উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল

প্রশ্ন: আমি শুনেছি যে, বেশি হাসলে নাকি আন্তর কঠিন হয়ে যায়। এটা কি সহীহ?

উত্তর:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, উচ্চশব্দে বেশি পরিমাণে হাসলে মন মরে যায় এবং চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إيَّاك وكثرةَ الضَّحك؛ فإنَّه يميت القلبَ، ويذهب بنورِ الوجه
“উচ্চ আওয়াজে হাসা থেকে সাবধান থাকো। কেননা এতে অন্তর মরে যায় এবং মুখ মণ্ডলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।” (মুসনাদ আহমদ প্রমূখ। শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন)

এখানে উদ্দেশ্য হল, বেশি পরিমাণে অট্টহাসি দেয়া। এটি বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতিকর। তবে মাঝে-মধ্যে উঁচু আওয়াজে হাসা দোষণীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কখনও উঁচু আওয়াজে হেসেছেন। কিন্তু তিনি অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন।

🌀 উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন: “যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণে আওয়াজ করে হাসে তার ব্যক্তিত্ব বোধ কমে যায়।”

🌀 ইমাম মাওয়ারদী তার বিখ্যাত আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া গ্রন্থ বলেন:
“উঁচু আওয়াজে হাসার অভ্যাস মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে অমনোযোগী করে দেয়, বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের মুহুর্তে মনকে বিক্ষিপ্ত ও ভীত-ত্রস্ত করে আর যে অধিক পরিমাণে উঁচু আওয়াজে হাসে তার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব বোধ থাকে না…।”

🌀 বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হয়েছে, অট্টহাসি মানুষের হার্ট এ্যাটাকের অন্যতম কারণ। কারণ মানুষ যখন হো হো করে অট্টহাসি হাসে তখন তার শীরা-উপশিরায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এটি বেশি মাত্রায় হলে হঠাৎ হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

তাই হাসির ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। বিশেষ করে মৃদ হাসি মানুষের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মনিষীগণ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য মুচকি হাসিকে অন্যতম উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি দেহ ও মন উভয়ের জন্যই ভালো। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে মুচকি হাসিকে সদকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আবু যর রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تبسمك في وجه أخيك لك صدقة
“তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।” (সহীহ তিরমিযী, হা/১৯৫৬) এবং তিনি নিজেও অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন এবং হাসি-খুশি জীবন যাপন করতেন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🌐🔸🌐▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব