গিবত করা বা শুনার পর তওবা কবুলের জন্য যার গিবত করা হয়েছে তার নিকট ক্ষমা চাওয়া কি জরুরি

প্রশ্ন: আমরা জানি যে, গিবত করার গুনাহ থেকে রেহাই পেতে হলে যার ব্যাপারে গিবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। আমার প্রশ্ন হল, যদি কেও কারো গিবত শোনে তাহলে এই শ্রবণকারী ব্যক্তি কি যার গিবত করা হয়েছে তার কাছে মাফ চাইবে বা এ ক্ষেত্রে শ্রবণকারী ব্যক্তির কী করণীয়?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত (কারও অসাক্ষাতে সমালোচনা বা পরচর্চা করা) জঘন্য কবিরা গুনাহ। কুরআনে এটিকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া সমতুল্য বলা হয়েছে। [সূরা হুজুরাত: ১২]। তবে কেউ এমনটি করে ফেললে যার অসাক্ষাতে সমালোচনা করা হয়েছে তার নিকট ক্ষমা চাওয়া জরুরি কি না এ ব্যাপারে ওলামাদের মাঝে দ্বিমত আছে। তবে বিজ্ঞ আলেমগণ বলেন, যার বিষয়ে গিবত করা হয়েছে তার কাছে বিষয়টা বলতে গেলে কোন লাভ তো হবে না বরং সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সে ব্যক্তি বিষয়টি জানার আগ পর্যন্ত মানসিকভাবে শান্তিতেই ছিল। কিন্তু শুনার পরে তার মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। শুনার পর সে ধৈর্য ক্ষমতা হারিয়ে তার ক্ষতি করে ফেলতে পারে। এভাবে তাকে দ্বিগুণ কষ্ট দেওয়া হবে। তাই তার নিকট বিষয়টি বলতে যাওয়া ঠিক নয়। বরং তার উচিৎ হবে, সেই ব্যক্তির জন্য মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
🔸ইবনে আব্দুল বার তার বাহাজাতুল মাজালিস গ্রন্থে বলেন,
– হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন,
كفارة من اغتبته أن تستغفر له
“যার গিবত করেছেন তার কাফফারা হচ্ছে, তার জন্য ইস্তেগফার করা।”
আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনাকে বলেন,
التوبة من الغيبة أن تستغفر لمن اغتبته
“গিবতের তওবা হচ্ছে, যার গিবত করেছো তার জন্য ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করা।” তখন সুফিয়ান বললেন, “বরং তার ব্যাপারে যা কিছু বলেছ সেজন্যে তার নিকট ক্ষমা চাওয়া উচিত।” তখন আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক বললেন, তাকে দু বার কষ্ট দিও না।”
তার জন্য মহান আল্লাহর নিকট ইস্তেগফারের পাশাপাশি অন্য কেউ তার সমালোচনা করলে যথাসাধ্য তার পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া, কেউ তার মানহানি করতে চাইলে তার প্রতিবাদ জানানো এবং অন্যদের নিকট তার প্রশংসা ও সুনাম করে বদনামের ক্ষতিপূরণ আদায় করা উচিত। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুণার আধার। তবে সে যদি আপনার গিবতের বিষয়টি কোনভাবে জেনে গিয়ে থাকে তবে তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেওয়া এবং বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়া নিঃসন্দেহে উত্তম।

অনুরূপভাবে আপনি যদি কারও ব্যাপারে গিবত শুনেন তারপর যদি যার গিবত করা হয়েছে তার নিকট ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বিষয়টি তাকে বলতে যান তাহলে আপনার সাথে এবং যে গিবত করেছে তার সাথে মিলে ত্রিমুখী সমস্যা ও ঝগড়া-ঝাটির সূচনা হওয়ার পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপনার ও তাই করা উচিৎ যেমনটা গিবত কারীর জন্য করা উচিৎ যেমন -আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি সে ব্যক্তির প্রশংসা ও সুনাম করে বদনামের ক্ষতিপূরণ করা এবং তার জন্য মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা ও দুআ করা। সেই সাথে গিবত কারীকে নসিহত করাও সংশোধনের চেষ্টা করা আপনার কর্তব্য যদি সম্ভব হয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।