আশুরা উপলক্ষে মাতম, তাজিয়া মিছিল এবং শরীরে আঘাত করা ইত্যাদির বিধান

প্রশ্ন: শিয়া সম্প্রদায় যে প্রতি বছর ১০ মুহররমে মাতম করে, তাজিয়া মিছিল করে, নিজেদের শরীরে আঘাত করে-এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। এ কাজগুলো কি শরিয়ত সম্মত?
উত্তর:
৬১ হিজরির মুহররম মাসের দশ তারিখে হুসাইন বিন আলী রা. রাজনৈতিক কারণে ফিতনায় পতিত হয়ে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া এর সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার প্রতি সমবেদনার বর্হি:প্রকাশ হিসেবে শিয়া সম্প্রদায় প্রতি বছর ১০ম মুহররমে নিজেদের শরীরকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে, মাথা মুণ্ডন করে, রাস্তায় রাস্তায় ‘হায় হুসাইন..হাই হুসাইন’ বলে কান্নাকাটি ও মাতম করে, কালো ব্যাচ ধারণ করে, তাজিয়া মিছিল বের করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সব, বিদআত, জাহেলিয়াত পূর্ণ ও হারাম কাজ। নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে তা প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।

♻ মৃত্যুশোকে কান্নাকাটি করা, মাতম করা, শরীরে আঘাত করা ইত্যাদির বিধান কি?

মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيَحْزَنُ الْقَلْبُ وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَاللَّهِ يَا إِبْرَاهِيمُ إِنَّا بِكَ لَمَحْزُونُونَ
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।” [সহীহ বুখারি: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭,মাকতাবা শামেলা]

তবে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া, কাপড় ছেড়া ইত্যাদি হারাম। এ সম্পর্কে নিন্মোক্ত হাদিস সমূহ দেখুন:

▪সহীহ বুখারিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
لَيْسَ مِنّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعا بِدَعْوى الْجاهِلِيَّةِ
যে ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত আহবান করে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (মজমু ফাতাওয়া শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ২৫/৩০২, ৩০৭)
▪নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَنا بَرِيءٌ مِمَّنْ بَرئَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ وَالْحالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ
“যে মহিলা (বিপদ-মুসিবতে) চিৎকার করে, মাথা মুণ্ডন করে, কাপড় ছিঁড়ে তার থেকে আমি সম্পর্ক মুক্ত।” [সহীহ মুসলিম]

▪নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
النَّائِحَةُ إذا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِها، تُقامُ يَومَ القِيامَةِ وعليها سِرْبالٌ مِن قَطِرانٍ، ودِرْعٌ مِن جَرَبٍ
“বিলাপকারীনী মহিলা যদি তওবা করার আগে মৃত্যু বরণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন আলকাতরা মাখানো পায়জামা আর ঘা বিশিষ্ট বর্ম পরিহিত অবস্থায় উঠবে।” [সহীহ মুসলিম, জানাইয অধ্যায়]

▪সহীহ বুখারিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ما مِن عبدٍ تُصيبُه مُصيبةٌ، فيقولُ: إنَّا لله وإنَّا إليه راجعونَ، اللهُمَّ أْجُرْني في مُصِيبتِي، وأَخْلِفْ لي خيرًا منها، إلَّا أَجَرَه اللهُ في مُصِيبته، وأَخْلَفَ له خيرًا منها
“যে আল্লাহর বান্দা বিপদে অপতিত হলে বলে: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাইহি রাজিঊন, “আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লাহু খাইরান মিনহা” অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য নিবেদিত এবং তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর থেকে উত্তম বিকল্প দান কর।”
তাকে আল্লাহ তাকে তার বিপদে উত্তম প্রতিদান দিবেন এবং তারচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।” [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয]

▪ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَرْبَعٌ في أُمَّتي مِن أمْرِ الجاهِلِيَّةِ، لا يَتْرُكُونَهُنَّ: الفَخْرُ في الأحْسابِ، والطَّعْنُ في الأنْسابِ، والاسْتِسْقاءُ بالنُّجُومِ، والنِّياحَةُ
“আমার উম্মতের মধ্যে চারটি জিনিস জাহেলিয়াতের কাজ যেগুলো তারা ছাড়বে না। বংশ আভিজাত্য নিয়ে গর্ব করা, অন্যের বংশকে দোষারোপ করা, তারকার সাহায্যে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং মানুষের মৃত্যুতে বিলাপ করা। [সহীহ মুসলিম, বিতাবুল জানাইয]
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিয়া সম্প্রদায়ের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।