প্রশ্ন: ভূমিকম্পের সময় সালাতের বিধান কী? এ সময় সালাত চলমান রাখা জরুরি নাকি সালাত ছেড়ে দেওয়া জায়েজ? অনুরূপভাবে ভয়াবহ বিপদের সময় জানমাল রক্ষা জন্য সালাত পরিত্যাগ করা কি বৈধ? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: শরিয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে সালাত শুরু করার পর তা ভঙ্গ করা জায়েজ নাই। এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত। কারণ
✪ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
“তোমরা তোমাদের আমলগুলো নষ্ট করো না।” [সূরা মুহাম্মদ: ৩৩]
তবে ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, অগ্নিকাণ্ড, প্রচণ্ড ঝড়, হিংস্রপ্রাণীর আক্রমণ ইত্যাদিতে জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে ফরজ অথবা নফল যে কোনও সালাত পরিত্যাগ করে জীবন বাঁচানো জায়েজ। এটি শরিয়ত সম্মত বৈধ কারণ। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা জায়েজ নাই।
✪ মহান আল্লাহ বলেন,
وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
“তোমারা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ কর না।” [সূরা বাকরা: ১৯৫]
হাদিসে সালাত রত অবস্থায় যদি সাপ-বিচ্ছুর আগমন ঘটে তাহলে সালাত পরিত্যাগ করে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন:
✪ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,
أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقَتْلِ الأَسْوَدَيْنِ فِي الصَّلاَةِ الْحَيَّةُ وَالْعَقْرَبُ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত অবস্থায়ও সাপ-বিচ্ছু হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।” [সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ২/ সালাত, পরিচ্ছেদ: সালাতে সাপ-বিচ্ছু হত্যা করা]
وجاء في كشاف القناع ويجب إنقاذ غريق ونحوه كحريق فيقطع الصلاة لذلك فرضاً كانت أو نفلاً، وظاهره ولو ضاق وقتها لأنه يمكن تداركها بالقضاء بخلاف الغريق ونحوه
❑ মানুষকে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করতে গিয়ে সালাত ছেড়ে দেওয়া বা সালাত কাজা করার বিধান:
মানুষকে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সালাত পরিত্যাগ করা, এমনকি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও সমস্যা নাই। কেননা ইসলামে মানুষের প্রাণ রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
✪ আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
“আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন সকল মানুষকে বাঁচালো।” [সূরা মায়িদাহ: ৩২]
✪ ইসলামের দৃষ্টিতে যদি কেউ খাদ্যাভাবে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তার জন্য বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হারাম খাবারকেও সাময়িকভাবে হালাল করে দেওয়া হয়েছে। [সূরা আনআম: ১৪৫]
◆ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ. বলেন,
إذَا رَأَى صَبِيَّيْنِ يَقْتَتِلَانِ ، يَتَخَوَّفُ أَنْ يُلْقِيَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ فِي الْبِئْرِ ، فَإِنَّهُ يَذْهَبُ
إلَيْهِمَا فَيُخَلِّصُهُمَا ، وَيَعُودُ فِي صَلَاتِهِ .
“(সালাতরত ব্যক্তি) যদি দেখে যে, দু জন শিশু মারামরিতে লিপ্ত হয়েছে এবং এ আশঙ্কা হয় যে, একজন অন্যজনকে কুপে নিক্ষেপ করবে তাহলে (সালাত পরিত্যাগ করে) তাদের নিকটে গিয়ে তাদেরকে রক্ষা করে পূণরায় সালাতে ফিরে আসবে।” [ আল মুগনি ৩/৯৭]
◆ ইমাম শাওকানি বলেন,
لا شك أن إنقاذ الغريق من أهم الواجبات على كل قادر على إنقاذه ، فإذا أخذ في إنقاذه ، فتعلق به حتى خشي على نفسه أن يغرق مثله : فليس عليه في هذه الحالة وجوب ، لا شرعا ، ولا عقلا، فيخلص نفسه منه ، ويدعه، سواء كان قد أشرف على النجاة أم لا، بل ظاهر قوله تعالى: ( وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ) [البقرة: 195]، أنه يجب عليه تخليص نفسه-(.. السيل الجرار المتدفق على حدائق الأزهار (ص: 892))
“নিঃসন্দেহে ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব (অবশ্যপালনীয়) এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু উদ্ধার করতে গিয়ে যদি আশঙ্কা থাকে যে, ডুবন্ত ব্যক্তি তাকে জাপটে ধরবে এবং সেও তার মতোই ডুবে মরবে তাহলে এই অবস্থায় তার জন্য এটি ওয়াজিব নয়। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেও নয় বা জ্ঞান-বুদ্ধির বিচারেও নয়। এই অবস্থায় সে তাকে ছেড়ে নিজেকে রক্ষা করবে। চাই তার বাঁচার সম্ভাবনা থাকুক অথবা না থাকুক। বরং মহান আল্লাহর বাণী:
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
“আর তোমরা নিজেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।” [সূরা বাকরা: ১৯৫]-এর প্রকাশ্য অর্থ এটাই যে, ডুবন্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে নিজেকে রক্ষা করা তার জন্য ওয়াজিব।” [আস সাইলুল জাররার,পৃষ্ঠা নং ৮৯২]
আল্লাহু আলাম।
◆ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
إذا وجد حادثًا، غرقًا أو حرقًا؛ تخشى منه على أولادك أو على المسلمين تقطعها وتساهم في إنقاذ المسلمين أو إنقاذ أهلك، ثم تعود إلى الصلاة تصلي تبدأ فيها من جديد
“যদি কোনও দুর্ঘটনা, ডুবে যাওয়া বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে যাতে আপনি আপনার সন্তান-সন্তুতি বা মুসলিমদের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করেন তাহলে সালাত ভঙ্গ করে মুসলিমদেরকে বা আপনার পরিবারকে রক্ষার কাজে অংশ গ্রহণ করুন। তারপর আপনি সালাতে ফিরে যান এবং নতুন করে শুরু করুন।” [binbaz]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।