অর্থ-সম্পদ চুরির হাত থেকে রক্ষার দুআ, আমল ও করণীয়

প্রশ্ন: “কোনও জিনিসের উপর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলে সেই জিনিসটা আর চুরি হয় না অর্থাৎ নিরাপদে থাকে।” হাদিসের আলোকে এ কথার কোনও ভিত্তি আছে কী? বা চুরি থেকে বাঁচার জন্য হাদিস সম্মত কোনও আমল আছে কি?
উত্তর:
“কোনও জিনিসের উপর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলে সেই জিনিসটা আর চুরি হয় না অর্থাৎ নিরাপদে থাকে” এ কথা হাদিস সম্মত নয়। চুরি রোধ করার জন্য কুরআন-হাদিসে বিশেষ কোনও দুআ ও আমল বর্ণিত হয় নি। কেউ যদি চুরি প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কেবল দুআ পড়ে সম্পদ নিরাপদ রাখার চিন্তা করে তাহলে তা নি:সন্দেহে ভুল। বরং অর্থ-সম্পদকে চুরির হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। (শেষে এ বিষয়ে কিছু আধুনিক কৌশল ও আইডিয়া উল্লেখ করা হয়েছে)। যদিও আমাদের এ জন্য কিছু আমল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সেগুলোর ভিত্তি নেই। যেমন: আল্লাহর নাম ‘আল-হাসিবু’ এর জিকির করা, ওজু অবস্থায় কুরআনের বিশেষ কিছু আয়াত পাঠ করে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা ঘরের চারপাশে, দরজা-কপাট, মানিব্যাগ বা যে সম্পদকে চুরি থেকে রক্ষা করা উদ্দেশ্য তার উপর ছিটিয়ে দেয়া বা জিনিসটির উপর ফুঁ দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো সব ভিত্তিহীন ও অকার্যকর আমল-শরিয়তে যেগুলোর কোনও অনুমোদন নেই।

◯ আয়াতুল কুরসি শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে:

এ বিষয়ে হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে তা হল, কেউ যদি আয়াতুল কুরসি পাঠ করে মহান আল্লাহ তাকে এবং তার ঘরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করেন। অর্থাৎ শয়তান তার উপর বা তার ঘরে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না।

এ মর্মে বিস্তারিত হাদিসটি নিম্নরূপ:

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানের যাকাতের অর্থ-সম্পদ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োগ করলেন।

(দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়ার পর এক রাতে দেখলাম) এক ব্যক্তি এসে আঁজলা ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্ত, আমার জিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজনও খুব বেশি। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম।

সকাল হলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
হে আবু হুরায়রা, তোমার রাতের বন্দীকে কী করলে?
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বললেন, শুনো, সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে আবারও আসবে।

‘সে আবারও আসবে’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথার কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকতে লাগলাম। অবশেষে সে এলো এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল।
আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকাল হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা, তোমার বন্দী কী করল?
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, শুনে রাখ, সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে।

তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে এবারও ধরে ফেললাম। অত:পর বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব। এ হল তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেকবার বল যে, আর আসবে না কিন্তু আবার আস!

তখন সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব-যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন।

আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ) আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তাহলে আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্যে একজন রক্ষক (ফেরেশতা) নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।

কাজেই তাকে আমি ছেড়ে দিলাম।

ভোর হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, গত রাতের তোমার বন্দী কী করল?
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে আমাকে বলল যে, সে আমাকে কয়েকটি এমন বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি আমাকে বললেন, সে বাক্যগুলো কী?
আমি বললাম, সে আমাকে বলেছে, যখন তুমি তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ)প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। সে আমাকে এও বলেছে যে, “এতে আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক (ফেরেশতা) নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না।”

সাহাবিগণ ভালো কিছু শেখার জন্য বিশেষ লালায়িত ছিলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاَثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ
“হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে। কিন্তু, সে একজন চরম মিথ্যাবাদী। হে আবু হুরায়রা! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে?
আবু হুরায়রা রা. বললেন, না।
তিনি বললেন, ذَاكَ شَيْطَانٌ “সে ছিল শয়তান।”

[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ৪০/ ওয়াকালাহ (প্রতিনিধিত্ব), পরিচ্ছেদ: ৪০/১০. যদি কেউ কোন লোককে প্রতিনিধি নিয়োগ করে এবং ঐ প্রতিনিধি কোন কিছু বাদ দেয় অতঃপর প্রতিনিধি নিয়োগকারী তা অনুমোদন করে তবে এটা বৈধ। আর প্রতিনিধি যদি নির্দিষ্ট মেয়াদে কাউকে ধার প্রদান করে তবে তা বৈধ।]

❑ চোর-ডাকাত থেকে বাঁচার জন্য কী করণীয়?

