শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন

কথিত শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন:
(আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে)

সুপ্রিয় দীনী ভাই ও বোনেরা, প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর অবারিত নেয়ামত, মাগফিরাত ও রহমতের বারিধারায় সিক্ত করে জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করে নেন। আমিন।

প্রিয় বন্ধুগণ, অর্ধ শাবান বা কথিত শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানামুখী কথাবার্তায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ আজ মহাবিপাকে আছে। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। এ প্রেক্ষাপটে আমি আপনাদের সামনে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হব আর অপনোদন হবে কিছু ভুল বিশ্বাসের ইনশাআল্লাহ।

❑ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং এ ঘোষণা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে:

হে সত্যান্বেষী মুক্তিকামী ভাই, আপনি শবে বরাতের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কারণ আপনি আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে চান এবং চান আল্লাহ যেন আপনার দুআ কবুল করেন। মূলত: এটি প্রতিটি মুমিনেরই ঐকান্তিক প্রত্যাশা। তাই না?
কিন্তু আপনি জানেন কি আল্লাহর পক্ষ থেকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতি ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং তা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে। তবে শর্ত হল, শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং কারো প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ রাখা যাবে না।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা কেবল প্রতি বছরে একবার তথা অর্ধ শাবানের রাতেই পৃথিবী বাসীর প্রতি উঁকি দেন না বরং তিনি প্রতি রাতেই নিচের আসমানে নেমে এসে বান্দাদেরকে ক্ষমার জন্য আহ্বান করতে থাকেন! আল্লাহু আকবার!

অবাক হচ্ছেন? তাহলে পড়ুন নিন্মোক্ত হাদিস দুটি:

➤ ১. আবু হারায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ , فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا , إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ , فَيُقَالُ : أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا , أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا »

“সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, অতঃপর এমন প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোনও কিছুকে শরীক করে নি; তবে ঐ ব্যক্তি ক্ষমার বাইরে থাকে, যে ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ বা শত্রুতা রয়েছে; অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয়: তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, তোমরা এই দু’জনকে পরস্পরের মধ্যে মিলমিশ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।”

ইবনে আবাদাহ এর বর্ণনায় إِلاَّ الْمُتَهَاجِرَيْنِ আছে। আর কুতায়বা, রাহ. বলেছেন, إِلاَّ الْمُهْتَجِرَيْنِ (তবে সম্পর্ক পরিত্যাগকারী দুজনকে ক্ষমা করা হবে না)।
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ৪৭/ সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার, পরিচ্ছদ: শত্রুতা ও সম্পর্ক ত্যাগ করার নিষেধাজ্ঞা, হাদিস নম্বর: ৬৩১২]

➤ ২. আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে নেমে এসে বান্দাদেরকে ক্ষমার জন্য ডাকতে থাকেন। পড়ুন হাদিসটি:

প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ فَيَقُوْلُ مَن يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَّسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَن يَّسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ- وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْهُ: فَلاَ يَزَالُ كَذَالِكَ حَتَّى يُضِيْئَ الْفَجْرُ-

“আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? এভাবে তিনি ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহবান করেন।” [মুত্তাফাক্বুন ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২২৩, সালাত অধ্যায়-৪, রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দান। অনুচ্ছেদ-৩৩; মুসলিম হা/১৭৭৩]

❑ হাদিসদ্বয়ের শিক্ষা:

আমরা উক্ত হাদিসদ্বয় থেকে কী শিক্ষা পেলাম?

