ওজুতে সন্দেহ সৃষ্টি করা বা ওজু নষ্ট করার জন্য ‘ওয়ালহান’ নামক শয়তান নিযুক্ত থাকা সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়

ওজুতে সন্দেহ সৃষ্টি করা বা ওজু নষ্ট করার জন্য وَلْهَان ‘ওয়ালহান’ নামক শয়তান নিযুক্ত থাকার ব্যাপারে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞ হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে তা সহিহ নয়। সুতরাং জঈফ বা দুর্বল হাদিস দ্বারা এমন গায়েব (অদৃশ্য) বিষয়ের কোনও বিধান সাব্যস্ত করা সঙ্গত নয়।

নিম্নে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদিসটি উল্লেখ পূর্বক সে সম্পর্কে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের মতামত উপস্থাপন করা হল:

✪ হাদিসটি হল:
إنَّ للوُضوءِ شَيْطانًا يقالُ له: الوَلَهانُ، فاتَّقوا وَسْواسَ الماءِ
“ওজুর জন্য একটি শয়তান নির্ধারিত রয়েছে। এর নাম হল, ওয়ালহান। সুতরাং তোমরা পানির ব্যাপারে সন্দেহ প্রবণতা থেকে বেঁচে থাকবে।” [ইবনে মাজাহ, হা/৪২১, তিরমিজী, হা/৫-আল মাদানী প্রকাশনী]

✪ হাদিসটির মান: এটি জইফ (দুর্বল)

নিম্নে এ প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসদের মতামত তুলে ধরা হল:

◈ ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী রাহ. বলেন,

“উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি غريب
“হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে এ হাদিসটির সনদ শক্তিশালী এবং সহীহ নয়। কারণ, খারিজা ব্যতীত আর কেউ এটিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মুসনাদ তথা অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।”

তিনি আরও বলেন,
ولا يصح في هذا الباب عن النبي صلى الله عليه وسلم شيء ، وخارجة ليس بالقوي عند أصحابنا ، وضعفه ابن المبارك
“আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই বিষয়ে সহীহ কিছু বর্ণিত নেই।
আমাদের সাথীদের (মুহাদ্দিসগণের নিকট) খারিজা শক্তিশালী রাবী (বর্ণনা কারী) বলে স্বীকৃত নন। ইবনে মুবারক তাঁকে জঈফ (দুর্বল) বলে আখ্যায়িত করেছেন।”

◈ এই খারিজা কে হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. متروك (পরিত্যাজ্য) আর ইবনে মাঈন كذاب (মিথ্যুক) বলেছেন।
[সূত্র: মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) অধ্যায়-৩: পাক-পবিত্রতা, পরিচ্ছেদ: ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: ওজুর নিয়ম-কানুন]

◈ আবু যুরআ রাযী বলেন,
رفعه إلى النبي صلى الله عليه وسلم منكر
“এ হাদিসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত মারফু সূত্রে বর্ণনা করার বিষয়টি منكر” [আল ইলাল, ১/১৮৬]

➤ এ ছাড়াও প্রায় সকল মুহাদ্দিস এ হাদিসটিকে জইফ (দুর্বল) বলেছেন। যেমন:

◈ ইবনে ইরাক আল কিনানি [তানযিহুশ শারিয়াহ ২/৭২]
◈ বাগাভী [শারহুস সুন্নাহ ১/৩৬৭]
◈ নওবী [আল খুলাসা ১/১১৭]
◈ শাইখ আলবানি বলেন, এটি অত্যধিক দুর্বল। [জইফ ইবনে মাজাহ/ ৮৭]
◈ শুয়াইব আরনাবুতও আলবানির অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। [তাখরিজুল মুসনাদ, হা/২১২৩৮ للوُضوءِ شَيطانٌ يُقالُ له: الوَلْهانُ، فاتَّقوهُ، أو قال: فاحْذَروهُ.]

◍ দুটি জ্ঞাতব্য বিষয়:

ক. ওয়ালহান শব্দের অর্থ: অত্যধিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, অত্যধিক দু:খ, কষ্ট ও দু:শ্চিন্তার ফলে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইত্যাদি।
খ. বলা হয়ে থাকে যে, ‘ওয়ালহান’ শয়তানের একটি নাম। কিন্তু এ মর্মে হাদিসটি সহিহ বলে সাব্যস্ত না হওয়ায় এটিকে শয়তানের নাম হিসেবে প্রমাণ করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।