ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মেনে চলা আবশ্যক। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমাদের সমাজে ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক অজ্ঞতা থাকার কারণে এমন কিছু ঘটনা সামনে আসে যা শুনলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এমনই একটি বিষয় হলো, স্ত্রী ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজি) বা বোনের মেয়ে (ভাগ্নি) কে বিয়ে করা। অর্থাৎ খালা বা ফুফু বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থা তার ভাতিজি বা ভাগ্নিকে, অনুরূপভাবে এই অবস্থায় স্ত্রীর খালা বা ফুফুকে বিয়ে করা।
➧ যাহোক, নিচে এ বিষয়ে শরিয়তের সঠিক মাসআলা তুলে ধরা হলো:
وبالله التوفيق
ইসলামের দৃষ্টিতে ইজমা বা সর্বসম্মতিক্রমে স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধন অটুট থাকা অবস্থায় তার ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজি) বা ভাগ্নি (বোনের মেয়ে)কে বিয়ে করা হারাম। অনুরূপভাবে স্ত্রীর খালা ও ফুফুকেও বিয়ে করা হারাম।
তবে স্ত্রী মারা গেলে বা সাথে তালাক সংঘটিত হলে ইদ্দত পালন শেষে বিয়েতে কোনও বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।
নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত। তিনি বলেন,
نَهَى النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم أنْ تُنْكَحَ المَرْأَةُ علَى عَمَّتِهَا، والمَرْأَةُ وخَالَتِهَا. فَنَرَى خَالَةَ أبِيهَا بتِلْكَ المَنْزِلَةِ لأنَّ عُرْوَةَ، حدَّثَني عن عَائِشَةَ، قالَتْ: حَرِّمُوا مِنَ الرَّضَاعَةِ ما يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ.
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও নারীর ওপর তার ফুফুকে বিয়ে করা এবং কোনও নারীর ওপর তার খালাকে বিয়ে করাকে নিষেধ করেছেন। আমরা (ফকিহগণ) মনে করি যে, পিতার খালাও এই একই মর্যাদায় (অর্থাৎ তাকে বিয়েও নিষিদ্ধ)। কারণ ‘উরওয়া আমাকে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: “তোমরা দুধসম্পর্কে সেটাকেই হারাম গণ্য করো, যেটা রক্ত সম্পর্কে হারাম।”
[সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫১১০ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১৪০৮]
❖ শিক্ষা:
– একসাথে একজন মহিলা এবং তার খালা/ফুফুকে বিয়ে করা হারাম।
– পিতার খালাকেও বিয়ে করা হারাম।
– দুধসম্পর্কে যেসব আত্মীয় হারাম, তাদের ওপরও রক্ত সম্পর্কের মতোই বিয়ের বিধান প্রযোজ্য।
❑ এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া:
◉ সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি বিশ্ববরেণ্য ফকিহ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়-
প্রশ্ন: মক্কা মুকাররমা থেকে এক পাঠক জানতে চেয়েছেন: একজন পুরুষ কি তার স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়েকে ( স্ত্রীর ভাতিজিকে) বিয়ে করতে পারে? উত্তরে তিনি বলেন,
لا يجوز للرجل أن يتزوج بنت أخي زوجته إذا كانت عمتها في عصمته، كما لا يجوز له أيضًا أن يتزوج بنت أخت زوجته، إذا كانت خالتها في عصمته؛ لأن النبي ﷺ: نهى أن يجمع الرجل بين المرأة وعمتها، وبين المرأة وخالتها.