✪ ক. ১ম হাদিসের একটি শিক্ষা হল, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই শিরক থেকে মুক্ত হওয়া অপরিহার্য। এর কোন বিকল্প নাই।

যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম, গুণাবলী ও ইবাদতে অন্যকে অংশীদার করবে তাকে মুশরিক বলা হয়।

– সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কোন অলি-আউলিয়া, পীর-ফকির, জিন-ফেরশতা বা কোন অদৃশ্য শক্তির কাছে ক্ষমতা বহির্ভূত বিষয়ে বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাবে সে শিরক করবে।

– যে ব্যক্তি তাবিজ, কবজ, রিং, সুতা,ইত্যাদি ব্যবহার করবে বা গাছ, মাছ, পাথর ইত্যাদির নিকট মানত করবে বা সন্তান পাওয়া, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ ইত্যাদি সমস্যার জন্য এগুলোর কাছে ধর্না দিবে সে শিরক করবে।

– যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু যবেহ করবে বা মান্নত করবে সে শিরক করবে।

আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে কুরআন ও সহীহ হাদিসে বিভিন্ন স্থানে স্পষ্টভাবে সর্তক করেছেন।

সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই সকল প্রকার শিরক থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য এর কোন বিকল্প রাস্তা নাই।

✪ খ. ২য় শিক্ষা হল, বিদআত থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি আমাদের অন্তরকে পরস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করতে হবে।

ইমাম আওযাঈ রহ. বলেন, হাদিসে ‘বিদ্বেষ পোষণকারী’ বলতে সে সকল বিদআতপন্থীকে বুঝানো হয়েছে, যারা দ্বন্দ্ব-কলহ করে মুসলমানদের জামাআত থেকে বের হয়ে যায়।

সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে চাই তাহলে আমাদের অন্তরকে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করতে হবে। সেই সাথে বিদআত পরিহার করে মুসলিম জামাআতের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করতে হবে। কোনভাবেই বিদআতে লিপ্ত হয়ে মুসলিমদের জামাআত থেকে দুরে সরা যাবে না।

✪ গ. উক্ত হাদীসে প্রতি সোম ও বৃহষ্পতিবারে বিশেষ কোন আমল প্রমাণিত হয় না রোজা ছাড়া। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু দিন রোজা ছাড়া অন্য বিশেষ কোন আমল করেছেন বলে প্রমাণিত নয়। তাই কেউ যদি এ উপলক্ষে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হয় তাহলে তা বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আল্লাহু আলাম।

❑ অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ঘোষণার হাদিসটির অবস্থা কী?

এবার দেখি, যে সকল ভাই অর্ধ শাবানের রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত-বন্দেগির জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছেন তাদের দলিলটি সম্পর্কে।
শবে বরাত পালনের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদিসটি দলিল হিসেবে পেশ করা হয় (এটি হল, এ মতের লোকদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه ، إلا لمشرك أو مشاحن

“আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে উঁকি দিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” [ইবনে মাজাহ, সুনান ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: ইকমতে সালাত, হা/১৩৯০]

❖ হাদিসটির পর্যালোচনা:

উক্ত হাদিস সহীহ নাকি জঈফ এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। তবে আল্লামা আলবানী রহ. সহ একদল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে বিভিন্ন সনদের সমন্বয়ে হাসান/সহীহ বলেছেন। পক্ষান্তরে অন্য একদল মুহাদ্দিস এটিকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম বূসীরী রহ. তাঁর যাওয়াযেদ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে (২/১০) বলেন, আবু মুসার সনদে বর্ণিত উক্ত হাদিসটি জঈফ। কারণ এর সনদে দুটি সমস্যা রয়েছে:
– ক) আব্দুল্লাহ বিন লাহীআহ একজন সুপ্রসিদ্ধ জঈফ বর্ণনাকারী।
– খ) ওলীদ বিন মূসা তাদলীস করেছেন। (তাদলীস হাদিস জঈফ হওয়ার একটি
অন্যতম কারণ। বিস্তারিত: মুস্তালাহুল হাদিসের গ্রন্থাদি দ্রষ্টব্য)

উক্ত বর্ণনাটিকে আল্লামা আলবানী রহ.ও জঈফ বলেছেন। কিন্তু এ মর্মে বর্ণিত একাধিক হাদিসের সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত হাসান/সহীহ বলে সাব্যস্ত করেছেন। [দেখুন, সিলসিলা সহীহাহ মুখতাসারাহ: হাদিস নং ১৫৬৩]

❖ হাদিসের শিক্ষা:

