সফর সংক্রান্ত দশটি জরুরি মাসায়েল

প্রশ্ন: আমি জাহাজে চাকরি করি। আমি তো সব সময় এক জায়গা থাকি না। কিছুদিন পর পর এক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাই। তাহলে তো আমরা মুসাফির হিসেবে গণ্য হবো।
প্রশ্ন হল, মুসাফিরের জন্য নামাজ পড়ার নিয়ম কি? দয়া করে সফরে নামায-রোযা সংক্রান্ত জরুরি কিছু মাসআলা-মাসায়েল জানাবেন।

উত্তর:
নিম্নে অতি সংক্ষেপে সফর সংক্রান্ত দশটি জরুরি মাসায়েল পেশ করা হল:

●১. আপনি যদি আপনার এলাকা ছেড়ে সফরের দূরত্বে গমন করেন (একটি শক্তিশালী মত অনুযায়ী তা প্রায় ৮০ কিলোমিটার) তাহলে আপনি মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন।

সুতরাং আপনি যদি জাহাজে চাকরি করা অবস্থায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে বা দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করেন তাহলে আপনি এ পুরোটা সময় ‘মুসাফির’ হিসেবে গণ্য হবেন।

●২. অনুরূপভাবে উড়োজাহাজের পাইলট ও কেবিন ক্রু বৃন্দ, ট্রেনের চালক ও তার সহকর্মীরা, দূর পাল্লার বাস-ট্রাকের চালক ও তাদের স্টাফরা-যারা নিয়মিত দূর-দূরান্তে সফর করে-তারা এ সফরের পুরোটা সময় ‘মুসাফির’ হিসেবে গণ্য হবে।

● ৩. সফরে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো (যোহর, আসর ও ইশা) দু রাকাত করে আদায় করবেন। সুন্নতগুলো পড়বেন না। আর মাগরিব ও ফজর যথানিয়মেই তিন ও দু রাকআত আদায় করবেন।

● ৪. সফর অবস্থায় সুন্নত না পড়াটাই সুন্নত। কেবল বিতর এবং ফজরের দু রাকআত সুন্নত পড়া ভালো। পাশাপাশি যত খুশি নফল সালাত আদায় করা যায়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সফর অবস্থায় সুন্নত সালাতগুলো না পড়লেও উটের পিঠে বসে নফল সালাত আদায় করতেন।

● ৫. সফর অবস্থায় যোহর ও আসরকে এবং মাগরিব ও ইশাকে একসাথে (অগ্রীম বা পিছিয়ে) জমা করার সুযোগ আছে। কিন্তু আসর ও মাগরিবকে এবং ফজর ও যোহরকে, অনুরূপভাবে অধিক বিশুদ্ধ মতে জুমা ও আসরকে একসাথে জমা করা যাবে না।

● ৬. সম্ভব হলে ফরজ সালাত যানবাহন থেকে নেমে পড়াই উত্তম। তবে সম্ভব না হলে যানবাহনের মধ্যেই আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে, না হলে নিজ আসনে বসেই কিবলামূখী হয়ে সালাত শুরু করতে হবে। তারপর যানবাহন অন্য দিকে ঘুরলেও সলাত যথানিয়মে অব্যাহত রাখবে। কিবলার দিকে ঘুরার প্রয়োজন নাই।

● ৭. মুসাফিরদের জন্য জুমার সালাত আদায় করা ফরজ নয়। তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা উচিৎ যদি সুযোগ থাকে।
● ৮. সফর অবস্থায় মোজার উপর মাসেহ করার সময় সীমা তিন দিন ও তিন রাত বা ৭২ ঘণ্টা।
● কোন কারণে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া না গেলে বা পানি ব্যবহারে সমস্যা হলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে। অজু এবং ফরজ গোসল উভয় ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।
● ৯.সফর অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ আছে। তবে কষ্ট হলে রোজা না রাখাই উত্তম। আর কষ্ট না হলে রোজা রাখা উত্তম। সফর অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে সেগুলো কাজা করে নিতে হবে।
● ১০. আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের দুআ ফেরত দেন না বলে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছেে। তাই মুসাফিরের উচিৎ, বেশি পরিমাণে আল্লাহর নিকট দুআ করা।

দুআ করি, আল্লাহ আপনাকে সফর অবস্থায় সব ধরণের অনাকঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
———————
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

Share: