প্রশ্ন: বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আটরশি পাক দরবার শরীফ, ফরিদপুর-এর এক মুফতি সাহেব নিম্নোক্ত পোস্টের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, সাহরির জন্য রোজাদারদেরকে ডাকাডাকি করা সুন্নত। নিম্নে তার পোস্টটি তার পেইজ থেকে হুবহু কপি-পেস্ট করা হল। তিনি লিখেছেন:
“সাহরীর সময় রোজাদারদের ডাকাডাকি করা সুন্নাত। কেননা স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই সাহরীর সময় সাহাবীদেরকে ডাকতেন মর্মে ছহীহ্ হাদিস বর্ণিত রয়েছে।
📖যেমন: ইমাম আবু বকর ইবনু আবী শায়বাহ রহ. বর্ণনা করেছেন,
عَنْ أَبِي رُهْمٍ السَّمَاعِيِّ, أَنَّهُ سَمِعَ عِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ , يَقُولُ: دَعَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ إلَى السَّحُورِ، فقَالَ: ” الْغَدَاءُ الْمُبَارَكُ ”
অর্থাৎ, আবু রুহম সামাঈ হতে বর্ণিত, নিশ্চয় তিনি হযরত ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়া রাদ্বি. কে বলতে শুনেছেন, রাসূলে পাক দঃ আমাদেরকে রমজান মাসে সাহরীর জন্য ডাকতেন এবং তিঁনি বলতেন: বরকতময় ভোররাত্র। (মুছান্নাফু ইবনু আবী শায়বাহ, হাদিস নং ৮৭২১)
📖ইমাম নাসাঈ ও ইমাম তাহাবী রহ. হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন,
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَدْعُو إِلَى السَّحُورِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ، فَقَالَ: ” هَلُمُّوا إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ ” .
অর্থাৎ, হযরত ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়া রাদ্বি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ দঃ কে বলতে শুনেছি, তিনি রমজান মাসে সাহরীর জন্য ডাকছেন এবং বলছেন: তোমরা বরকতময় ভোরের সাহরীর দিকে আসো।” (নাসাঈ: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ২৪৫৪; শারহু মুশকিলিল আসার, হাদিস নং ৪৮৪১)
📖ইমাম নাসাঈ রহ. আরেকটি হাদিস এভাবে বর্ণনা করেছেন,
عن خالد بن معدان قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم لرجل هلم الي الغداء المبارك يعنى السحور.
অর্থাৎ, হযরত খালিদ ইবনু মা’দান রাদ্বি. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম দঃ এক ব্যক্তিকে বললেন, বরকতময় ভোরের সাহরীর দিকে আসো।” (সুনানু নাসাঈ, হাদিস নং ২২৬৫)
📖ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম আহমাদ রহ. হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন,
عَنْ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ، قَالَ: دَعَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى السَّحُورِ فِي رَمَضَانَ، فَقَالَ: ” هَلُمَّ إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ ”
অর্থাৎ, হযরত ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়া রাদ্বি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে পাক দঃ আমাকে রমজান মাসে সাহরীর সময় ডেকে বললেন: বরকতময় ভোরের সাহরীর দিকে আসো।” (সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ২০০০; মুসনাদু আহমাদ, হাদিস নং ১৬৮১২; মুজামুল কবীর হাদিস নং ১৫০৫০)
