উমর রা. কি ২৩ রাকআত তারাবীহ সালাত চালু করেছিলেন?

প্রশ্ন: উমর রা. কি ২৩ রাকআত তারাবীহ সালাত চালু করেছিলেন?
হারামাইন তথা মক্কা-মদিনায় কেন ২৩ রাকআত পড়া হয়?
▬▬▬▬💠🌀💠▬▬▬▬
উত্তর:
উমরা রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে তিনি (৮+৩=) ১১ রাকআত তারাবীহ সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে ২৩ রাকআত চালু করার হাদিসকে মুহাদ্দিসগণ যঈফ বা দুর্বল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

নিম্নে উভয় প্রকার হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হল:

🌀 উমর রা. কর্তৃক ১১ রাকআত তারাবীহ চালু করার এর হাদিস: (সহীহ)

নির্ভরযোগ্য রাবী মোহাম্মাদ বিন ইউসুফ রাহ. সায়েব বিন ইয়াজিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
أمر عمر بن الخطاب أبي بن كعب وتميماً الداري أن يقوما للناس بإحدى عشرة ركعة“
“উমর বিন খাত্তাব রা. উবাই বিন কা’ব এবং তামীম দারী রা.কে নির্দেশ দিয়েছেন লোকদেরকে নিয়ে ১১ রাকআত তারাবীহ সালাত পড়ার।”

( মুআত্তা মালিক, শাইখ আলবানী রহ. বলেন, إسناده صحيح جدا এর সনদ অত্যন্ত সহীহ, গ্রন্থ: সালাতুত তারাবীহ, পৃষ্ঠা ৫৩। আরও দেখুন, শরহুয যুরকানী ১/১৩৮)

🌀 উমর রা. কর্তৃক ২৩ রাকআত তারাবীহ চালু করার এর হাদিস: (যঈফ)

উমর রা. কর্তৃক ২০ রাকআত পড়ার নির্দেশ দানের হাদিসটিকে মুহাদ্দিসগণ যইফ (দুর্বল) বলেছেন। হাদিসটি হল:

ইমাম মালিক তার মুআত্তা গ্রন্থে ইয়াজিদ বিন রুমান থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
عن يزيد بن رومان قال: كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلاثٍ وَعِشرِينَ رَكعةً
“ইয়াজিদ বিন রুমান থেকে বর্ণিত, লোকেরা উমর বিন খাত্তাব (রা:)এর আমলে রমাযান মাসে কিয়ামুল লইল (বিতরসহ) ২৩ রাকআত আদায় করতেন।”

💠 এ হাদিসটি দুর্বল। কয়েকটি কারণে:

▪(১) এর সনদে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) রয়েছে। অর্থাৎ এর বর্ণনা সূত্রে কোন একজন রাবী (বর্ণনাকারী) বাদ পড়েছে। কারণ ইয়াজিদ বিন রুমান উমর (রা:) এর যুগ পায় নি। যেমন ইমাম নববী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ ঘোষণা করেছেন।
▪(২) ইয়াজিদ বিন রুমানের হাদীসটি ইমাম মালিক রহ. তাঁর মুআত্তা গ্রন্থে নির্ভরযোগ্য রাবী মোহাম্মাদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত সহীহ হাদিসের বিরোধী (পূর্বোল্লিখিত হাদিস)

▪ ৩) ১১ রাকআতের ব্যাপারে সায়েব বিন ইয়াজিদের হাদীছটি দোষ থেকে মুক্ত। তার সনদ মুত্তাসিল (অবিচ্ছিন্ন)। আর ইয়াজিদ বিন রুমানের হাদিস দুর্বল। সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ বিন ইউসুফ। তিনি ইয়াজিদ বিন রুমান থেকে অধিক নির্ভর যোগ্য। কেননা মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি ছিলেন ثقة ثبت (সিকাহ সাবত)। আর ইয়াজিদ বিন রুমান সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, তিনি শুধু ثقة (ছিকাহ)। আর
উসুলে হাদীসের পরিভাষায় সিকাহ সাবেত রাবীর বর্ণনা শুধু সিকাহ রাবীর বর্ণনা থেকে অধিক গ্রহণযোগ্য।
الذي قيل فيه ثقة ثبت مرجح على الذي قيل فيه ثقة فقط كما في مصطلح الحديث
এছাড়াও বহু হানাফি মুহাদ্দিস উক্ত ২০ রাকআত পড়ার হাদিসকে যঈফ বলেছেন।

♻ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের নফল সালাত কত রাকআত পড়তেন? এবং তার ধরণ কেমন ছিল?

আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে হাদিসটির প্রতি ফতহুল বারীর ভাষ্যকার ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ইঙ্গিত করেছেন, তা ইমাম বুখারী এবং মুসলিম স্বীয় কিতাব দ্বয়ে উল্লেখ করেছেন। আবু সালামা আব্দুর রাহমান আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন: রমাযান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযান কিংবা অন্য মাসে রাতের নামায ১১ রাকআতের বেশী পড়তেন না। (সহীহ বুখারী)
মুসলিমের শব্দে বর্ণিত হয়েছে, তিনি প্রথমে আট রাকআত পড়তেন। অতঃপর বিতর পড়তেন।
ইবনে আব্বাস (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামাযের ধরণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তিনি দুই রাকআত নামায পড়তেন, অতঃপর আরও দুই রাকআত পড়তেন। তারপর আরও দুই রাকআত, এভাবে ১২ রাকআত পূর্ণ করে বিতর পড়তেন। (সহীহ মুসলিম) এতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে তাঁর রাতের নামায ১১ রাকআত বা ১৩ রাকআতের মধ্যেই ঘূর্ণ্যমান ছিল।

♻ তারাবীহর সালাত ১১/১৩ রাকআতের বেশি পড়া:

রাতের নফল সালাত ১১ বা ১৩ রাকআত এর বেশি পড়লেও আপত্তি নাই। রাতে যত খুশি নফল সালাত পড়ার অনুমতির ব্যাপারে আলাদা হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। যেমন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত, দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশংকা করবে, সে এক রাকাত সালাত আদায় করবে, যা তার পূর্বের সালাতগুলো বেজোড় করে দিবে” (বুখারী, হা/ ৯৯০ ও মুসলিম হা/৭৪৯)

♻ ২৩ রাকআত তারাবীহ কি যুগে যুগে চলে আসা ইজমা?

না, ইজমা নয়। কারণ হাফেজ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফতহুল বারীতে এ ব্যাপারে মতপার্থক্যের কথা আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন:
🔸 আবান বিন উসমান এবং উমর বিন আব্দুল আজীজের আমলে মদিনাতে ৩৩ রাকআত তারাবী পড়া হতো। ইমাম মালিক (র:) বলেন একশ বছরেরও বেশী সময় পর্যন্ত চলমান ছিল। (দেখুন ফতহুল বারী, আল মাকতাবা সালাফীয়া ৪/২৫৩) (মূল কথাগুলো আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন এর লেখা থেকে সংকলিত)

🔸 বর্তমানেও দু হারাম তথা মক্কা-মদিনায় রমাযানের শেষ দশকে ৩৩ রাকআত পড়ার নিয়ম চালু আছে।

🌀 মোটকথা, ৮ তারাবীহ এবং তিন রাকআত বিতর সহ মোট এগারো রাকআত পড়া অধিক উত্তম। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ দ্বারা সু প্রমাণিত। (যেমনটি ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)
তবে এর চেয়ে বেশি পড়াও জায়েয আছে।

সুতরাং কেউ যদি ১১ রাকআতের বেশি পড়াকে বিদআত বলে অথবা কেউ যদি ২৩ রাকআতের কম বা বেশি পড়াকে বিদআত বলে তাহলে সে নি:সন্দেহে ভুলের মধ্যে রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমীন।
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত পড়ুন:
তারবীহর রাকায়াত সংখ্যা ৮ না ২০? আল্লামা উসাইমীন (রহ:) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা

▬▬▬▬💠🌀💠▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব