ওজর ব্যতিরেকে ফরজ সালাত বাহনের উপর পড়া বৈধ নয়

প্রশ্ন: ভোর ৩ টায় দূর সফরে বের হলে ফজর নামায কি গাড়িতে বসে পড়া যাবে?
উত্তর:
সফরে থাকা অবস্থায় ফজরের ওয়াক্ত হলে গাড়ি থেকে নিচে নেমে সালাত আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। এ বিধান নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য।
এ ব্যাপারে চার মাজহাবের সম্মানিত ইমামগণ সহ সর্বস্তরের আলেমদের ইজমা বা সর্বসম্মত অভিমত রয়েছে। ইবনে তাইমিয়া, নওবী, শাওকানি সহ অনেক আলেম এই ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন।
কেননা বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে থাকা অবস্থায় সালাতের সময় হলে বাহন থেকে নিচে নেমে ফরজ সালাত আদায় করতেন আর ফরজ ছাড়া অন্যান্য সালাত (যেমন: সুন্নত, নফল, বিতর ইত্যাদি) আদায় করতেন বাহনে বসেই। যেমন:

◍ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسبح على الراحلة قِبَلَ أي وجه توجه، ويوتر عليها، غير أنه لا يُصلي عليها المكتوبة /وللبخاري : إلا الفرائض
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহনে তার গন্তব্য অভিমুখেই নফল ও বিতর সালাত আদায় করতেন। তবে তিনি তাতে ফরজ সালাত আদায় করতেন না।” (সহিহ মুসলিম)

তিনি বাহনে বসে সালাতের ক্ষেত্রে সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারায় রুকু-সেজদায় করতেন। রুকুতে মাথাটা সামনের দিকে যে পরিমাণ ঝুঁকাতেন সে তুলনায় সেজদায় আরও বেশি ঝুঁকাতেন।

◍ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كان النبيُّ عليه السلام يُصلِّي في السفرِ على راحلتِه، حيث توجَّهتْ به، يُومِئ إيماءً صلاةَ اللَّيلِ، إلا الفرائض، ويُوتِر على راحلتِه-رواه البخاري (1000)، ومسلم (700)
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাত ছাড়া অন্যান্য সালাত বাহনের উপর আদায় করতেন তা যে অভিমুখেই চলুক না কেন। এ ক্ষেত্রে তিনি রাতের সালাতে ইশারা করতে। আর বাহনের উপর বিতর সালাতও আদায় করতেন।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
এ বিষয়ে পর্যাপ্ত হাদিস রয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।

◈◈ কখন বাহনের উপর ফরজ সালাত আদায় করা বৈধ?

গাড়ি থেকে নামার সুযোগ থাকলে ফরজ সালাত গাড়িতে পড়া যাবে না। কিন্তু যদি কোনও কারণে বাহন থেকে নামা সম্ভব না হয়, গাড়ি না থামানো যায়, মাটি কর্দমাক্ত বা সালাতের অনুপযুক্ত হয় বা গাড়ি থেকে নামলে কোন ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে অথচ সালাতের সময় অতিবাহিত হওয়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তাহলে বাহনের উপরই তা আদায় করা জায়েজ।

● ইবনুল মুলাক্কিন রাহ. বলেন,
قال ابن الملقِّن : ولو كان في ركب وخاف لو نـزل للفريضة انقطع عنهم ولحقه الضرر صلى عليها [ أي على الدابة ] . اهـ .
“যদি বাহনের থাকা অবস্থায় ফরজ সালাতের জন্য নিচে নামার ফলে আশঙ্কা থাকে যে, সফর সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তার উপরই আদায় করবে।” (শারহু উমদাতিল আহকাম, ৭২ নং হাদিসের ব্যাখ্যা)

● নওবী রাহ. বলেন,
ولو حضرت الصلاة المكتوبة، وخاف لو نزل ليصليها على الأرض إلى القبلة انقطاعاً عن رفقته أو خاف على نفسه أو ماله لم يجز ترك الصلاة وإخراجها عن وقتها، بل يصليها على الدابة لحرمة الوقت، وتجب الإعادة لأنه عذر نادر. ا.هـ.
“যদি সালাতের সময় হয়ে যায় কিন্তু কিবলার দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মাটিতে নামলে সফর সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করে অথবা নিজের জানমালের ভয় করে তাহলে সালাত ত্যাগ করা বা সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময় থেকে বের করা জায়েজ নয়। বরং সময়ের মর্যাদার প্রতি লক্ষ করে তা বাহনের উপরেই আদায় করবে। পরবর্তীতে তা পুনরায় পড়াও আবশ্যক নয়। কারণ তা একটি বিরল ওজর।” (আল মাজমু ও শরহে মুসলিম)

এ ক্ষেত্রে বাহনের উপর কিবলা মুখী হয়ে-সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে অন্যথায় সিটে বসে-সালাত শুরু করতে হবে। তারপর গাড়ি যে দিকেই ঘুরুক না কেন তাতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু কিবলা মুখী হয়ে শুরু করা সম্ভব না হলে যে দিকে সম্ভব সে দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)

উল্লেখ্য যে, বাড়িতে থাকা অবস্থায় সালাতের সময় হওয়ার পূর্বে সালাত আদায় করা যাবে না। কারণ সালাতের সময় হওয়া এর অন্যতম পূর্বশর্ত। অনুরূপভাবে বাড়িতে থাকা অবস্থায় সফরের হুকুম প্রযোজ্য হবে না। বরং বের হয়ে নিজ এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর সফরের বিধান প্রযোজ্য হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◍◯◍▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।