ইসলামের দৃষ্টিতে মৃতের লাশ কে অপমান করা বা কবর থেকে তুলে তা পুড়িয়ে ফেলার বিধান: (প্রসঙ্গ: নুরাল পাগলার লাশ পুড়ানোর ঘটনা)।
ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তির সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ━তা সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, মুরতাদ (ইসলামচ্যুত) হোক বা ফাসেক (পাপীষ্ঠ) হোক। মৃত ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে অসম্মান করা কিংবা পুড়িয়ে ফেলা অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। এমনকি কোনও অমুসলিমের লাশ বা তার কবরকেও অপমান-অপদস্থ করা ইসলামে জায়েজ নয়।
◆ সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বাজ (রহ.)-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়:
প্রশ্ন: কাফেরদের কবর কি অপমান করা বা অসম্মান করা বৈধ? উত্তরে তিনি বলেন,
لا، تُزار بس، بدون إهانة؛ لذِكْر الآخرة، إذا زارها من أجل ذِكْر الآخرة فقط
“না, কাফেরদের কবর অসম্মান করা জায়েজ নয়। যদি কেউ কবর জিয়ারত করতে চায় তবে তা শুধুমাত্র পরকালের কথা স্মরণ করার উদ্দেশ্যে করা যেতে পারে━কোনও অসম্মান বা অবমাননা ছাড়া।”
❑ শত্রুর মৃত দেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে শাইখ বিন বায রাহ.-এর আরও কিছু প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন: কা**ফের শত্রুকে আগুনে পুড়িয়ে মারা━এটার বিধান কী?
উত্তর: না, তাদেরকে আগুনে পোড়ানো যাবে না-যদি না তারা নিজেরা আগে (মুসলিম যোদ্ধাদেরকে) পুড়িয়ে থাকে।
প্রশ্ন: অর্থাৎ এটা কি প্রতিশোধের অংশ হিসেবে?
উত্তর: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: একইভাবে, অঙ্গহানি করা?
উত্তর: এটাও প্রতিশোধ হিসেবে করা যায়। তবে অঙ্গহানি না করাই উত্তম; কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ولا تُمَثِّلوا “তোমরা অঙ্গহানি করো না।”
প্রশ্ন: যদি তারা নিজেরা অঙ্গহানি করে থাকে তখনও কি?
উত্তর: তখনও অঙ্গহানি না করাই উত্তম, যদিও তারা তা করে থাকে।
প্রশ্ন: আলী ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু কি তাঁর অনুসারী শিয়াদেরকে আগুনে পুড়িয়েছিলেন?
উত্তর: সাহাবিগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ কাজের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি তাদের ওপর প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়েছিলেন। কারণ তারা বলেছিল: ‘আপনিই আল্লাহ’! (আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন)।
তাই তাদের ওপর প্রচণ্ড রাগের কারণে তিনি তাদের পুড়িয়ে মেরেছিলেন। তবে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যেমনটি বলেছিলেন: “যদি তিনি তাদের তলোয়ার দিয়ে হত্যা করতেন তবে তা উত্তম হতো।” আর এটাই করা উচিত। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথার ওপর কারো কথাকে প্রাধান্য দেওয়া যায় না-না আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কথা, না অন্য কারো। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা সবার কথার ওপর প্রাধান্য পাবে। [উৎস: বিন বায রাহ.- এর অফিসিয়াল ওয়ােব সাইট binbaz]
◆ ইসলামের যুদ্ধনীতিতেও এই মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা যায়। জিহাদের ময়দানে নিহত কাফেরদের ‘মুসলা’ বা অঙ্গহানি করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
غزوا بسم الله، وفي سبيل الله، وقاتلوا من كفر بالله، اغزوا ولا تغلوا، ولا تغدروا، ولا تمثلوا، ولا تقتلوا وليدا، ولا أصحاب الصوامع
“তোমরা আল্লাহর নামে, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করো। যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করে, তাদের সাথে যুদ্ধ করো। যুদ্ধ করো, তবে তোমরা সম্পদ আত্মসাৎ করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, অঙ্গচ্ছেদ করবে না, শিশুদেরকে হত্যা করবে না এবং উপাসনালয়ের সাধু-সন্ন্যাসীদের হত্যা করবে না।” [সহিহ মুসলিম]
◆ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ অসংখ্য যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছেন। কিন্তু এমন একটিও ঘটনা পাওয়া যায় না যে, তাঁরা কোনও পরাজিত শক্তির মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা তো দূরের কথা বরং সেগুলোর সাথে কোনও বর্বর আচরণ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে ইসলাম মানুষকে মানবিকতা, নৈতিকতা, সভ্যতা ও শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। উশৃঙ্খলতা, বর্বরতা এবং অমানবিক কার্যক্রম ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং সম্প্রতি রাজবাড়ির কথিত ইমাম মাহদির দাবিদার এবং শরিয়ত বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রবর্তক নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি শরিয়ত বহির্ভূত এবং সভ্যতা পরিপন্থী কাজ। এটি ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, অন্ধ এবং আবেগপ্রবণ জ্ঞানকাণ্ডহীন কিছু মানুষের কাজ। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি, নুরাল পাগলা কর্তৃক প্রবর্তিত শরিয়ত বিরোধী কাজগুলো বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।