স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পান করানোর বিধান

প্রশ্ন: কোনও নারী তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কোনও এতিম শিশুকে নিজের দুধ পান করাতে পারবেন কি?
উত্তর:
এ বিষয়ে আলেমগণ বলেছেন, স্ত্রী যদি বুঝতে পারে যে, তার স্বামী তা পছন্দ করবে না তাহলে তার সম্মতি ছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবে না। কারণ সে তার স্বামীর ভরণ-পোষণের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং তার স্তনের দুধ স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যকে দেয়া যাবে না। তাছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পান করানোর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর নিকট তার হক থেকে বঞ্চিত হবে। যেমন: দুগ্ধ দানে ব্যস্ততার কারণে সে সময় তাকে কাছে না পাওয়া বা সংসারের কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।

তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন অসহায় শিশুকে দুধ পান করানোর মত বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকে তাহলে জীবন রক্ষার্থে স্বামীর অনুমতি ছাড়াও দুধ পান করানো যাবে ইনশাআল্লাহ।

◆ ’যাদুল মুস্তাকনা’ শীর্ষক বিখ্যাত হাম্বলি ফিকাহের কিতাবে বলা হয়েছে,
وله منعها من إجارة نفسها ، ومن إرضاع ولدها من غيره إلا لضرورته .
”স্বামীর অধিকার আছে, স্ত্রীকে ভাড়া খাটা (অর্থের বিনিময়ে শ্রম দেয়া) এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পানের ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার।”
قال الشيخ ابن عثيمين رحمه الله في شرحه : ” ويكون هذا بأن تكون امرأة طلقها زوجها الأول وهي حامل ، فتنتهي العدة بوضع الحمل ويتزوجها آخر، وهي لا تزال ترضع الولد ، فللزوج الثاني أن يمنعها من إرضاع ولدها من الزوج الأول ، إلا في حالين :
الأولى : الضرورة ، بأن لا يقبل هذا الطفل ثديا غير ثدي أمه ، فيجب إنقاذه .
الثانية : أن تشترط ذلك على زوجها الثاني ، فإذا وافق لزمه ” انتهى من “الشرح الممتع” (12/ 426)

◆ ’রদ্দুল মুহতার’ শীর্ষক বিখ্যাত হানাফি ফিকাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যের বাচ্চাকে দুধ পান করানো জায়েজ নেই। হ্যাঁ, শিশুটি যদি দুধের তৃষ্ণায় ছটফট করতে থাকে এবং মারা যাবার আশংকা থাকে, তাহলে অনুমতি ছাড়াই দুধ পান করাতে পারবে।”

◯ উল্লেখ্য যে, কোনও নারী যদি অন্যের শিশুকে দু বছর বয়সের মধ্যে কমপক্ষে ৫ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করায় তাহলে দুগ্ধ পানকারী সন্তানের সাথে দুগ্ধ দান করিনি নারী, তার স্বামী ও সন্তানদের মাঝে মাহরামিয়াতের সম্পর্ক (বিয়ে নিষিদ্ধ) সাব্যস্ত হয়। (এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন নিম্নে প্রদত্ব লিংক থেকে)।

সুতরাং দুধ পান করালে সে ব্যাপারে সাক্ষ্য রাখা, লোকজনকে জানানো বা বিষয়টি স্পষ্টভাবে লিখিত রাখা জরুরি-যেন ভবিষ্যতে সম্পর্কগত হালাল-হারামের মত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও ধরণের অস্পষ্টতা বা সংশয় সৃষ্টি না হয়।
والواجب على النساء أن لا يرضعن كل صبي من غير ضرورة، وإذا أرضعن فليحفظن ذلك وليشهرنه ويكتبنه احتياطا اهـ
-الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) – دار الفكر-بيروت (3/ 212)
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: