শাবান মাসে নফল রোজা রাখা সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কিত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হল:
❖ ১. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كان رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم يصوم حتى نقولَ: لا يُفطر، ويُفطر حتى نقول: لا يَصوم، فما رأيتُ رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم استكملَ صِيامَ شهرٍ إلاَّ رمضان، وما رأيتُه أكثرَ صيامًا منه في شعبان” (متفق عليه)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোজা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোজা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোজা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোজা করবেন না। তবে তাঁকে রমজান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।” [1]
❖ ২. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
« لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাজই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা স্বল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামাজ পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন। [2]
❖ ৩. উসামা বিন যায়দ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন,
ذاكَ شهرٌ يغفلُ الناسُ عنهُ بينَ رجبَ ورمضانَ وهو شهرٌ يُرفعُ فيهِ الأعمالُ إلى ربِّ العالمينَ فأُحِبُّ أن يُرفعَ عملي وأنا صائمٌ
“রজব এবং রমজানে মধ্যবর্তী এ মাস (শাবান মাস) সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে। অথচ (এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে,) এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই, রোজা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।” [3]
❖ ৪. কারো যদি রমজানের রোজা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাজা করে নিতে পারে। যেমন: আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রা. কে বলতে শুনেছি,
كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ ، فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ
“আমার রমজানের কিছু রোজা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।”[4] অর্থাৎ আয়েশা রা. গত রমজানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোজাগুলো শাবান মাসে কাজা করতেন।
টিকা:
[1] বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
[2] বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
[3] মুসনাদ আহমদ ৫ম খণ্ড ২০১ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম। আলবানী রা. বলেন, এ সনদটি হাসান। দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্। হাদিস নং ১৮৯৮।
[4] বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম। ইয়াহয়া বলেন, এর কারণ ছিল তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।
[আল বিদা’ আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত]
মহান আল্লাহ আমাদেরকে শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখার তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
অনুবাদ ও গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।