নিম্নে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে এমন চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো যেগুলো একজন শাসকের মধ্যে বিদ্যমান থাকলে সে একদিকে যেমন দেশের সাধারণ মানুষের নিকট নিকৃষ্ট শাসক ও ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয় অন্যদিকে সে আল্লাহর নিকটও লাঞ্ছিত-অপদস্ত এবং অভিশাপ যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এমনকি জাহান্নামেরও হকদার হয়ে যায়।সেগুলো হলো:
❂ ১. যে শাসককে জনগণ ঘৃণা করে ও তার প্রতি অভিশাপ দেয় এবং সেও তাই করে:
প্রখ্যাত সাহাবি আওফ ইবনে মালিক আশজাঈ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে,
خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ ” . قَالُوا قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ نُنَابِذُهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ قَالَ ” لاَ مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ لاَ مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ أَلاَ مَنْ وَلِيَ عَلَيْهِ وَالٍ فَرَآهُ يَأْتِي شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِي مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ ”
“তোমাদের সর্বোত্তম শাসক হচ্ছে তারা, যারা তোমাদেরকে ভালোবাসে ও তোমরাও তাদেরকে ভালোবাসো এবং তোমরা তাদের জন্য দুআ কর ও তারাও তোমাদের জন্য দুআ করে।
আর তোমাদের নিকৃষ্ট শাসক হচ্ছে তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর, তোমাদেরকেও তারা ঘৃণা করে এবং তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও ও তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়।
সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রসুল, এ সময় আমরা কি তাদেরকে প্রতিহত করবো না?
তিনি বললেন, না, যে যাবত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে। তবে যার উপর কোন শাসক নিয়োগ করা হবে আর সে তাকে আল্লাহর কোন নাফরমানি করতে দেখবে তখন ঐ শাসক যতক্ষণ আল্লাহর নাফরমানিতে থাকবে ততক্ষণ তাকে ঘৃণা করতে থাকবে কিন্তু আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেবে না।”
এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইবনে জাবের রাহ. বলেন, বর্ণনাকারী জুরাইক যখন এ হাদিস আমার কাছে বর্ণনা করছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু মিকদাম, আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, সত্যিই কি আপনি মুসলিম ইবনে কারাজাকে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, আওফ ইবনে মালিক রা. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে হুবহু এ রকম বলতে শুনেছেন?
বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি তার দু হাঁটুর উপর ভর করে কিবলা মুখী হয়ে বসে পড়লেন এবং বললেন, সেই আল্লাহর কসম করে বলছি, যিনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই আমি অবশ্যই মুসলিম ইবনে কারাজাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি আওফ রা. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ৩৪। প্রশাসন ও নেতৃত্ব, পরিচ্ছেদ: ১৭. উত্তম শাসক ও নিকৃষ্ট শাসক। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বার: ৪৬৫২, ইসলামিক সেন্টার হাদিস নাম্বার: ৪৬৫৪]
❂ ২. যে শাসককে জনগণ অপছন্দ করে:
আবু উমামা রা. হতে বর্ণনা আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ تُجَاوِزُ صَلاَتُهُمْ آذَانَهُمُ الْعَبْدُ الآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ
“তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কানের নিচে অতিক্রম করে না (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট কবুল হয় না)। তারা হলো:
ক. যে দাস তার মালিক থেকে পালিয়ে যায় যে পর্যন্ত সে তার নিকট ফিরে না আসে।
খ. যে মহিলা এমন অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে যে তার স্বামী তার উপর রাগান্বিত ছিল।
গ. এবং যে ইমামকে তার কওমের লোকেরা অপছন্দ করে।”
[সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), অধ্যায়: ২/ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত নামাজ বিষয়ক হাদিস, পরিচ্ছেদ: ১৫৪. লোকজনের অসন্তোষ সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করা]
আলেমগণ এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য অত্যাচারী-অনাচারী ও পাপিষ্ঠ শাসক। অর্থাৎ এরাই সর্ব প্রথম উক্ত হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে। তারপর অন্তর্ভুক্ত হবে নামাজের ইমামগণ। [islamweb]
❂ ৩. যে শাসক জনগণের সাথে নির্দয় আচরণ করে:
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ ”
“হে আল্লাহ, যে আমার উম্মতের বিষয়ে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠিন আচরণ করে তুমি তার প্রতি কঠিন আচরণ করো আর যে আমার উম্মতের বিষয়ে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি নম্র ও সদয় আচরণ করে তুমি তার প্রতি নম্র ও সদয় আচরণ করো।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) , ৩৪/ রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসন, পরিচ্ছেদ: ৫. ন্যায়পরায়ণ শাসকের ফজিলত ও জালেম শাসকের শাস্তি। শাসিতদের প্রতি নম্রতা অবলম্বন ও কঠোরতা বর্জন]
❂ ৪. যে শাসক জনগণের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করে:
মাকেল ইবনে ইয়াসার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে,
مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
“আল্লাহ তাআলা যে বান্দাকে জনগণের দায়িত্ব (নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব) দিয়েছেন কিন্তু যদি তাদের সাথে প্রতারণা ও খেয়ানত করে এবং এ অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১/ কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৬২. জনগণের সঙ্গে খিয়ানত কারী শাসক জাহান্নামের যোগ্য]
আল্লাহ তাআলা আমাদের শাসকদেরকে হেদায়েত করুন অথবা তাদের থেকে জাতিকে মুক্তি দান করুন। আমিন।▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।