাষীরা ‘নিচু জাতি’, আর ব্রিটিশরা ‘উঁচু জাতি’। পাকিস্তান আমলে পাঞ্জাবীরা বাঙালিদের থেকে নিজেদের অধিক সভ্য ও উন্নত জাত মনে করত।
❖ ৬) জাতিভুক্ত নয় কিন্তু একই দেশে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদেরকে সংখ্যালঘু বিবেচনা করে তাদেরকে হেয় করে দেখা হয়। যেমন: মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, সিরিয়া ও তুরস্কের কুর্দি।
❖ ৭) ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
❖ ৮) বিকৃত জাতীয়তাবাদ থেকে সৃষ্টি হয় সাম্রাজ্যবাদের। যেমনটি দেখা গিয়েছিল হিটলারের মাঝে।

অবশ্য জাতীয়তাবাদীরা এর স্বপক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরে কিন্তু প্রকৃত বিচারে সে সবের তুলনায় এর ক্ষতি ও ধ্বংসাত্মক দিকগুলো অনেক বেশি।

❑ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি একমাত্র তাকওয়া; আর বংশ, গোত্র ইত্যাদি কেবল পরিচিতির মাধ্যম:

বিশ্বব্যাপী ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং পারস্পারিক -সাহায্য-সহযোগিতা হবে কেবল মাত্র ইসলাম, ইমান, সৎকর্ম ও তাকওয়াকে কেন্দ্র করে। এর বাইরে সব মানদণ্ড পরিত্যাজ্য। মুখের ভাষা, দৈহিক গড়ন ও বর্ণ, লিঙ্গ, বংশ, অঞ্চল, দেশ, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি কখনো সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
“হে মানবগোষ্ঠি, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন (আল্লাহভীরু)। [সুরা হুজুরাত: ১৩]

❑ ইসলাম দৈহিক গঠন ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাষা, ভূখণ্ড, বংশ-গোত্র ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জাতীয়তাবাদী চেতনার বুকে কুঠারাঘাত করেছে:

◍ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فَلَيْسَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ فَضْلٌ، وَلا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ فَضْلٌ، وَلا لأَسْوَدَ عَلَى أَبْيَضٍ وَلا لأَبْيَضَ عَلَى أَسْوَدَ فَضْلٌ إِلا بِالتَّقْوَى.
“একমাত্র তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ছাড়া অনারবীর উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আরবের উপর অনারবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্বেতাঙ্গের উপর কৃষ্ণাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই আবার কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই।” (মুসনাদে আহমদ, ত্ববারানী…সহীহ)

◍ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আরও সাল্লাম বলেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَادِكُمْ، وَلاَ إِلَى صُوَرِكُمْ، وَلكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ ও আকার-আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

◍ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আব্বাস রা., তার মেয়ে ফাতিমা রা. তাঁর বংশ বনু হাশিম এর লোকদেরকে ডেকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আখিরাতে বংশীয় মর্যাদা কোন কাজে লাগবে না বরং প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী বিচার করা হবে।

◍ বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের শ্রেষ্ঠ কুরাইশ বংশের নেতৃত্ব পর্যায়ের সাহাবী, বিভিন্ন গোত্রের সম্ভ্রান্ত ও সম্পদশালী ব্যক্তি-বর্গকে বাদ দিয়ে একজন আজাদ কৃত কালো গোলাম বিলাল হাবাশী রা.,কে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন নিয়োগ দিয়েছিলেন-যিনি ইসলামের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ঘর কাবা শরিফ এর ছাদে উঠে আজান দিয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছেন।

তিনি আরেক কালো গোলাম যায়েদ বিন হারেসা রা. কে পালকপুত্র হিসেবে বরণ করার মাধ্যমে সাদা-কালো বর্ণবাদী মনোভাবের সমূলে কুঠারাঘাত করেছেন।

❑ ইসলামি আদর্শের বাইরে মানব রচিত বিভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠান জন্য দল গঠন ও আন্দোলন-সংগ্রাম করার বিধান:

ইসলামি আদর্শের বাইরে মানুষের তৈরি করা নানা মতাদর্শ অনুযায়ী বিভাজন সৃষ্টি, দল গঠন এবং সে সকল মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম-সাধনা করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা ইসলাম আগমনের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হল, বিশ্বমানবতাকে একমাত্র আল্লাহর রশি ধারণ করত: সর্ব প্রকার বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা, কোন্দল ও যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে রক্ষা করে ভালবাসা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত জাতিতে রূপান্তরিত করা। যেমন:

◍ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)

◍ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
“তিনিই তোমাকে শক্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুসলমানদের মাধ্যমে। আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সেসব কিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু জমিনের বুকে রয়েছে, তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।” (সূরা আনফাল: ৬২ ও ৬৩)

◍ তিনি আরও বলেন,
وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।” (সূরা রূম: ৩২)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, “ইসলাম এবং কুরআনের আহ্বানের বাইরে সকল বংশীয়, দেশ, জাতি, মাজহাব ও তরিকার আহ্বান জাহিলিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। একবার এক মুহাজির এবং এক আনসার সাহাবি বিবাদে লিপ্ত হলে মুহাজির ডাক দিয়ে বললেন, হে মুহাজিররা, তোমরা কে কোথায় আছো, জলদি ছুটে আসো-সাহায্য করো।” তখন আনসারি সাহাবীও ডেকে বললেন, হে আনসাররা, তোমাদের কে কোথায় আছো, জলদি ছুটে আসো-সাহায্য করো” তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “জাহিলিয়াতের আহ্বান! অথচ আমি এখনো তোমাদের মাঝে বিদ্যমান আছি।” এতে তিনি প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন “

পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে একমাত্র ইসলামী জীবন আদর্শকে আমাদের ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষানীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লালন এবং বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন এবং সব ধরণের ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা, মানব রচিত মতবাদ ও মতাদর্শ থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহুম্মা আমীন।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।