📖ইমাম ইবনু খুজাইমা রহ. হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন,
عَنْ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو رَجُلا إِلَى السَّحُورِ, فَقَالَ: ” هَلُمَّ إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ ” . وَقَالَ الدَّوْرَقِيُّ, وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ هَاشِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَدْعُو إِلَى السَّحُورِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ، فَقَالَ: ” هَلُمَّ إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ ”
অর্থাৎ, হযরত ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়া রাদ্বি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক দঃ কে এক ব্যক্তিকে সাহরীর জন্য ডাকতে শুনেছি। দাওরাকী ও আব্দুল্লাহ ইবনু হাশিম বলেছেন: রাসূলে আকরাম দঃ কে বলতে শুনেছি, তিঁনি রমজান মাসে সাহরীর জন্য ডাকতেন ও বলতেন: তোমরা বরকতময় ভোরের সাহরীর দিকে আসো।” (ছহীহ্ ইবনু খুজাইমা, হাদিস নং ১৮৩৫)
💐সবগুলো সনদই ছহীহ্ ও শক্তিশালী। অতএব, প্রমাণিত হল, মাহে রমাদ্বানে ভোর রাতে বরকতময় সাহরীর জন্য ডাকাডাকি করা সুন্নাতে রাসূল ও ইবাদত। হযরত বিলাল রাঃ সাহরীর সময়ে আযানও দিতেন মর্মে ছহীহ্ বুখারীতে উল্লেখ আছে। তবে মাইকে অতিরিক্ত ডাকাডাকি না করে একটু সময়ের গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ডাকাডাকি করা উচিৎ।
🤲মহান আল্লাহ তা’আলা যেন সবাইকে সুন্নাতের অনুসারী আমল করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
✍️অধম- মুফ্তী মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জেহাদী
খাদেমঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আটরশি পাক দরবার শরীফ, ফরিদপুর।
প্রশ্ন হল, এ সকল হাদিসের আলোকে আমাদের সমাজে সেহরির জন্য গভীর রাতে যেভাবে মাইকে মানুষকে ডাকাডাকি করা হয় তা কি প্রমাণিত হয়? উক্ত হাদিসগুলোর ব্যাখ্যার আলোকে বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আমাদের সমাজে দেখা যায়, রমজান মাসে শেষ রাতে মুয়াজ্জিনগণ মাইকে কুরআন তেলাওয়াত, গজল, নাশিদ বা ইসলামি সঙ্গীত গায় অথবা এসব এবং একটু পরপর ডাকতে থাকেন, রোজাদার ভাই ও বোনেরা, উঠুন, সেহরির সময় হয়েছে, রান্নাবান্না করুন, খাওয়া-দাওয়া করুন, আর মাত্র ২ ঘণ্টা বাকি আছে, আর মাত্র ১ ঘণ্টা বাকি আছে ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তে এ ধরণের কার্যক্রম বৈধ নয় বরং তা বিদআত। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এ বিদআতকে সমর্থন করতে উক্ত লেখক এখানে হাদিসের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। হাদিসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে একটি বিদআতকে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন-যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
❑ এবার দেখা যাক, উক্ত হাদিসের মর্মার্থ কী? বা তা দ্বারা কী উদ্দেশ্য?
