ইসলামের দৃষ্টিতে কুশপুত্তলিকা

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে কুশপুত্তলিকা বানানো বা কুশপুত্তলিকা দাহ্য করার বিধান কি?
উত্তর:
নিম্নে কুশপুত্তলিকা শব্দের অর্থ, কুশপুত্তলিকা দাহ্য করার উদ্দেশ্য এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর বৈধতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
❑ কুশপুত্তলিকা শব্দের অর্থ:
কুশপুত্তলি, কুশপুত্তলী, কুশপুত্তলিকা (বিশেষ্য পদ) অর্থ: সাধারণত: মৃত ব্যক্তির প্রতীক স্বরূপ কুশ-গঠিত-মূর্তি; নকল মূর্তি, প্রতিমূর্তি। (English & Bengali Online Dictionary & Grammar)
❑ কেন কুশপুত্তলিকা দাহ্য করা হয়?
আমাদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ‘কুশপুত্তলিকা দাহ্য’ করার কর্মসূচী একটি সুপরিচিত বিষয়। কোনও ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত মনে করে তার প্রতি ক্রোধ বা অনাস্থা প্রকাশ বা তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের উদ্দেশ্যে তার প্রতীকী প্রতিমূর্তি তৈরি করে মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে তা আগুন দ্বারা পুড়িয়ে দেয়া হয়। এর নামাই ‘কুশপুত্তলিকা দাহ্য’।
❑ কুশপুত্তলিকা বানানো ইসলাম সমর্থন করে?
এ কথা স্বতঃ:সিদ্ধ যে, ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ, পশুপাখি ইত্যাদি প্রাণীর প্রতিমা, মূর্তি, প্রতিকৃতি, প্রতিমূর্তি ও ভাস্কর্য তৈরি বা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। বহু হাদিসে মূর্তি-প্রতিমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার এবং ছবি মুছে ফেলার নির্দেশ এসেছে।
➧ নিম্নে এ সংক্রান্ত কতিপয় হাদিস তুলে ধরা হল:
◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لاَ تَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ ‏
“কোন উঁচু কবরকে মাটি বরাবর না করে আর কোন প্রতিকৃতিকে না মুছে ছাড়বে না।” (সহিহ মুসলিম, হা/৯৬৯ ও তিরমিজী হাদিস নম্বর: ১০৪৯ [আল মাদানি প্রকাশনী]
◈ সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে:
وَلاَ صُورَةً إِلاَّ طَمَسْتَهَا
“আর কোনও ছবিকে না মুছে ছাড়বে না।”
◈ মুসলিম রাহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরূকের সাথে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরূক ইয়াসারের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে,
إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ
“(কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।” [মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)
◈ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَوَّرَ صُورةً فِي الدُّنْيَا كُلِّفَ أنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَيْسَ بِنَافخٍ متفقٌ عليه.
“যে ব্যক্তি ছবি তৈরি করে, তাকে কিয়ামতের দিন তাতে জীবন দানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে, কিন্তু সে সক্ষম হবে না।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
◈ আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ
“যারা এ জাতীয় (প্রাণীর) ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে: “তোমরা যা বানিয়েছিলে তাতে জীবন দাও।” [৭৫৫৮; মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৪)
এ সকল হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, প্রাণীর প্রতিমা, মূর্তি, প্রতিমূর্তি, প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্য তৈরি করা বা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ ও হারাম। সুতরাং কুশপুত্তলিকা তৈরি করা এই পৌত্তলিকতার রাজনৈতিক রূপ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
তা ছাড়া ইসলামে প্রতিবাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু প্রতিমা পোড়ানোর রীতি কখনোই ইসলামে স্বৃীকৃত ছিল না। অত:এব এই জঘন্য রীতিটি যে অমুসলিমদের থেকে মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করেছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সুতরাং পরিশেষ বলব, আমরা অবশ্যই অন্যায়ের প্রতিবাদ করব কিন্তু অবশ্যই তা হতে হবে শরিয়ত অনুমোদিত পদ্ধতিতে। অমুসলিমদের দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করা কখনো মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর নয়। তাই এই কুশপুত্তলিকা দাহ্য করার কু প্রথা থেকে মুসলিমদের বের হওয়া আবশ্যক।
আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।