উক্ত হাদিস থেকেও আমরা শিক্ষা পাই যে, আমরা যদি মহান রবের ক্ষমা লাভে ধন্য হতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে শিরক-বিদআত মুক্ত জীবন এবং মুসলিম জামাআতের সাথে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। হাদীসের মূল বক্তব্য এটাই।

তবে এখান থেকে কোনভাবেই অর্ধ শাবানে বিশেষ কোন ইবাদত প্রমাণিত হয় না। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামও এ রাতে বিশেষ কোন এবাদত করেন নি বা করতে বলেন নি। এ উপলক্ষে দিনে রোজা রাখা, কবর যিয়ারত করা বা রাতে ১০০ রাকাআত নামায আদায় করা ইত্যাদি সম্পর্কে যে সকল হাদিস পেশ করা হয় সেগুলো একটিও সহীহ নয়। কোনটি জঈফ আর কোনটি জাল। (আমার অন্য একটি লেখায় উক্ত হাদিসগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা রয়েছে)

সুতরাং উক্ত হাদিসকে কেন্দ্র করে শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিনে রোজা রাখা, রাতে একশ রাকাত নামায পড়া, মিলাদের আয়োজন করা, সম্মিলিত দুআ অনুষ্ঠান করা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি পালন করা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না যেভাবে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে কেবল রোজা ছাড়া অন্য কোন ইবাদত প্রমাণিত হয় না।

❑ সিদ্ধান্ত: কথিত শবে বরাত বা অর্ধ শাবানের রাতের চেয়ে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার অধিক গুরুত্বপূর্ণ:

উপরোক্ত আলোচনা থেকে অর্ধ শাবানের রাতের চেয়ে প্রতি প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ প্রমাণিত হলো।

কারণ সমূহ নিন্মরূপ:

❖ ১. প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহর পক্ষ থেকে মুশরিক ও বিদ্বেষী ব্যক্তি ছাড়া দুনিয়ার সকল মুসলিমের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ মর্মে হাদিসটি সহীহ মুসলিমের বিশুদ্ধ হাদিস। পক্ষান্তরে অর্ধ শাবানের রাতের ক্ষমার হাদিসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দ্বিমত রয়েছে।
❖ ২. এ দু দিন জান্নাতের দরজা সমূহ খোলা হয়। (যেমন উপরোল্লিখিত হাদিসটি) অথচ অর্ধ শাবানের ব্যাপারে এমন কোন হাদিসে বর্ণিত হয়নি।
❖ ৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু দিন নফল রোজা রাখতেন এবং রোজা রাখার জন্য তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। পক্ষান্তরে অর্ধ শাবানের ১৪ তারিখ দিনে রোজা রাখা এবং রাতে ইবাদত করার হাদিসটি জঈফ।
❖ ৪. সোমবারের দিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন।
❖ ৫. এই দিনেই তার উপর সর্বপ্রথম ওহি অবর্তীর্ণ হয়েছে।

যেমন নিম্নোক্ত হাদিস:

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: «فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»

আবু কাতাদা আল আনসারী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জবাবে বলেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী এসেছে। [মুসলিম-২/৮২০, হাদিস-১১৬২]

❖ ৬. সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে মানুষের আমলনামা পেশ করা হয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ»

“(মহান আল্লাহর নিকট) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমল সমূহ পেশ করা হয় আর আমি এটি ভালবাসি যে, আমার আমল সমূহ মহান আল্লাহ নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হবে, যে অবস্থায় আমি রোজাদার।” [তিরমিযী-৩/১১৩, হাদিস-৭৪৭, সহীহ-শাইখ আলবানী]

পক্ষান্তরে শাবান মাসে আল্লাহর নিকট বান্দার বার্ষিক আমল পেশ করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে অর্ধ শাবানের ব্যাপারে এমন কোন কথা আসে নি।
মোটকথা: আমরা যদি মহান আল্লাহর ঘোষিত ক্ষমা অর্জন করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে শিরক, বিদআত মুক্ত ইবাদত এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত সামাজিক জীবন গঠনে ব্রতী হবে। এটাই হোক আমাদের সকলের প্রত্যয় এবং প্রচেষ্টা। আল্লাহ সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
●●●●●●●●●●●●
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: