আখেরি চাহার শোম্বা

প্রশ্ন: আখেরি চাহার শোম্বা কী? এ দিন কি বিশেষ কোনও ইবাদত-বন্দেগি বা বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ একটি আরবি ও ফার্সি শব্দ-যুগল। এর আরবি অংশ আখেরি। যার অর্থ, শেষ এবং ফার্সি অংশ চাহার শোম্বা। যার অর্থ, বুধবার। হিজরি সালের সফর মাসের শেষ বুধবারকে ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ হিসেবে পালিত হয়।
এর কারণ কী:
প্রসিদ্ধি আছে যে, ১১ হিজরির শুরুতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। ২৮ সফর বুধবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্থ হয়ে ওঠেন। দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিন কিছুটা সুস্থ বোধ করায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসল করেন এবং শেষবারের মত নামাজে ইমামতি করেন। মদিনাবাসী এই খবরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলে এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে (রবিউল আউয়াল মাসে) ইন্তেকাল করেন। এজন্য মুসলমানেরা এই দিনে তাঁর সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন। এটাকেই ‘আখেরি চাহার শোম্বা বা শেষ বুধবার’ বলা হয়। দিবসটি মূলত: ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসাবে পালিত হয়; যাতে সাধারণত: গোসল করে দু রাকাত শোকরানা-নফল নামাজ আদায় শেষে রোগ থেকে মুক্তির দোয়া ও দান-খয়রাত করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, দরবার, খানকায় ওয়াজ-নসিহত, জিকির-আজকার, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় এই দিনটি পালন উপলক্ষে। এদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে বন্ধ রাখার পাশাপাশি অফিস-আদালতে ঐচ্ছিকভাবে ছুটির দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। [সূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে]। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক ও আলেমে দ্বীন ডক্টর শাইখ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. বলেন, “আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেও কোন সহীহ বা জয়ীফ হাদিসে এই ঘটনার কোনো প্রকার উল্লেখ পাইনি। হাদিস তো দুরের কথা কোন ইতিহাস বা জীবনী গ্রন্থেও আমি এ ঘটনার কোন উল্লেখ পাইনি। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোন মুসলিম সমাজে ‘সফর মাসে শেষ বুধবার’ পালনের রেওয়াজ বা এই কাহিনী প্রচলিত আছে বলে আমার জানা নেই।” [সূত্র: হাদিসের নামে জালিয়াতি]।

মোটকথা, আখেরি চাহার শোম্বা বা সফর মাসের শেষ বুধবারকে ঘটা করে পালন করার ব্যাপারে হাদিসে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। এ দিন বিশেষ কোন নামাজ, রোজা, দান-সদকা, গোসল ইত্যাদি করার ব্যাপারে কোন সহিহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং বিভিন্ন বানোয়াট কথার উপরে ভিত্তি করে আমাদের সমাজে এ সকল বিদআত প্রচলিত হয়েছে। আর এ কথা প্রসিদ্ধ যে, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি। আর প্রতিটি গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।