“আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল ব্যয় করা পৃথিবী ও তার মধ্যস্থিত সব কিছু হতে কল্যাণকর” এ হাদিসে ‘আল্লাহর পথ’ বলতে কী উদ্দেশ্য?
প্রশ্ন: “আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল ব্যয় করা পৃথিবী ও তার মধ্যস্থিত সব কিছু হতে কল্যাণকর”-এ হাদিসে ‘আল্লাহর পথ’ বলতে কী উদ্দেশ্য? এটি কি দ্বীনের যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
উত্তর: আনাস রা. হতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا
“আল্লাহ তাআলার পথে এক সকাল অথবা এক বিকাল ব্যয় করা অবশ্যই পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।” [সুনানে তিরমিজী (তাহকীক কৃত), অধ্যায়: ২০/ জিহাদের ফজিলত, অনুচ্ছেদ: ১৭. আল্লাহ তাআলার পথে এক সকাল ও এক বিকাল ব্যয় করার সওয়াব]
দ্বীনের কাজে সময় দেওয়া অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ কাজ। এতে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু উক্ত হাদিসে বর্ণিত এত বড় মর্যাদা সাধারণ কোনও দ্বীনের কাজের জন্য নয়। বরং তা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য। পূর্ণাঙ্গ হাদিস দেখলে জিহাদের বিষয়টি ফুটে উঠে। পূর্ণ হাদিসটি নিম্নরূপ:
সাহল ইবনে সাদ রা. হতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَرَوْحَةٌ يَرُوحُهَا الْعَبْدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ لَغَدْوَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
“আল্লাহ তাআলার পথে এক দিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী ও তার মধ্যকার (উপরের) সব কিছু হতে উত্তম। (জিহাদের মাঠে) বান্দার এক বিকাল অথবা এক সকালের ব্যয় পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে কল্যাণকর। [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৮/ জি**হাদ, পরিচ্ছেদ: ১৮১৩. আল্লাহর রাস্তায় একদিন প্রহরারত থাকার ফজিলত। মহান আল্লাহর বাণী:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং অপরকেও ধৈর্যে উৎসাহিত কর এবং (প্রতিরক্ষায়) সদা প্রস্তুত থাক…আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরা আলে ইমরান: ২০০) [সুনানে তিরমিজি (তাহকিক কৃত), অধ্যায়: ২০/ জিহাদের ফজিলত, পরিচ্ছেদ: ২৬. আল্লাহর পথে পাহারা দানের সওয়াব]”
◈ সহিহ বুখারির ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি বলেন,
الرباط ملازمة المكان الذي بين المسلمين والكفار لحراسة المسلمين
“মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যবর্তী এলাকায় মুসলিমদের রক্ষায় নিয়োজিত থাকাকে রিবাত (رباط) বলা হয়।”
◈ তাছাড়া লক্ষ্য করুন, ইমাম বুখারি ও ইমাম তিরমিজি রাহ. এ হাদিসটিকে জিহাদ অধ্যায়ে এবং মুসলিমদেরকে রক্ষার জন্য প্রহরার মর্যাদার অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসগণও তাই করেছেন।
◈ আল্লামা বিন বায রাহ. উপরোক্ত দুটি সহ মোট তিনটি হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
فهذه الأحاديث الثلاثة كلها تتعلق بالجهاد، والجهاد كما تقدم فضله عظيم ودرجة أهله عالية، وهو الجهاد في سبيل الله لإظهار دينه ودعوة الناس إلى سبيله وإلزامهم بالحق، فهو سبيل لإظهار الإسلام ونشره بين الناس وإلزام الناس بالحق وإخراجهم من الظلمات إلى النور، فلهذا كان فضله عظيمًا ودرجات أهله عالية
”এই তিনটি হাদিস সবই জিহাদের সাথে সম্পর্কিত। আর জিহাদের ফজিলত সুবিশাল এবং এর অধিকারী তথা মুজাহিদগণের মর্যাদা সুউচ্চ। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হলো, আল্লাহর দ্বীনের বিজয়, মানুষকে তাঁর পথে আহ্বান এবং তাদেরকে সত্যে গ্রহণে বাধ্য করার জন্য। এটি ইসলামের প্রকাশ এবং মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি মাধ্যম। এটি মানুষকে সত্য অনুসরণে বাধ্য করার এবং তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি উপায়। এই কারণেই এর ফজিলত সুবিশাল এবং এর অধিকারী তথা মুজাহিদদের মর্যাদা সুউচ্চ।”
সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম নওয়াবি রাহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের কথাই বলেছেন। তিনি বলেন,
، والظاهر أنه لا يختص ذلك بالغدو والرواح من بلدته ، بل يحصل هذا الثواب بكل غدوة أو روحة في طريقه إلى الغزو ، وكذا بغدوة وروحة في موضع القتال ؛ لأن الجميع يسمى غدوة وروحة في سبيل الله
সুতরাং এটিকে সাধারণ দ্বীনের মেহনত, দাওয়াত-তাবলিগ, তালিম ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ঠিক নয়-যেমনটি আমাদের দেশের তাবলীগ জামাত সহ বিভিন্ন ফিরকার লোকেরা করে থাকে। এমনটি করা হলে তা হবে হাদিসের অপব্যাখ্যা। হ্যাঁ, আল্লাহ দাওয়াতি কাজের মর্যাদা অপরিসীম। সে বিষয়ে বহু হাদিস রয়েছে। আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।