وقد أجمع العلماء رحمهم الله على تحريم ذلك لهذا الحديث الصحيح. أما إن كانت العمة أو الخالة قد ماتت أو فارقها وخرجت من العدة، فإنه لا بأس أن يتزوج بنت أخيها أو بنت أختها؛ لعدم وجود الجمع حينئذ
“যদি স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়ে (অর্থাৎ স্ত্রীর ভাতিজি) এখনো সেই স্ত্রীই তার সংসারে থাকে, তাহলে তাকে বিয়ে করা জায়েজ নয়। একইভাবে স্ত্রীর বোনের মেয়েকেও (অর্থাৎ স্ত্রীর ভাগ্নিকে) বিয়ে করা নাজায়েজ যদি সেই সময় তার খালা অর্থাৎ স্ত্রীর সঙ্গে তার বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান থাকে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
لا يُجمَع بين المرأة وعمتها ولا بين المرأة وخالتها
“কোনও পুরুষ যেন একসাথে কোনও নারী ও তার ফুফু বা খালাকে বিবাহ না করে।” এই সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে উলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতভাবে একে হারাম বলেছেন। তবে যদি সেই স্ত্রী (যিনি ফুফু বা খালা) মারা যান কিংবা তালাক প্রাপ্ত হয়ে ইদ্দত শেষ হয়ে যায়, তাহলে তার ভাতিজি বা ভাগ্নিকে বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই। কেননা তখন আর ‘একসাথে বিয়ের নিষেধাজ্ঞা’ প্রযোজ্য থাকবে না।
[উৎস: মজমু ফাতাওয়া ওয়া মাকালাত” – শাইখ ইবনে বায (রহ.), খণ্ড ২১, পৃষ্ঠা ৮। প্রকাশ: মুসলিমুন পত্রিকা, সংখ্যা ৬০৭, তারিখ: ৮/৫/১৪১৭ হিজরি]
◉ বর্তমান জামানার আরেক দিকপাল বিশ্ববরেণ্য ফকিহ ইমাম মুহাম্মদ ইবন উসাইমিন (রাহ.)-কে প্রশ্ন করা হয়:
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি এক নারীকে বিয়ে করেছেন এবং তার ঘরে সন্তানও রয়েছে। এখন সে তার স্ত্রীর ভাগ্নিকে (স্ত্রীর বোনের মেয়ে) বিয়ে করতে চায়। এ অবস্থায় তা কি বৈধ? উত্তরে তিনি বলেন,
بنت الأخت تكون الأخت خالة لها وقد قال النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم ( لا يجمع بين المرأة وعمتها ولا بين المرأة وخالتها ) فلا يحل له أن يتزوج ببنت أخت زوجته ما دامت زوجته في عصمته ، أما إذا فارقها فماتت وتزوج بنت أختها فلا بأس ”
انتهى من ” فتاوى نور على الدرب ” (19/2)
স্ত্রীর বোনের মেয়ে তার (বর্তমান স্ত্রীর) ভাগ্নি হয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একসাথে নারী ও তার ফুফুকে এবং নারী ও তার খালাকে বিয়ে করা যাবে না।” সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত সেই স্ত্রী তার সংসারে আছে, ততক্ষণ তার ভাগ্নিকে (বোনের মেয়ে) বিয়ে করা নাজায়েজ। তবে যদি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকেন বা স্ত্রী মারা যান, তাহলে তার ইদ্দত শেষ হওয়ার পর স্ত্রীর ভাগ্নিকে বিয়ে করা জায়েজ। এতে কোনও দোষ নেই। [সূত্র: ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, খণ্ড: ১৯, পৃষ্ঠা: ২]
■ মোটকথা:
– স্ত্রী বিবাহবন্ধনে থাকলে তার ভাতিজি (ভাইয়ের মেয়ে) এবং ভাগ্নিকে (বোনের মেয়ে) বিয়ে করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে এই অবস্থায় স্ত্রীর খালা (তার মায়ের আপন বোন) এবং ফুফু (তার বাবার আপন বোন) কে বিয়ে করা হারাম।
– স্ত্রী মারা গেলে বা তালাক প্রাপ্ত হলে ইদ্দত পালন শেষে তাদেরকে বিয়ে করা জায়েজ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জন করে তদনুযায়ী আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোশিয়েশন, সৌদি আরব।