আজানের সময় দুনিয়াবি কথা বললে কালিমা নসিব হবে না। এ কথা কি সঠিক?

প্রশ্ন: “আজানের সময় কথা বললে মৃত্যুর আগে কালিমা নসিব হবে না।” এ হাদিস কি সহিহ?
উত্তর:
এটি ভিত্তিহীন কথা এবং হাদিসের নামে মিথ্যাচার। এমন কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ করা জায়েজ নাই। বরং সঠিক কথা হল, মুয়াজ্জিন যখন আজান দেয় তখন প্রয়োজনবোধে শ্রোতা কথা বলতে পারে। তবে বিন দরকারে অযথা কথা না বলাই ভালো। কেননা, এতে ভালোভাবে আজান শোনা ও তার জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যমনস্কতা সৃষ্টি করবে। তাছাড়া আশে-পাশে অন্যান্য লোকজন থাকলে আপনার উচ্চ আওয়াজের কথাবার্তা তাদের আজান শোনা ও জবাব দেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা ঘটাবে। সুতরাং এ অবস্থায় জরুরি কল এলে বা কারও সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার দরকার থাকলে একটু দূরে গিয়ে নিচু স্বরে প্রয়োজন সারতে কোনও আপত্তি নেই। এ সময় সম্ভব হলে কথার মাঝেও আজানের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা উচিত। এমন কি যদি কথাবার্তা বলতে বলতে আজান শেষ হয়ে যায় তবে ছুটে যাওয়া বাক্যগুলোর জবাব দেয়া জায়েজ আছে যদি আজানের পর বেশি সময় অতিবাহিত না হয়।

◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজানের সময় প্রয়োজনীয় কথা বলেছেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُغِيْرُ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ وَكَانَ يَسْتَمِعُ الْأَذَانَ فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا أَمْسَكَ وَإِلاَّ أَغَارَ فَسَمِعَ رَجُلاً يَقُوْلُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْفِطْرَةِ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجْتَ مِنَ النَّارِ فَنَظَرُوْا فَإِذَا هُوَ رَاعِيْ مِعْزًى-

আনাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের সময় শত্রুদের প্রতি আক্রমণ চালাতেন এবং আজান শোনার জন্য কান পেতে থাকতেন। যদি আজান শুনতেন তাহলে আক্রমণ হতে বিরত থাকতেন। অন্যথায় আক্রমণ চালাতেন।
একদা এক ব্যক্তিকে ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু’ আকবার বলতে শুনলে তিনি বললেন, “তুমি স্বভাব ধর্ম ইসলামের উপর আছে।” অতঃপর লোকটি বলল, ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তখন তিনি বললেন, “তুম জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করলে।”
অতঃপর সাহাবীগণ সেই মুয়াজ্জিনের দিকে লক্ষ্য করলেন, দেখলেন সে হল, একজন মেষ পালক।” [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬০; বাংলা মিশকাত হা/৬০৯]

এ হাদিসে দেখা গেল, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজানের সময় “তুমি স্বভাব ধর্ম ইসলামের উপর আছো।”, “তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করলে।” এ কথাগুলো বলেছেন।

◈ এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস:

عَنْ ثَعْلَبَةَ بْنِ أَبِي مَالِكٍ الْقُرَظِيِّ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُمْ كَانُوا فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ يُصَلُّونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَخْرُجَ عُمَرُ فَإِذَا خَرَجَ عُمَرُ وَجَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَأَذَّنَ الْمُؤَذِّنُونَ قَالَ ثَعْلَبَةُ جَلَسْنَا نَتَحَدَّثُ فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُونَ وَقَامَ عُمَرُ يَخْطُبُ أَنْصَتْنَا فَلَمْ يَتَكَلَّمْ مِنَّا أَحَدٌ ৩৪৪-قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَخُرُوجُ الْإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلَاةَ وَكَلَامُهُ يَقْطَعُ الْكَلَامَ

ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত, (সালাবা) তাঁর নিকট বর্ণনা করেন যে, উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে জুম’আর দিন তাঁরা উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) আগমন করা পর্যন্ত নামায আদায় করতেন। উমর (রাঃ) আগমন করতেন এবং মেম্বরে বসতেন এবং মুয়াজ্জিনগণ আজান দিতেন। সালাবা রাহ. বলেছেন, আমরা তখনও পরস্পর কথাবার্তা বলতাম, মুয়াজ্জিনগণ যখন আজান শেষ করতেন এবং উমর (রাঃ) খুতবা পাঠ করার জন্য দাঁড়াতেন, তখন আমরা চুপ হয়ে যেতাম।
অতঃপর পরে কেউ কোন কথা বলত না।
ইবনে শিহাব রাহ. বলেছেন, (এতে বোঝা গেল) ইমামের আগমন নামাযকে নিষিদ্ধ করে দেয় এবং তাঁর কালাম (খুতবা) কথাবার্তাকে নিষিদ্ধ করে দেয়। (হাদিসটি ইমাম মালিক রাহ. একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

উপরোক্ত হাদিস দ্বয় থেকে প্রমাণিত হল, কেউ যদি আজানের সময় দুনিয়াবি কথাবার্তা বলে তাহলে তাকে হারাম বলা যাবে না। যদিও বিনা দরকারে কথা না বলাই ভালো। বরং এ সময় কর্তব্য হল, আজান শোনা এবং তার জবাব দেয়া।
সুতরাং “আজানের সময় কথা বললে মৃত্যুর আগে তার কালেমা নসিব হবে না।” এ কথাটি মানুষের বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা প্রমাণিত হল।

বানোয়াট ও হাদিসের নামে প্রচলিত মিথ্যা ও বানোয়াট হাদিস বর্ণনা ও প্রচারের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অন্যথায় তার পরিণত অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ”

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপর মিথ্যা রোপ করল (মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করল), সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা করে নিলো।” [সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: নবীদের হাদিস, হাদিস নং ৩২৭৪]
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।