আমীন/আমিন শব্দের প্রকৃত অর্থ

প্রশ্ন: আমি কোন একটা ব্লগে পড়েছি ‘আমীন’ অর্থ বিশ্বস্ত। তাহলে আমরা দুআ-মুনাজাত শেষে যে ‘আমীন’ বলি তা কতোটা সঠিক হচ্ছে?
উত্তর:
দুআ-মুনাজাত শেষে যে ‘আ-মীন’ آمـين বলা হয় তার অর্থ: (হে আল্লাহ, তুমি) কবুল করো, ডাকে সাড়া দাও ইত্যাদি। যেমন: আরবি অভিধানে লেখা হয়েছে:
آمِينُ: (اسم) اِسْمُ فِعْلِ أمْرٍ مَبْنِيّ عَلَى الفَتْحِ بِمَعْنَى اِسْتَجِبْ

◍ আর হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যখন ইমাম সাহেব “আমীন” বলবেন তখন তোমরাও “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৭৮০; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৪১০; আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৩৬; তিরমিযী, হাদিস নং ২৩২]

◍ অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«إِذَا قَالَ الْإِمَامُ (غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ) فَقُولُوا آمِينَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْـمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যখন ইমাম সাহেব غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
[সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৭৮২; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৪১০; আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৩৫।]

◍ আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে তিনি আমাদেরকে সালাত ও সুন্নত শিক্ষা দিয়েছেন তিনি তাঁর খুৎবায় বলেন,

«إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّـرُوا وَإِذَا قَالَ : (غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ) فَقُولُوا آمِينَ يُجِبْكُمْ الله».

“যখন তোমরা সালাত আদায় করতে যাবে তখন তোমরা সালাতের সারিগুলো সোজা করে নিবে অতঃপর তোমাদের মধ্যকার যে কোনও একজন ইমামতি করবেন। যখন তিনি “আল্লাহু আকবার” বলবেন তখন তোমরাও “আল্লাহু আকবার” বলবে। আর যখন তিনি
غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
“গায়রিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায যাল্লীন” বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে-তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৪০৪; আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৭২]

❑ আমিন/আমীন শব্দের আরবি বানান, উচ্চারণ ও প্রয়োগের পার্থক্যের কারণে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ:
যখন “আ-মীন” এর আলিফকে মাদ্দ সহকারে ( লম্বা করে টেনে) পড়া হবে তখন তার অর্থ কবুল করা (যেমনটি আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি)। কিন্তু মাদ্দ ছাড়া পড়লে তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের অর্থ প্রকাশ করে। যেমন:

● আমীন أمين বা আল আমীন الأمين অর্থ: বিশ্বস্ত, আস্থা ভাজন, সৎ।
এ কথা প্রসিদ্ধ যে, নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে যুবক বয়সে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘আল আমিন’ বা বিশ্বস্ত বলে সম্বোধন করা হত।

● আল আমীন অর্থ: নিরাপদ, শান্তিময়। আল্লাহ তাআলা মক্কা নগরীকে ‘নিরাপদ বা শান্তিময় নগরী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন,
وَهَٰذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ
“এবং (শপথ) এই নিরাপদ নগরীর।” [সূরা ত্বী-ন: ৩]

● এ শব্দটি ভূমি জরিপকারী ও কর্মচারী অর্থেও ব্যবহৃত হয়। (বাংলা ব্যবহারিক অভিধান-বাংলা একাডেমি)
● আমিন অর্থ: সচিব, সেক্রেটারি, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (আরবি-বাংলা অভিধান-ফজলুর রাহমান)

এর পরে অন্য শব্দ যুক্ত করে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

● আমীনুস সানদুক أمـــين الصــندوق অর্থ: ক্যাশিয়ার।
● আমিনুল মাকতাবাহ أمـــين المكتبـــة অর্থ: লাইব্রেরিয়ান।
● আল আমীনুল আম الأمـــين العام অর্থ: সাধারণ সম্পাদক ইত্যাদি।
মোটকথা, বানান এবং ব্যবহারের পার্থক্যের কারণে এই শব্দটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।