গায়রে মাহরাম পুরুষের নিকট মহিলাদের কুরআন শিক্ষা করার বিধান (আল্লামা শাইখ সালিহ আল ফাউযানের ফতোয়া সহ)

প্রশ্ন: কোন গাইরে মাহরাম পুরুষ শিক্ষকের কাছে মহিলাদের কুরআন শিক্ষা, কুরআন তিলাওয়াত করে পড়া দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয আছে কি? কুরআন ও সুন্নাহ এ বিষয়ে কী বলে?
উত্তর:
মহিলা মহিলা শিক্ষকের নিকট দ্বীনী ইলম ও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করবে- এটাই সব চেয়ে নিরাপদ ও সঠিক পদ্ধতি। কিন্তু যদি মহিলা শিক্ষক না পাওয়া যায় তখন পর পুরুষের নিকট শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষার্জন করা জায়েয আছে। যেমন,
– নির্জনতা অবলম্বন করা যাবে না।
-পূর্ণ পর্দা রক্ষা করতে হবে।
-মহিলাকে অন্তরালে থাকতে হবে।
-মহিলা কোমল কণ্ঠে কথা বলা থেকে দূরে থাকবে।
-তারা উভয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলবে না
-এবং সর্বোপরি ফেতনা থেকে দুরে থাকতে হবে।
এ সব শর্ত সাপেক্ষে পরপুরুষের নিকট দীনী ইলম বা দুনিয়াবি প্রয়োজনীয় বিষয় শিক্ষা অর্জন করা জায়েয আছে।
তবে কুরআন শিক্ষার বিষয়টি ভিন্ন। কুরআন শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার অনুরূপ ভাবা ঠিক নয়। কারণ হাদিসে সুন্দর কণ্ঠে ও সুর করে কুরআন তিলাওয়াতের নির্দশে এসেছে। সুতরাং কোন মহিলা যখন পর পুরুষের কাছে সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করবে তখন তা ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে-যা উভয়ের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

তাছাড়া কুরআনেও নারীদেরকে পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। দেখুন: সূরা আহযাব এর ৩২ নং আয়াত।

এ ক্ষেত্রে প্রখ্যাত সাহাবী আনজাশা রা. এর হাদিসটিও প্রণিধানযোগ্য।
তিনি সফর অবস্থায় মহিলাদের উপস্থিতিতে সুর করে কবিতা আবৃতি করে উট হাঁকাচ্ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তাকে নিষেধ করলেন। কারণ সুর মহিলাদের অন্তরে দ্রুত প্রভাব ফেলে। উক্ত হাদিসে তিনি মহিলাদেরকে কাঁচের পাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ মহিলারা গান ও সুরের প্রভাবে কাঁচের পাত্রের মত দ্রুত ভেঙ্গে যায় অর্থাৎ ফেতনায় পড়ে যায়।
ইমাম নওবী রহ. সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন,কাযী ইয়ায, হারাবী সহ বহু আলেম এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে হাদিসটির অন্য ব্যাখ্যাও আছে।
(শরহে সহীহ মুসলিম-ইমাম নওবী)
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে- এমন সব ক্ষেত্র থেকে দুরে থাকা আবশ্যক। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন।

 আল্লামা সালেহ আল ফাউযান রহ বলেন:

لا ينبغي أن يدرّس الرجل النساء خصوصاً في القرآن؛ لأن المرأة سترتل القرآن وسترخم صوتها فيه وتتغنى به كما قال النبي صلى الله عليه وسلم :
( من لم يتغنّ بالقرآن فليس منا ) وهي أمام رجلٍ أجنبي؛ لأن هذا محلّ فتنة، والله سبحانه وتعالى قال:
{ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ }
“পুরুষের জন্য মহিলাদেরকে বিশেষত: কুরআন পড়ানো উচিৎ নয়। কারণ মহিলাটি পর পুরুষের সামনে তারতীল তথা ধীর-স্থীরভাবে সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করবে, সুর করবে যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالقُرْآنِ فَلَيْسَ مِنَّا
‘যে ব্যক্তি সুন্দর কণ্ঠে কুরআন পড়ে না, সে আমাদের দলভূক্ত নয়।’ (অর্থাৎ আমাদের ত্বরীকা ও নীতি-আদর্শ বহির্ভূত।) [আবূ দাউদ, উত্তম সূত্রে-রিয়াদুস সালেহিন/১০১৪] আর এটাই হল, ফেতনার স্থান। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে।” (সূরা আহযাব: ৩২)”

মোটকথা, যথাসম্ভব মহিলারা মহিলা শিক্ষকের নিকট কুরআন শিক্ষা করার চেষ্টা করবে। এটাই সবচেয়ে সঠিক ও নিরাপদ পন্থা। আর বর্তমানে আল হামদুলিল্লাহ অনলাইন হোক বা অনলাইন হোক কুরআনের মহিলা শিক্ষক দুষ্প্রাপ্য নয়- যদিও এখনো কিছুটা সঙ্কট রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন শেখার তাওফিক দান করুন এবং সব ধরণের ফেতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

এ বিষয়ে অন্যান্য আলেমদের ফতোয়া দেখতে ভিজিট করুন এই লিংক: (আরবী)
https://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=229676
🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব