জমজমের পানি কি বিক্রি করা জায়েজ

প্রশ্ন: আমি এক ব্যক্তির কাছে শুনেছি যে, জমজমের পানি বিক্রি করা জায়েজ নয়, এটা কি সঠিক? একজন ব্যক্তি কি হারাম থেকে জমজমের পানি এনে নিজ দেশে বা অন্য দেশে বিক্রি করতে পারবে? এর প্রমাণ কী?
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, দরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতপর জমজমের পানি বিক্রির বিধান: মূলনীতি হলো, পানি যতক্ষণ তার উৎস বা প্রবাহে থাকে ততক্ষণ তা বিক্রি করা জায়েজ নয়। কিন্তু যখন কেউ কোনো পাত্রে পানি সংগ্রহ করে নেয় তখন তা বিক্রি করা জায়েজ। এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই।
◯ ইবনে কুদামা (রহ.) তাঁর “আল-মুগনি” (৪/২১৫) গ্রন্থে বলেছেন:
وأما ما يحوزه من الماء في إنائه فإنه يملكه بذلك وله بيعه بلا خلاف بين أهل العلم … وعلى ذلك مضت العادة في الأمصار ببيع الماء في الروايا من غير نكير ، وليس لأحد أن يشرب منه ولا يتوضأ ولا يأخذ إلا بإذن مالكه ، وكذلك لو وقف على بئره أو بئر مباح فاستقى بدلوه أو بدولاب أو نحوه فما يرقيه من الماء فهو ملكه وله بيعه لأنه ملكه بأخذه في إنائه . قال أحمد : إنما نهى عن بيع فضل ماء البئر والعيون في قراره ، ويجوز بيع البئر نفسها والعين ومشتريها أحق بمائها ” انتهى باختصار
“কেউ যখন কোনো পাত্রে পানি সংগ্রহ করে, তখন সে সেটার মালিক হয়ে যায় এবং তা বিক্রি করা তার জন্য জায়েজ। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই… শহরের বিভিন্ন স্থানে মশকে করে পানি বিক্রির রেওয়াজ বহু আগে থেকেই চলে আসছে। কেউ এতে আপত্তি জানায়নি। কাউকে তার মালিকের অনুমতি ছাড়া সে পানি পান করতে, ওজু করতে বা নিতে নিষেধ করা হয় না।
অনুরূপভাবে, যদি কেউ তার কূপ বা সাধারণ কোনো কূপ থেকে বালতি বা চাকা (কূপ থেকে পানি তোলার জন্য ব্যবহৃত ঘূর্ণায়মান যন্ত্র) এর মাধ্যমে পানি তোলে, তবে যে পানি সে উপরে তোলে, তা তার মালিকানাধীন এবং সে তা বিক্রি করতে পারবে। কারণ সে তা তার পাত্রে নিয়ে মালিকানা লাভ করেছে। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেছেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল কূপ ও ঝরনার বাড়তি পানি তার উৎসস্থলে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর মূল কূপ ও ঝরনা বিক্রি করা জায়েজ এবং যে তা ক্রয় করবে তার পানির উপর সেই বেশি অধিকার রাখে।'”
◯ আল্লামা সালেহ আল ফাওজান (হাফি.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “পানি বিক্রি করা কি জায়েজ? কখন?”
তিনি উত্তর দিয়েছেন:
في ذلك تفصيل : إذا كان حاز الماء في وعائه أو بركته فإنه يملكه ويجوز له أن يبيعه ؛ لأنه حازه واستولى عليه وتعب في تحصيله ، فصار ملكًا له .
أما إذا كان الماء باقيًا في البئر أو في النهر أو في المجرى الذي يجري في ملكه فهذا فيه خلاف بين أهل العلم ، والصحيح أنه لا يجوز له بيعه ، بل يكون هو أولى بالانتفاع به من غيره ، وليس له أن يمنع الآخرين من الانتفاع به انتفاعًا لا يضره هو ولا يضر في ملكه ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن بيع فضل الماء ” انتهى
“এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে: যদি কেউ পানি তার পাত্রে বা পুকুরে সংরক্ষণ করে তবে সে সেটার মালিক হয় এবং তা বিক্রি করা তার জন্য জায়েজ। কারণ সে তা সংগ্রহ করে তার দখলে এনেছে এবং তা সংগ্রহে পরিশ্রম করেছে। ফলে তা তার সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।
তবে যদি পানি কূপ, নদী বা তার মালিকানাধীন কোনো স্থানে প্রবাহিত অবস্থায় থাকে তবে এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হলো, তা বিক্রি করা তার জন্য জায়েজ নয় বরং নিজের ব্যবহারের জন্য তার অগ্রাধিকার থাকবে। তবে সে অন্যকে এমনভাবে উপকৃত হতে বাধা দিতে পারবে না যা তার বা তার সম্পত্তির ক্ষতি করে না; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়তি পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।” [আল মুনতাকা ৩/১৩] জমজমের পানি ও অন্যান্য পানির ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য।
◯ শাইখ ইবনে বায (রহ.) বলেছেন:
” لا حرج في بيع ماء زمزم ، ولا في نقله من مكة “
“জমজমের পানি বিক্রি করা বা মক্কা থেকে তা বহন করে নিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা নেই।” [মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে বায। ১৬/১৩৮]
সুতরাং যদি কেউ মক্কার হারাম থেকে জমজমের পানি সংগ্রহ করে নিজের দেশে বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে যায় তবে তা বিক্রি করা জায়েজ। আল্লাহু আলাম। আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।
উৎস: islamqa
অনুবাদক: আব্দু্ল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
Share: