কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় এবং এ ক্ষেত্রে নগদ মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করা বৈধ

প্রশ্ন: কিস্তিতে পণ্য ক্রয় কয়ের কারণে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হলে তা কি সুদ হবে? যেমন, একটা ফ্রিজ কিস্তিতে ক্রয় করার কারণে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। আমার হিসাবে সেটাও একটা সুদ প্রদান ছিল। আসলে এটা কি সুদ?

উত্তর:

ইসলামের দৃষ্টিতে কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ এবং কিস্তিতে পণ্য ক্রয়ের কারণে নগদ মূল্যের অতিরিক্ত মূল্য নেয়া সর্বসম্মতভাবে বৈধ। এটি সুদ নয়। এ ব্যাপারে চার মাজহাবের ইমাম সহ অধিকাংশ আলেমগণ একমত। কারণ এখানে দুটি ভিন্ন ভিন্ন জিনসের মধ্যে কমবেশি হচ্ছে (টাকার বিনিময়ে ফ্রিজ)।
তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী সুদ তখন হবে যখন এক জাতীয় দুটি জিনিস লেনদেনের ক্ষেত্রে কম-বেশী করা হয়-চাই নগদে হোক অথবা বাকিতে হোক। যেমন: ১০ কেজি গমের পরিবর্তে ১১ কেজি গম নেয়া, ১০০০ টাকার পরিবর্তে ১১০০টাকা নেয়া ইত্যাদি।
এ মর্মে হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: ‏ “‏ التَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْحِنْطَةُ بِالْحِنْطَةِ وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى إِلاَّ مَا اخْتَلَفَتْ أَلْوَانُهُ ‏”‏ ‏.‏
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব ও লবণের বিনিময়ে লবণ সম পরিমাণ ও হাতে হাতে হতে হবে। কেউ যদি বেশি দেয় বা বেশি নেয় তবে সুদ হবে। তবে যদি এর শ্রেণী পরিবর্তন হয় (যেমন, খেজুরের বিনিময়ে গম, গমের বিনিময়ে লবন….ইত্যাদি) তবে কমবেশি করাতে কোন অসুবিধা নেই।”
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: স্বর্ণের বদলে রৌপ্য ও রৌপ্যের বদলে স্বর্ণ নগদ বেচাকেনা, হা/৩৯৫৮)]
সুতরাং কিস্তিতে পণ্যের মূল্য পরিশোধের কারণে অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ সুদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং এটিও ব্যবসার একটি পদ্ধতি।

▐ ▎ প্রশ্ন: আমি এক জনের কাছে আমার মোবাইল বিক্রি করবো। তো দাম ঠিক হল, এক লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতা ভেঙে ভেঙে দিতে চায়। এ জন্য আমি যদি আরও ২০০০০ টাকা বেশি নেই তাহলে কি ঠিক হবে যদি ক্রেতা এ চুক্তিতে সম্মত হয়?

উত্তর:
হ্যাঁ, এভাবে কিস্তিতে নগদ মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য নিয়ে বিক্রয় করা জায়েজ রয়েছে। তবে বিক্রয়ের শুরুতে এ বিষয়ে চুক্তি নিশ্চিত করতে হবে যে, নগদে নিলে এত দাম এবং কিস্তিতে নিলে এত দাম। তারপর ক্রেতা যেভাবে খুশি সেভাবে সিদ্ধান্ত নিবে এবং চুক্তি অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।” (সূরা নিসা: ২৯)
সুতরাং বাকিতে বিক্রয়ের কারণে যদি পণ্যের দাম বেশি ধরা হয় আর ক্রেতা তাতে সম্মত হয় তাহলে এতে কোন আপত্তি নাই। কারণ এটিও ব্যবসার একটি পদ্ধতি।

কিস্তিতে বিক্রয় করার সময় কখন বা কয় কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করা হবে তা নির্ধারণ করা আবশ্যক। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَهُمْ يُسْلِفُونَ فِي الثِّمَارِ السَّنَةَ وَالسَّنَتَيْنِ فَقَالَ ‏ “‏ مَنْ أَسْلَفَ فِي تَمْرٍ فَلْيُسْلِفْ فِي كَيْلٍ مَعْلُومٍ وَوَزْنٍ مَعْلُومٍ إِلَى أَجَلٍ مَعْلُومٍ‏”‏ ‏
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনকালে মদিনাবাসীরা এক বা দুই বছর মেয়াদে বিভিন্ন প্রকার ফল অগ্রিম ক্রয় করত। তিনি বলেন, যে কেউ খেজুর অগ্রিম ক্রয় করবে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপে বা নির্ধারিত ওজনে এবং নির্ধারিত মেয়াদে ক্রয় করে। [সহীহ মুসলিম – ৩৯৭৩]‏

▐ ▎ প্রশ্ন: আমি জানতে চাচ্ছি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কিস্তিতে গাড়ী কিনলে সেটা হালাল হবে কি না?

উত্তর:

ইসলামী শরিয়তে কিস্তিতে গাড়ি, বাড়ি বা যে কোনো পণ্য ক্রয় করা বৈধ। কেননা, এ ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে পণ্য লেনদেন হয়। এটি ব্যবসার অন্তর্গত। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।