প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টির সেবা এবং পরোপকারের মর্যাদা কী? আর “সেবাই পরম ধর্ম” এ কথাটা কি হাদিস সম্মত?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিঃসন্দেহে মানুষের উপকার করা, রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করা, সমস্যা ও সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অভাবীর অভাব মোচন করা, বিপদগ্রস্তকে বিপদ-বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন করা ইত্যাদি ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও প্রশংসনীয় কাজ।
◈ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,
خيرُ الناسِ أنفعُهم للناسِ
“মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম তো সেই ব্যক্তি যে মানব কল্যাণে সর্বাধিক অগ্রগামী।” [সনদ হাসান-শাইখ আলবানি]
◈ অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنيَا نَفَّسَ الله عَنْهُ كُربَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ والله في عَونِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أخِيهِ
“যে ব্যক্তি কোন ইমানদার ব্যক্তির পার্থিব দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির জন্য (ঋণ পরিশোধকে) সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার (সকল বিষয়) সহজ করবেন। আর আল্লাহ তার বান্দাকে ততক্ষণ সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার মুমিন ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে।” [মুসলিম: ৭০২৮]
◈ তিনি আরও বলেন,
وَمَنْ كَانَ فِىْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার অভাব মোচনে সাহায্য করবেন।” [বুখারী ও মুসলিম]
◈ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي . قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي
“আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রূষা করো। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমি কী করে আপনার সেবা-শুশ্রূষা করব অথচ আপনি জগত সমূহের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল কিন্তু তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে।
হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমি কি করে তোমাকে আহার করাতে পারি! অথচ আপনি জগত সমূহের প্রতিপালক। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে।
হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমি কী করে আপনাকে পান করাব, অথচ আপনি জগত সমূহের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেতে।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪৭/ সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার, পরিচ্ছেদ: ১৩. রোগীর দেখা-শোনা ও সেবা-শুশ্রূষার ফযিলত]
শুধু মানুষ নয় পশু-পাখির সেবা করা, তাদের পরিচর্যা করা, তাদেরকে খাদ্য-পানীয় দেওয়া ইত্যাদি ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক বেশ্যা নারী পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে এবং আরেকজন বিড়ালের পরিচর্যার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে।
এ থেকে বুঝা গেল, আল্লাহর সৃষ্টি সেবা-শুশ্রূষা করা এবং নানাভাবে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। ইসলামে এতে মানুষকে উৎসাহিত করেছে। এ দৃষ্টিতে “সেবাই পরম ধর্ম” বলায় কোনো আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ। তবে কেউ যদি এ কথা দ্বারা বুঝাতে চায় যে, সেবা করাটাই একমাত্র ধর্ম বা ধর্মীয় কাজ; আর অন্য কিছু নয়- তাহলে নিঃসন্দেহে তা বাতিল ও ভ্রান্ত কথা।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।