এই ১০ উপায়ে আপনার বাড়ি রাখুন চোর-ডাকাত মুক্ত:

ঘর যেমন শান্তির জায়গা, তেমনি মূল্যবান জিনিষপত্রও ঘরেই রাখা হয়। বেশিরভাগ মানুষ ঘর সাজাতে বেশি গুরুত্ব দিলেও নিরাপত্তা নিয়ে ততটা মাথা ঘামান না। একটি তালা লাগিয়ে কিংবা ডোর লক অন করেই বাইরে ছোটে অনেকে। কিন্তু ফ্ল্যাট হোক বা বাড়ি- আজকাল কিছু ক্ষণের জন্য বাইরে গেলেও ঘরের নিরাপত্তা বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। জানালা-দরজার ফ্রেম বাছার সময় অনেক সময় নিরাপত্তার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায় অনেক বাড়িতেই। নিচের কয়েকটি বিষয়ে সচেতন হলেই চোর-ডাকাত থেকে রক্ষা পেতে পারে আপনার বাসস্থান।

১. সচেতনতার অন্যতম ধাপ হিসেবে বাড়িতে ভালো মানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে নিতে পারেন। আজকাল ম্যামরি স্টোর করে রাখার জন্য ম্যামরি কার্ড পাওয়া যায়। সঙ্গে চালু রাখুন বাড়ির ইন্টারনেট। ফলে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, বাড়ির ভিতরে কী ঘটছে, সে দিকে নজর রাখতে পারবেন ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত মোবাইলের মাধ্যমেই।

২. লকারে রাখার পরেও বাড়িতে কিছু অতিরিক্ত হালকা অলঙ্কার ও নথি থেকেই যায়। সে ক্ষেত্রে সেফটি বক্সের শরণ নিতে পারেন। মেটালিক ভারী চেহারার এবং নম্বর লক করা সেফটি বক্স বাজারে পাওয়া যায়। সেফটি বক্সের মধ্যে সে সব রেখে বাড়ির কোনও গোপন জায়গায় রেখে দিন বক্সটি।
৩. নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হোন। দরজার লক হিসেবে ‘আই কন্টাক্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করুন। তাহলে দরজার তালা ভেঙে কারও প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে তার দরজা ভাঙা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। তালা ভাঙার চেয়ে দরজা ভাঙা বেশি কষ্টসাধ্য এবং এতে শব্দও হবে অনেক বেশি।
৪. বাড়ির দরজা-জানালা নির্মাণের সময় মোটা ও ভারী কাঠ ব্যবহার করুন।
৫. আগুন লেগে গিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা উড়িয়ে দেবেন না। তাই ঘরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন। বাড়ির আর্থিং ঠিক আছে কিনা যেমন দেখতে হবে, তেমনই শর্ট সার্কিট এড়াতেও গ্রহণ করতে হবে জরুরি পদক্ষেপ। আজকাল খুব সামান্য শর্ট সার্কিটেই বাড়ির বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন সার্কিট আজকাল সহজেই মেলে বাজারে।
৬. গ্যাসের বার্নার, সিলিন্ডার এগুলো প্রতি দিন রান্না ঘর থেকে বেরনোর আগে দেখে যান। গ্যাস ও সিলিন্ডার ব্যবহারের ভুলে অনেক সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
৭. মেইন সুইচ এমন জায়গায় করুন যেখানে সহজেই পৌঁছানো যায় ও নাগাল পাওয়া যায়। দরকারে মেইন সুইচ বন্ধ করতে যেন দেরি না হয়।
৮. বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে প্রতি দরজায় একটু ভারী ও দামি তালা ব্যবহার করুন। দরজায় লাগান ইন্টার লক।
৯. রাজ্য প্রশাসনের মতে, বাড়ির কোনও কাজে কাউকে নিয়োগ করলে তার বিস্তারিত খোঁজখবর নিন এবং তার ছবি-জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।
১০. কয়েক দিনের জন্য কোথাও বেড়াতে গেলে চেষ্টা করুন ঘর বন্ধ না রেখে কোনও আত্মীয় বা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে রাখতে। একান্ত তা সম্ভব না হলে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মীদের সংস্থা থেকে কাউকে নিয়োগ করে যান ও স্থানীয় থানায় জানিয়ে যান।
[source: kalerkantho]
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।