গুনাহ থেকে তওবা করার পর পুনরায় তাতে লিপ্ত হলে কী করণীয়?

প্রশ্ন: গুনাহ করার পর তওবা করে যদি আর না করা হয় তাহলে নাকি সেই গুনাহের কথা ভুলে যেতে হয়। বার বার ওই একি গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইলে নাকি আল্লাহর রহমতকে ছোট করা হয়। এ কথাটা ঠিক?

উত্তর:
একটি পাপ করার পর সেখান থেকে তওবা করার পর কেউ যদি পুনরায় সে একই পাপে লিপ্ত হয় তাহলে পুনরায় তওবা করা আবশ্যক; এর কোন বিকল্প নাই। তবে শর্ত হল, তওবা করতে হবে খাঁটি অন্তরে লজ্জিত হয়ে।

কোন ব্যক্তি যদি গুনাহ করার পর তওবার শর্তাবলী পূরণ করে তওবা করে নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করবেন বলে আশা করা যায়।

তওবা করার পর পুনরায় উক্ত গুনাহে লিপ্ত হওয়া মারাত্মক অন্যায়। কিন্তু কেউ তওবার করর পরও যদি শয়তানের প্ররোচনা ও প্রবৃত্তির তাড়নায় আবার একই গুনাহে লিপ্ত হয় তাহলে কী করণীয়?

উত্তর হল, আবারও তওবা করা। কারণ, এই গুনাহ মোচন করার জন্য তো আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর দ্বিতীয় কারো কাছে যাওয়ার সুযোগ নাই। একমাত্র আল্লাহই আমাদের তওবা কবুল কারী। তাই একজন মানুষ তওবা করার পরও যদি একই গুনাহ বারবার করে তাহলে তারপরও আল্লাহর নিকটই তাকে ফিরে যেতে হবে। তার নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কিছু নাই।
দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উপর তওবা করা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মুমিনগণ,তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।”[সূরা নূর: ৩১]

তিনি আরও বলেছেন,
تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا
“তোমরা আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে তওবা কর।”[তাহরীম: ৮] সুতরাং প্রতিটি পাপের জন্য বান্দার তওবা করা অপরিহার্য-যদিও পাপ থেকে তওবা করার পর পূণরায় সে পাপে লিপ্ত হয়।

সুতরাং এতে ‘আল্লাহর রহমতকে ছোট কর হয়’ মনে করে তওবা থেকে দূরে থাকা মানে শয়তানের চক্রান্তে পা দেয়া। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।

মোটকথা, দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমাদের সকল অপরাধ ও গুনাহ-খাতা তুলে ধরতে হবে..একই অপরাধ বারবার হলেও..পাহাড় পরিমাণ গুনাহ হলেও…আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।
তবে তওবার পূর্বে করার শর্তগুলো আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন।

■ তওবার শর্তবালী নিম্নরূপ:

গুনাহ যদি বান্দা ও আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়; অপর কোন মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় তবে তার জন্য তিনটি শর্ত। যথা:

🔸১ম শর্ত: তৎক্ষণাৎ গুনাহ হতে বিরত থাকা।
🔸 ২য় শর্ত: গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া।
🔸 ৩য় শর্ত: পুনরায় উক্ত গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
উল্লেখিত তিনটি শর্ত পূরণ না হলে তওবা কবুল হবে না।

আর অন্যায় যদি অন্য মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তবে তার জন্য চার টি শর্ত। উল্লেখিত তিনটি শর্তের সাথে চতুর্থ শর্ত হল, সম্ভব হলে যার অধিকার হরণ করা হয়েছে তার সাথে বিষয়টি সুরাহা করে নেয়া। যেমন, কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা হলে তা মালিকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে।

কারও অগোচরে সমালোচনা (গীবত) করা হলে তার সাথে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়া আবশ্যক। তবে এতে যদি বিশংখলা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে তবে উক্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া ও তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করার পাশাপাশি মানুষের নিকট তার প্রশংসা ও সুনাম তুলে ধরে যথাসাধ্য তার মান-সম্মান বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার অবাধ্যতা থেকে হেফাজত করুন এবং মৃত্যুর পূর্বে আমাদের ভাগ্যে তওবা নসীব করুন। আমীন

▬▬▬▬❖❖❖▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।