কুরআন প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার সম্পর্কিত ইসলামি বিধান

প্রশ্ন: কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামি জ্ঞান চর্চা বা দীনী কাজে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের পুরস্কার গ্রহণের বিধান কি?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোন ভালো কাজের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং তাতে অংশ গ্রহণ করা জায়েজ ইনশাআল্লাহ। কুরআন তিলাওয়াত, মুখস্থ করণ, হাদিস পাঠ ও মুখস্থ করণ, ইসলামি বই-পুস্তক পাঠ, ইসলামি সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে সৎকর্মে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং প্রতিযোগিতা মূলক মনোভাবের কারণে মানুষের মাঝে কুরআন, হাদিস ও দীন চর্চা বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার তার প্রশংসা করেছেন। যেমন:
✪ আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
“অত:এব তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও।” [সূরা বাকারা: ১৪৮]

✪ আল্লাহ তাআলা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কারীদের প্রশংসা করে বলেন,

وَيُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَأُولَٰئِكَ مِنَ الصَّالِحِينَ

আর তারা সৎকর্মে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে আর এরাই হল, সৎকর্ম শীল।” [সূরা আলে ইমরান: ১১৪]

✪ তিনি আরও বলেন,

إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ

“তারা তো সৎকাজে প্রতিযোগিতা করতো।” [সূরা আন্বিয়া: ৯০]

প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পুরষ্কারের প্রদানের মাধ্যমে বিজয়ীকে সম্মানী দেওয়াও জায়েজ। কেননা এটা মূলত: কুরআন তিলাওয়াত, মুখস্থ করণ, জ্ঞানর্চার বা দীনী কাজের প্রতিদান নয় বরং এটা প্রতিযোগীর সময় ও শ্রমের মূল্যায়ন এবং মেধার স্বীকৃতি। এর মূল পুরষ্কার সে আখিরাতে অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। তবে শর্ত হল, যারা এসব প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করবে তাদের অন্তরে খুলুসিয়াত তথা এ নিয়ত থাকতে হবে যে, তাদের এ সকল কার্যক্রমের আসল পুরষ্কার মহান আল্লাহ তাদেরকে আখিরাতে দান করবেন। দুনিয়ার এই পুরষ্কার তাদের তার মূল টার্গেট নয়। যেমন: মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় শিক্ষক, দাঈ, ওয়ায়েজ প্রমূখ ব্যক্তিগণ তাদের দীনী কার্যক্রমের বিনিময়ে বেতন/পারিশ্রমিক গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরষ্কার, অর্থকড়ি, সার্টিফিকেট ও সম্মাননা গ্রহণ করে। কিন্তু এগুলো তাদের সৎকর্মের বিনিময় নয় বরং তাদের কষ্ট, পরিশ্রম ও মেধার সামান্য মূল্যায়ন এবং পারিশ্রমিক মাত্র। আখিরাতে সে মহান আল্লাহর নিকট প্রকৃত সওয়াব (প্রতিদান) লাভ করবে। এই নিয়তেই তাকে এ সকল দীনের কাজ আঞ্জাম দিতে হবে; অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।

◈◈ সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি এবং বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করায় কোনও সমস্যা আছে কি?
তিনি বলেন,
مسابقات القرآن فيها خير عظيم، فإذا أعطوا مساعدة في حفظ ما تيسر من القرآن أو في استنباط الأحكام وأخذ الفوائد فهذا من باب الأجرة، ومن باب التشجيع، فهذا لا بأس به بل هو من باب الجعالة لا حرج في ذلك
“কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশাল কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং যদি কুরআনের সহজ কিছু অংশ মুখস্থ করা বা কুরআন গবেষণা করে সেখান থেকে হুকুম-আহকাম ও উপকারী বিষয়াদি উদ্ভাবন করার বিনিময়ে যদি প্রতিযোগীদেরকে সহায়তা করা হয় তাহলে এটা ‘পারিশ্রমিক’ ও ‘উৎসাহ প্রদান’-এর অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনও সমস্যা নাই। বরং এটা জুয়ালা (বিশেষ কোনও কাজের জন্য অগ্রিম পুরস্কার বা পারিশ্রমিক ঘোষণা করা) এর অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনও অসুবিধা নেই।” [binbaz]

মোটকথা, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ বা অন্য যে কোনও দীনী কাজে প্রতিযোগিতা করা এবং বিজয়ীদেরকে পুরষ্কার প্রদান করা বা তা গ্রহণ করা জায়েজ। তবে শর্ত হল, প্রতিযোগীর বা আয়োজনকারীর উদ্দেশ্য থাকতে হবে, দীনের কাজের প্রচার-প্রসার এবং কল্যাণকর কাজের জন্য মানুষকে উৎসাহ দান। কিন্তু এ সব কাজের প্রকৃত পুরস্কার পাবে আখিরাতে মহান আল্লাহর দরবারে।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।