স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ

উত্তর: বিষয়টি সামাজিক রীতিনীতি, ভদ্রতা এবং প্রচলনের উপর নির্ভরশীল। যে সমাজে এটিকে অসম্মানজনক মনে করা হয় না সেখানে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু যেখানে এটিকে সম্মানহানি ও বেয়াদবি মনে করা হয় সেখানে তা করা উচিত নয়।

আমাদের ভারত উপমহাদেশে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়। সুতরাং এখানে স্বামীকে নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। কেননা স্ত্রীর কর্তব্য, স্বামীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা এবং এমন আচরণ না করা যাতে তার সম্মানহানি হয়। অন্যথায় তাদের মাঝে মনোমালিন্য এবং দাম্পত্য জীবনে কুপ্রভাব পড়তে পারে।

তাছাড়া সাধারণ ভদ্রতা হল, মানুষকে এমন শব্দ প্রয়োগে সম্বোধন করা যাতে সে খুশি হয়। বিশেষ করে দাম্পত্য জীবনে এটাই ভালবাসার দাবী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অবশ্য স্বামী যদি এতে মনে কষ্ট না পায় বা নিজের সম্মানহানি মনে না করে তাহলে নাম ধরে ডাকায় কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।

যেমন বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহর রসুল ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রী হাজের এবং শিশু পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে ডাকলেন এভাবে:

يَا إِبْرَاهِيمُ أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الْوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ ؟

“হে ইবরাহিম, তুমি আমাদেরকে এমন জনমানবহীন উপত্যকায় রেখে কোথায় যাচ্ছ?” [সহিহ বুখারী]

এছাড়া বিভিন্ন দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন রয়েছে।

সুতরাং এ বিষয়ে সামাজিক নিয়ম-নীতি, সম্মান ও ভদ্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।

কিন্তু আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোনও স্ত্রী রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবারের জন্যও ‘হে আল্লাহর রসুল’, ’হে আল্লাহর নবী’ বা এ জাতীয় সম্মান জনক উপাধি ছাড়া ‘হে মুহাম্মদ’ বলে ডেকেছেন বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না।

তবে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁদের কেউ কেউ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম উচ্চারণ করেছেন।

যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি:

إنِّي لَأَعْرِفُ غَضَبَكِ ورِضَاكِ قالَتْ: قُلتُ: وكيفَ تَعْرِفُ ذَاكَ يا رَسولَ اللَّهِ؟ قالَ: إنَّكِ إذَا كُنْتِ رَاضِيَةً قُلْتِ: بَلَى ورَبِّ مُحَمَّدٍ، وإذَا كُنْتِ سَاخِطَةً قُلْتِ: لا ورَبِّ إبْرَاهِيمَ قالَتْ: قُلتُ: أجَلْ، لَسْتُ أُهَاجِرُ إلَّا اسْمَكَ

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি তোমার রাগ ও খুশি—উভয়টাই বুঝতে পারি।”

‘আয়েশা রা. বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি তা কীভাবে বুঝেন, হে আল্লাহর রসুল?”

তিনি বললেন, “যখন তুমি খুশি থাক তখন তুমি বলো ‘হ্যাঁ, মুহাম্মদের প্রতিপালকের কসম!’ আর যখন তুমি রাগান্বিত হও, তখন তুমি বলে থাকো ‘না, ইবরাহিমের প্রতিপালকের কসম!’”

‘আয়েশা রা. বললেন, “আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমি তো কেবল আপনার নামটি পরিহার করি।” [বুখারি]

❂ অনুরূপভাবে সাহাবিদের কোনও স্ত্রী তাদের স্বামীর নাম ধরে (হে আবু বকর, হে উমর, হে আলি, হে উসমান ইত্যাদি বলে) ডেকেছেন এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে প্রয়োজন বশতঃ স্বামীর নাম উচ্চারণ করেছেন তা প্রমাণিত হয়েছে।

যেমন জয়নব রা. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে তাঁর স্বামী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নাম ধরে কথা বলেছিলেন। [বুখারি, হা/১৪৬২]

আর নাম উচ্চারণ করা আর ডাকার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে।

❑ প্রশ্ন: কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে স্বামীর নাম মুখে নিয়ে কারো সাথে গল্প করে তাহলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর: যদি কোথাও স্বামীর নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে উচ্চারণ করতে কোন সমস্যা নেই। তবে বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে গল্প করার সময় তার নাম নিলেও সম্মানের সাথে নেয়া কর্তব্য। বার বার নাম উচ্চারণের ফলে মানুষের নিকট যেন তার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা হীনতা প্রকাশ না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: