সাফা ও মারওয়ায় সায়ির অতিরিক্ত চক্কর দেওয়ার বিধান

▪️সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রহ.
কে জনপ্রিয় ‘নূরুন আলাদ দারব’ শীর্ষক ইসলামি প্রশ্নোত্তর মূলক বেতার অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয় যে,

আমাদের এক ভাই বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি হজ ও ওমরা আদায় করেছি। কিন্তু আমি সাফা থেকে মারওয়ায় যেতাম এবং ফিরে আসতাম এটাকে এক চক্কর গণ্য করতাম। এভাবে আমি সাত চক্কর পূর্ণ করেছি। এই অতিরিক্ত অংশের কারণে কি কোনও সমস্যা হবে? দয়া করে আমাকে জানান। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর:

السعي صحيح والسبعة الزائدة لا تضرك، السعي المشروع من الصفا إلى المروة شوط والعودة من المروة إلى الصفا شوط ثاني وهكذا، فإذا سعى أربعة عشر فالمشروع منها سبعة والزائد لا يضره لأنه وقع خطأً منه وجهلًا منه فلا يضره

“আপনার সায়ি সহিহ হয়েছে এবং এই অতিরিক্ত সাত চক্কর আপনার কোনও ক্ষতি করবে না। শারিয়তের দৃষ্টিতে সঠিক পদ্ধতি হলো—সাফা থেকে মারওয়ায় যাওয়া এক চক্কর এবং মারওয়া থেকে সাফায় ফেরা আরেক চক্কর। এভাবে সাত চক্কর সম্পন্ন হয়। কিন্তু যদি কেউ ভুলবশত বা অজ্ঞতার কারণে চৌদ্দ চক্কর করে ফেলে, তাহলে তার কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল।

উপস্থাপক: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং কল্যাণ দান করুন।
[উৎস: binbaz–Org]

▪️ শাইখ ইবনে বাজ (রহিমাহুল্লাহ)-কে আরও জিজ্ঞাসা করা হয়,

আমি সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ি করেছি। কিন্তু আমি সাফা থেকে সাফায় ফিরে আসাকে এক চক্কর হিসেবে গণ্য করেছি। এতে কি আমার কোনও সমস্যা হবে?

শাইখ উত্তরে বলেন:

هذه زيادة منك ، فقد سعيت أربعة عشر شوطا والواجب سبعة ، والسبعة الأخرى لا تجوز ؛ لأنها خلاف الشرع ، لكنك معذور بالجهل ، وعليك التوبة إلى الله من ذلك ، وعدم العود إلى مثلها إذا حججت أو اعتمرت ؛ لأن الذي حصل به المقصود سبعة من الصفا للمروة ثم من المروة للصفا ، تبدأ بالصفا وتختم بالمروة ، سبعة أشواط

“এটি আপনার পক্ষ থেকে একটি অতিরিক্ত কাজ হয়েছে। আপনি মোট চৌদ্দ চক্কর সম্পন্ন করেছেন। অথচ ওয়াজিব হলো সাতটি। অতিরিক্ত সাতটি বৈধ নয়। কারণ এটি শরিয়তের বিধানের বিপরীত। তবে আপনি এটি অজ্ঞতার কারণে করেছেন, তাই আপনি এই ভুলের জন্য ক্ষমার যোগ্য। আপনাকে আল্লাহর দরবারে তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে, যখন হজ বা ওমরাহ করবেন, তখন এ ধরনের ভুল পুনরায় করা যাবে না। কারণ যথাযথ পদ্ধতি হলো—সাফা থেকে মারওয়ায় যাওয়া এক চক্কর এবং মারওয়া থেকে সাফায় ফেরা আরেক চক্কর। এভাবে সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় শেষ করে সাত চক্কর সম্পন্ন করতে হয়।”

[মাজমূ’ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৭/৩৪১-৩৪২]

উল্লেখ্য যে ইসলামে, শরিয়ত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করা হয়েছে। তাই যে কোন ইবাদতের পূর্বে অবশ্যই সে সম্পর্কে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে কিংবা আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে এবং জ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।

❑ সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ি করার সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি:

ওমরা আদায়ের ক্ষেত্রে কাবা ঘরে সাত চক্করের মাধ্যমে তওয়াফ সমাপ্ত করার পর করণীয় হলো, দু রাকাত সালাত আদায় করা করা। তারপর সাফা এবং মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝখানে সাত চক্কর দেওয়া। এটি ওয়াজিব।

নিম্নে এর সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:

১. সর্বপ্রথম কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করতে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করা:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ

উচ্চারণ: “ইন্নাস সাফা ওয়াল মার্‌ওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহি।”
অর্থ: “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা বাকারা: ১৫৮]

২. কিবলা মুখি হয়ে দাঁড়িয়ে তওহিদ, (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ), তাকবির (আল্লা-হু আকবার), তাহমিদ (আল হামদুলিল্লা-হ) ইত্যাদি পাঠ করা।
অতঃপর তিনবার বলবে:
لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ . لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وهَزَمَ الأحْزاَبَ وَحْدَهُ
উচ্চারণ:
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইউহ্-ইয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বদীর। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।
অর্থ:
“আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব কেবল তাঁরই। সমস্ত প্রশংসাও শুধুই তাঁর জন্য। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। আর তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং স্বীয় একক ক্ষমতাবলে শত্রুদের পরাজিত করেছেন।”
এরপর জানা যে কোন দুআ পাঠ করবে।
৩. সবুজ বাতি দ্বয়ের মধ্যবর্তী অংশে দৌড়ানো। (মহিলারা দৌড়াবে না।)
৪. সাফা-মারওয়া সায়ি করার সময় কোন দুআ নির্দিষ্ট না করে, জানা যে কোন দুআ পড়া।
৫. মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করা।
৬. সেখানেও সাফা পাহাড়ের ন্যায় দুআ করা।
৭. সাত বার সাফা-মারওয়া সাঈ করা। (রোকন)
৮. সাফা থেকে মারওয়া গমন ১ম চক্কর, মারওয়া থেকে সাফা প্রত্যাবর্তন ২য় চক্কর। এভাবে ৭ম চক্কর মারওয়ায় এসে শেষ করা।
প্রণয়নে: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল রাহ. কর্তৃক রচিত ‘সহজ উমরা নির্দেশিকা’

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

Share: