আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে দাঈর আচরণ ও ভাষার ব্যবহার

দাওয়াতের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের গালাগালি, অহংকার, সত্য প্রত্যাখ্যান ও অন্যায় আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ইচ্ছেমত ধোলায় দেন আর মনের ঝাল মিটান তাই না? হ্যাঁ, এতে মনের ঝাল মিটবে ও রাগ প্রশমিত হবে..কিন্তু দাওয়াতি কাজ হবে না। এটা দাওয়াতের পদ্ধতি নয়। ‘শব্দ বোমা’ দ্বারা মানুষের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করা যায় কিন্তু কখনো তা জয় করা যায় না। তাই দাওয়াতের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক ও তির্যক বক্তব্য নয় বরং প্রয়োজন ভালবাসা ও আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ।

◍ আল্লাহ তাআলা কুরআনে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানবিক গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন এভাবে:
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّـهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
“আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রুক্ষ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো” (সূরা আল-ই ইমরান: ১৫৯)

◍ আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের মত পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ধত ও ‘সর্বোচ্চ রব’ বলে দাবী কারী ব্যক্তিটির কাছে আল্লাহর নবী মুসা ও তার ভাই হারুন আ. কে দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিচ্ছেন এভাবে:
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
“অতঃপর তোমরা তাকে নরম ভাষায় কথা বলো-হয়তবা সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।” [সূরা ত্ব-হা: ৪৪]

◍ আপনি দাওয়াতি কাজ করতে চান কিন্তু প্রতিপক্ষকে এমন ভাষায় কথা বলেন, যার কারণে সে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে-তাহলে শুনুন:
মা’মার বিন সোলাইমান বলেন, আমি আমার পিতা সোলাইমান (মৃত্যু: ১৪৩হি:) কে বলতে শুনেছি: “যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে রাগিয়ে দাও সে কখনো তোমার কথা শুনবে না।”
[আল আদাব আশ শারঈয়াহ, মাকদেসী ১/১৯৪]

◍ একটি প্রসিদ্ধ আরবি প্রবাদ বাক্য হল:
مَنْ لانَتْ كلِمَتُه وجبَتْ محبَّتُه
“যার ভাষা নম্র হয় তার প্রতি অপরিহার্য ভাবে ভালবাসা সৃষ্টি হয়।”

◍ বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, রাহবার এবং একজন দরদি ও সফল দাঈ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন:
” هذا العصر عصر الرفق والصبر والحكمة , وليس عصر الشدة . الناس أكثرهم في جهل , في غفلة إيثار للدنيا ,
فلا بد من الصبر , ولا بد من الرفق حتى تصل الدعوة , وحتى يبلغ الناس وحتى يعلموا . ونسأل الله للجميع الهداية . ”
“বর্তমান যুগ হল, নম্রতা, ধৈর্য এবং প্রজ্ঞার যুগ; কঠোরতার যুগ নয়। অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞতা, অবহেলা ও পার্থিব স্বার্থপরতায় ডুবে রয়েছে।
অতএব অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে, অবশ্যই নম্র ব্যবহার করতে হবে যেন দাওয়াত পৌঁছে যায়..যেন মানুষের কাছে (আল্লাহর দীন) পৌঁছানো যায়..যেন মানুষ (সঠিক দীন) জানতে পারে।
আল্লাহর নিকট সকলের জন্য হেদায়েত প্রার্থনা করছি।” [মাজমু ফতোয়া/ফতোয়া সমগ্র, ৮/৩৭৬]
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।