লেখক মূলত: একটি হাদিসকে বিভিন্ন কিতাব থেকে বারবার উল্লেখ করেছেন। সবগুলোতেই هَلُمُّوا/هَلُمَّ শব্দগুলো বারবার এসেছে। তাই এ শব্দটির প্রকৃত অর্থ উদঘাট করার মাধ্যমে হাদিসটির মর্মার্থ বুঝা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।
এখানে هَلُمَّ শব্দটির একবচন এবং هَلُمُّوا শব্দটি বহুবচন। এ অর্থ হল, “আসুন, আমাদের সাথে যুক্ত হন।” এটি تعال /تعالوا (আপনি/আপনারা আসুন, তুমি/তোমরা আসো, come) শব্দের সমার্থক। যেমন: আরবি অভিধানে বলা হয়েছে,
هَلُمَّ
1. كَلِمَةٌ مُرَكَّبَةٌ مِنْ “هَا” التَّنْبِيهِ وَمِنْ “لُمَّ” أَيْ ضُمَّ نَفْسَكَ إِلَيْنَا، وَالدُّعَاءُ إِلَى الْقِيَامِ بِشَيْءٍ مَّا بِمَعْنَى تَعَالَ، ( معجم الغني)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الْمُعَوِّقِينَ مِنكُمْ وَالْقَائِلِينَ لِإِخْوَانِهِمْ هَلُمَّ إِلَيْنَا
“আল্লাহ খুব জানেন তোমাদের মধ্যে কারা তোমাদেরকে বাধা দেয় এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, আমাদের কাছে এসো।” [সূরা আহযাব: ১৮]
এ শব্দটি এসো, চলো, আনো, এগিয়ে আসো, কাছে আসো ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
অতএব উক্ত হাদিসগুলোতে যা বলা হয়েছে তার মর্মার্থ হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে অবস্থানকারী সাহাবিদেরকে সেহরির খাবার খাওয়ার জন্য আহবান করতেন। যেমন: মুহাদ্দিসগণ এই বাক্যটির অর্থ লিখেছেন,
هَلُمُّوا إلى الغَداءِ المبارَكِ”، أي: اقتَرِبوا واطْعَموا مِنه
“তোমরা বরকতময় সাহরির দিকে আসো।” অর্থাৎ তোমরা কাছে আসো এবং খাবার খাও।” [dorar]
হাদিসগুলোর দিকে দেখলে বুঝা যায়, তিন কখনো একজন সাহাবিকে খাবারের জন্য ডেকেছেন আবার কখনো একাধিক সাহাবিকে ডেকেছেন। যেভাবে আমরা খাবার প্রস্তুত হলে উপস্থিত লোকজনকে খাবার গ্রহণের জন্য আহ্বান করে থাকি।
হাদিসের অর্থ এটা নয় যে, তিনি (মানুষকে ডাকাডাকি করার জন্য তৎকালীন আরবের রীতি অনুযায়ী) রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কিংবা উঁচু কোন স্থানে বা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার করে মানুষকে ঘুম থেকে জাগাতেন আর বলে বেড়াতেন যে, উঠুন, রান্নাবান্না করুন, আর এক ঘণ্টা সময় আছে, সাহরি খান… ইত্যাদি। নাউজুবিল্লাহ! হাদিসের মর্মার্থ ও উদ্দেশ্য মোটেও এটা নয়।
✪ ✪ হাদিসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে বিদআতকে প্রোমট করার চেষ্টা বিদআত করার চেয়েও বড় অপরাধ। হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সমাজে বিদআতি কার্যক্রমকে জায়েজ করার চেষ্টা চালানো অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। বরং প্রত্যেক সুন্নাহপন্থী আলেমের উপর অবশ্য কর্তব্য, সমাজকে কিভাবে বিদআতের পঙ্গিলতা থেকে মুক্ত করা যায় সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো। কারণ তারাই নবিদের ওয়ারিশ ও তাঁদের রেখে যাওয়া ইলমে ওয়াহির ধারক ও বাহক। কিন্তু পথভ্রষ্ট আলেমরা কখনো নবিদের ওয়ারিশ নয় বরং বিদআত ও গোমরাহি প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মূল হোতা-উপরোক্ত লেখকের এ লেখাটি তার বাস্তব উদাহরণ।
❑ এতে কী ক্ষতি হয়?
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবি, তাবেয়ীদের সোনালী যুগে এ ধরণের কার্যক্রমের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। অথচ আমাদের সমাজের মূর্খ মুয়াজ্জিন ও একশ্রেণির মৌসুমি বকধর্মীকরা মনে করে যে, এ সব কাজের মাধ্যমে তারা বিশাল সওয়াবের কাজ করছে।
মূলত: গভীর রাত থেকে মাইকে যেভাবে হাঁকডাক ও চিল্লাচিল্লি শুরু হয়, তা কোন ইসলামি রীতি-নীতি ও সভ্যতার মধ্যেই পড়ে না। এমনকি সাধারণ শিক্ষিত, সচেতন ও সভ্য সমাজেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
আমাদের অজানা নয় যে, রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদেরকে ডাকতে থাকেন। এটি দুআ কবুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই নেককার বান্দাগণ এ সময় উঠে ইবাদত-বন্দেগি করেন, সালাত আদায় করেন এবং নিভৃতে আল্লাহর জিকির-আজকার এবং দোয়া-মোনাজাতে লিপ্ত থাকেন। কিন্তু সমাজের এইসব অর্বাচীন মুয়াজ্জিন এবং অতি উৎসাহী বক ধার্মিকদের মাইকে চিল্লাচিল্লির কারণে তাদের ইবাদত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশু-বাচ্চারা এ কারণে ঘুম থেকে জেগে যায়, মুমূর্ষু, অতি বৃদ্ধ, মুসাফির, ঋতুমতী ও প্রসূতি নারী ইত্যাদি যাদের উপরে রোজা ফরজ নয় এমন ব্যক্তিদের আরাম এবং ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। অমুসলিমদের কাছে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। সর্বোপরি, এই বিদআতি কাজটি ভোররাতে আজানের সুন্নতের স্থান দখল করে বসেছে।
সুন্নত হচ্ছে, ফজরের আগে সাহরির জন্য আলাদা একটি আজান দেওয়া। এই আজান হল সাহরি খাওয়ার জন্য এবং তারপর ফজর সালাতের জন্য আরেকটি আজান দেওয়া। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে দু জন মুয়াজ্জিনও নিয়োগ করা ছিল। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
◆ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
« إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ »
“বেলাল রাতে আজান দেয়। অতএব তোমরা বেলালের আজান শুনলে পানাহার করতে থাক ইবনে উম্মে মাকতুম আজান দেওয়া পর্যন্ত।” [বুখারি, অনুচ্ছেদ: ফজরের আগে আজান দেওয়া। মুসলিম: অনুচ্ছেদ: ফজর উদিত হলে রোজা শুরু হবে…]
◆ সুনানে নাসাঈর হাদিসে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ لِيُوقِظَ نَائِمَكُمْ وَلِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ وَلَيْسَ أَنْ يَقُولَ هَكَذَا يَعْنِي فِي الصُّبْحِ
“বেলাল আজান দেয় এজন্য যে, যেন ঘুমন্ত লোক জাগ্রত হয় আর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ফিরে আসে অর্থাৎ নামাজ বাদ দেয় এবং সাহরি খায়।” সুতরাং এ দুটির বেশি কিছু করতে যাওয়া বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। এজন্যই ওলামাগণ বলেছেন, “যেখানে একটি সুন্নত উঠে যায় সেখানে একটি বিদআত স্থান করে নেয়।” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তাই। সুন্নত উঠে গিয়ে সেখানে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতি স্থান দখল করে নিয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় সুন্নতের দিকে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।
◈ ইবনুল হাজ আল মালিকি রাহ. [মৃত্যু: ১৩৩৬ খৃষ্টাব্দ] ভোররাতে সেহরির জন্য ডাকাডাকি প্রসঙ্গে যথার্থই বলেন,
وَيَنْهَى الْمُؤَذِّنِينَ عَمَّا أَحْدَثُوهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ مِنْ التَّسْحِيرِ ، لِأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَلَا أَمَرَ بِهِ ، وَلَمْ يَكُنْ مِنْ فِعْلِ مَنْ مَضَى، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي الِاتِّبَاعِ لَهُمْ كَمَا تَقَدَّمَ .
“মুয়াজ্জিনগণ রমজান মাসে সাহরির সময় মানুষকে ডাকাডাকি করার যে বিদআত চালু করেছে সে ব্যাপারে তাদেরকে নিষেধ করতে হবে। কারণ তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না। তিনি তার আদেশও করেননি। এটি অতীত লোকদের (সালাফদের) কাজও ছিল না। অথচ তাদের অনুসরণেই সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে-যেমনটি ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে।” [আল মাদখাল ২/২৫৩]
অতএব, বন্ধ হোক গভীর রাতে সেহরির জন্য হাঁকডাক, চিল্লাচিল্লি এবং নিষ্প্রয়োজনীয় মাইকের ব্যবহার। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।