ঘুমের সুন্নত সমূহ

প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমের সুন্নত বা পদ্ধতি কী ছিল তা বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুল, তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের উপর। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমের মৌখিক এবং কর্মগত সুন্নাহ নিম্নরূপ:
❖ ১. তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং রাতের শেষ তৃতীয়াংশে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো প্রয়োজন না থাকলে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পছন্দ করতেন এবং রাতের শেষ তৃতীয়াংশে জেগে নামাজ পড়তেন। বুখারিতে আবু বারযার বরাতে বর্ণিত হয়েছে,
كان يكره النوم قبل العشاء والحديث بعدها
“তিনি (রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশার নামাজের আগে ঘুমানো এবং এর পরে কথাবার্তা বলতে অপছন্দ করতেন।”
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
أحب الصلاة إلى الله صلاة داود عليه السلام، وأحب الصيام إلى الله صيام داود، وكان ينام نصف الليل ويقوم ثلثه وينام سدسه، ويصوم يوما ويفطر يوما
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় (নফল) নামাজ হল, দাউদ আলাইহিস সালামের নামাজ এবং সবচেয়ে প্রিয় (নফল) রোজা হল, দাউদের রোজা। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ রাত নামাজ পড়তেন এবং বাকি এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন এবং একদিন রোজা রাখতেন ও একদিন রাখতেন না। এছাড়া সহিহ বুখারি ও মুসলিমে উল্লেখ আছে, একজন লোক সম্পর্কে যিনি সারা রাত ঘুমিয়ে সকাল করে ফেলেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে বলেছেন:
ذاك رجل بال الشيطان في أذنيه أو قال في أذنه
“সে হলো এমন ব্যক্তি যার কানে শয়তান প্রস্রাব করেছে।” (তিনি দুই কান কিংবা এক কানের কথা বলেছেন)।
❖ ২. ঘুমানোর আগে ওজু করা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে নামাজের মতো ওজু করতেন।
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত: আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إذا أتيت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة…
“যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের জন্য যেভাবে ওজু করো সেভাবে ওজু করো…।”
❖ ৩. বিছানা পরিষ্কার করা: আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে পরিষ্কার করতেন। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إذا أوى أحدكم إلى فراشه فلينفض فراشه بداخلة إزاره فإنه لا يدري ما خلفه عليه
“যখন তোমাদের কেউ বিছানায় যায়, সে যেন তার কাপড়ের ভেতরের অংশ দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না, তার পরে (তার অনুপস্থিতিতে) বিছানায় কী রয়েছে।”
❖ ৪. ডান পাশে কাত হয়ে শোয়া: তিনি ডান পাশে কাত হয়ে শুয়ে ঘুমাতেন। বারা বিন আযিবকে বলেছেন:
إذا أتيت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة ثم اضطجع على شقك الأيمن…
“যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের জন্য ওজূ করো, তারপর ডান পাশে ভর করে শুয়ে পড়ো…।”
❖ ৫. ঘুমের আগে দোয়া ও জিকির পড়া: ঘুমের আগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন দোয়া ও জিকির পড়তেন। এর মধ্যে রয়েছে:
✿ ক. উভয় হাত একত্র করে তাতে ফুঁ দিয়ে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়া, তারপর মুখ ও শরীরের যতটুকু সম্ভব তাতে হাত বুলানো। [বুখারি]
✿ খ. আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা-এর ২৫৫ নম্বর আয়াত) পড়া। [বুখারি]
✿ গ. এই দোয়াটি পাঠ করা:
اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা ক্বিনী ‘আযাবাকা ইয়াওমা তাব‘আসু ‘ইবাদাক।
অর্থ: “হে আল্লাহ, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান করবে, সেদিন আমাকে তোমার শাস্তি থেকে রক্ষা করো।” [আবু দাউদ, ইবনে হাজার হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
✿ ঘ. এই দোয়াটি পাঠ করা:
الْـحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَآوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهُ وَلَا مُؤْوِيَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত‘আমানাআ ওয়া সাক্বানা ওয়া কাফানাআ ওয়া আ-ওয়ানাআ, ফা কাম মিম্মান লা কাফিয়া লাহু ওয়ালা মু’উইয়া।
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের খাওয়ালেন, পান করালেন, আমাদের জন্য যথেষ্ট করলেন এবং আমাদের আশ্রয় দিলেন। কত মানুষ আছে, যাদের জন্য কেউ যথেষ্ট নয় এবং কোনো আশ্রয় নেই।” [মুসলিম]
✿ ঙ. এই দোয়াটি পাঠ করা:
بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ: বিসমিকা আল্ল-হুম্মা আমূতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ: “হে আল্লাহ, তোমার নামে আমি মরি (ঘুমাই) এবং জীবিত হই (ঘুম থেকে জাগ্রত হই)।” [বুখারী]
❖ ৬. শেষে বারা বিন আযিব রা. কে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা: আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা বিন আযেব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে, নামাজের জন্য ওজু করো, তারপর ডান পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ো। তারপর বলো:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، اللَّهُمَّ آمَنتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা ইন্নি আসলামতু ওয়াজহী ইলাইক, ওয়া ফাওয়্বাযতু আমরী ইলাইক, ওয়া আলজা’তু যাহরী ইলাইক, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইক, লা মালজা’আ ওয়ালা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। আল্লাহুম্মা আমানতু বিকিতাবিকাল্লাযি আনযালত, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযি আরসালত।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আমার চেহারা তোমার দিকে সমর্পণ করলাম, আমার সব বিষয় তোমার উপর ন্যস্ত করলাম, আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলাম ভালোবাসা ও ভয়ের সাথে। তোমার থেকে বাঁচার কোনো আশ্রয় বা উপায় নেই, তুমি ছাড়া। হে আল্লাহ! আমি তোমার নাজিলকৃত কিতাব এবং তোমার প্রেরিত নবীর উপর ঈমান আনলাম।” যদি তুমি সেই রাতে মারা যাও, তাহলে তুমি ফিতরাতের উপর থাকবে। এগুলোকেই তোমার (রাতের) শেষ কথা বানাও। (অর্থাৎ এই দোয়া পড়ার পরে আর কোন কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো)। [বুখারী ও মুসলিম] এই সুন্নাহগুলো অনুসরণ করা মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য ও শান্তি লাভের উপায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সুন্নাহগুলোর প্রতি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম ওয়েব থেকে অনূদিত।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।

Share: