একটি নেক আমলের ওসিলায় কি বিভিন্ন প্রয়োজনে বার বার আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে

প্রশ্ন : একটি নেক আমলের ওসিলায় কি বিভিন্ন প্রয়োজনে বার বার আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে?
———————–
উত্তর : মহান আল্লাহর নিকট একটি আমলের ওসিলায় বিভিন্ন প্রয়োজনে বারবার দুয়া করা জায়েজ রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ সুমহান দয়ালু ও দাতা।
উল্লেখ্য যে, ওসিলা অর্থ মাধ্যম। অর্থাৎ দুয়া কবুল ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার মাধ্যম।
বৈধ ওসিলা তিনটি:
❖ ১) আল্লাহ নাম ও গুণাবলীর ওসিলায় আল্লাহর নিকট দুয়া করা। যেমন: এভাবে বলা:
– হে আল্লাহ, তোমার রহমান (অতিদয়ালু) নামের ওসিলায় আমার উপর দয়া করো।
– তোমার গাফফার (অতি ক্ষমাশীল) নামের ওসিলায় আমাকে ক্ষমা করো।
– তোমার রাযযাক (রিজিক দাতা) নামের ওসিলায় আমাকে রিজিক দান করো ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟْﺄَﺳْﻤَﺎﺀُ ﺍﻟْﺤُﺴْﻨَﻰ ﻓَﺎﺩْﻋُﻮﻩُ ﺑِﻬَﺎ
“আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে। তোমরা সে সব নামের ওসিলায় (মাধ্যমে) তাঁকে ডাক।” [সূরা আরাফ: ১৮০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«اللهم إني أسألك بأني أشهدُ أنك أنت الله لا إله إلا أنت الأحد الصمدُ الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد»
“হে আল্লাহ, আমি তোমারই নিকট প্রার্থনা করি, কেননা আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই, একক সত্তা, যার নিকট সকল কিছু মুখাপেক্ষী, তিনি জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”
[সুনান আবু দাউদ, তিরমিযী-সহিহ তারগীব ওয়া তারহীব/ ১৬৪০]

এটি হচ্ছে তাওহীদ ও ঈমানের দ্বারা ওসিলা গ্রহণ করা।

❖ ২) নিজের সৎ কর্মের ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা:

যেমন: এভাবে বলা,

“হে আল্লাহ, তুমি আমার সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সকদা, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ ইত্যাদি নেক আমলে ওসিলায় আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করো, আমাকে দয়া করো, আমাকে সুস্থ করো ইত্যাদি।

এ ক্ষেত্রে সহিহ বুখারিতে বর্ণিত তিন যুবক পাহাড়ের গুহায় আটকা পড়লে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ নেক আমলের ওসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দুয়া করার মাধ্যমে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া সংক্রান্ত লম্বা হাদিসেটি প্রযোজ্য।

❖ ৩) কোন জীবিত উপস্থিত সৎ লোকের দু‘আর ওসিলা দিয়ে দুয়া করা:

কারো দু‘আর ওসিলা দিয়ে দুআ করার অর্থ হল, এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, অমুক আমার জন্য দু‘আ করেছেন, আপনি আমার বিষয়ে তাঁর দু‘আ কবুল করে আমার হাজত পূরণ করে দিন। নেককার মুত্তাকী-মুমিনদের নিকট দু‘আ চাওয়া সুন্নত সম্মত রীতি এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন:
ﺇِﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦَ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ رضي الله عنه ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺤَﻄُﻮﺍ ﺍﺳْﺘَﺴْﻘَﻰ ﺑِﺎﻟْﻌَﺒَّﺎﺱِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤُﻄَّﻠِﺐِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺘَﻮَﺳَّﻞُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺑِﻨَﺒِﻴِّﻨﻚ – صلى الله عليه و سلم- ﻓَﺘَﺴْﻘِﻴﻨَﺎ ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺘَﻮَﺳَّﻞُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺑِﻌَﻢِّ ﻧَﺒِﻴِّﻨَﺎ ﻓَﺎﺳْﻘِﻨَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻴُﺴْﻘَﻮْﻥَ
“মানুষ যখন অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হতেন তখন উমর রা. আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে রা. দিয়ে বৃষ্টির দু‘আ করাতেন।

তিনি বলতেন: “হে আল্লাহ, আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওসিলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করতাম। ফলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচার ওসিলায়।
অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। আনাস (রা) বলেন, তখন বৃষ্টিপাত হতো।” (বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৪২, ৩/১৩৬০)

তখন আব্বাস (রা) নিম্নের বাক্যগুলি বলে দু‘আ করলে আল্লাহ বৃষ্টি দিতেন:
اللهم إنه لم ينزل بلاء إلا بذنب ولم يكشف إلا بتوبة وقد توجه القوم بي إليك لمكانى من نبيك وهذه أيدينا إليك بالذنوب ونواصينا إليك بالتوبة فاسقنا الغيث
“হে আল্লাহ, পাপের কারণ ছাড়া বালা-মুসিবত নাযিল হয় না এবং তাওবা ছাড়া তা অপসারিত হয় না। আপনার নবীর সাথে আমার সম্পর্কের কারণে মানুষেরা আমার মাধ্যমে আপনার দিকে মুখ ফিরিয়েছে। এ আমাদের পাপময় হাতগুলি আপনার দিকে প্রসারিত এবং আমাদের ললাটগুলি তাওবায় আপনার নিকট সমর্পিত, অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।” [ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী, ২/৪৯৭]

শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী তাঁর ‘আল-বালাগুল মুবীন’ গ্রন্থে উমার রা. এর হাদিসটি উদ্ধৃত করে বলেন:

“এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করা শরীয়ত বিরোধী। যদি শরীয়ত সিদ্ধ হইত হযরত ওমর রা. রাসূল সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওসিলা করিয়াই দোআ করিতেন। কারণ, মৃত বা জীবিত যে কোন ব্যক্তির চেয়েই রাসূল সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফযিলত সীমাহীন-অনন্ত।
ওমর রা. এই কথা বলেন নি যে, হে আল্লাহ, ইতোপূর্বে তো আমরা তোমার নবীকে অসীলা করিয়া দোআ করিতাম। কিন্তু এখন তিনি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান নাই তাই আমরা তাঁহার রুহু মোবারককে অসিলা করিয়া তোমার কাছে আরযী বেশ করিতেছি। তাই কোন মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করা মোটেই বৈধ নহে।”
এখান থেকে প্রতিয়মান হয় যে, কোন মৃত নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়া, পীর-বুজর্গ অন্য কোন মৃত মানুষের ওসিলা ধরা জায়েজ নেই।
আল্লাহু আলাম।
———————————————
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।