প্রশ্ন: হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাতের বেলা ১০০ আয়াত পাঠ করলে সারা রাত নফল নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হল, এই ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে আমরা নামাযে যে সব সুরা পাঠ করি সেগুলোও কি এর আওতাভুক্ত হবে নাকি নামাযের বাইরে আলাদা ভাবে তেলাওয়াত করতে হবে? বিষয়টি জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: প্রথমে আমরা এ মর্মে বর্ণিত দুটি হাদিস দেখবো।
❑ তামীম দারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قَالَ مَنْ قَرَأَ مِائَةَ آيَةٍ فِي لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قُنُوتُ لَيْلَةٍ
“যে ব্যক্তি এক রাতে একশ’টি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় ঐ রাতের ইবাদত বন্দেগী ও নফল নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।”
(আহমাদ ১৬৯৫৮, নাসাঈ কুবরা ১০৫৫৩, ত্বাবারানী ১২৩৮, দারেমী ৩৪৫০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৪৪)
❑ তিনি আরও বলেছেন,.
مَنْ قرأَ في ليلةٍ مِائةَ آيَةٍ لمْ يُكْتَبْ مِنَ الغَافِلِينَ أوْ كُتِبَ مِنَ القَانِتِينَ
“যে ব্যক্তি রাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করে তাকে গাফেলদের (অন্যমনস্ক, অমনোযোগীদের) মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে না। অথবা তাকে আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দাদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে।”
(ইমাম মুহাম্মদ বিন নাসর আল মারওয়াযী রহ. ক্বিয়ামুল লাইল, পৃ:৬৬; শাইখ আলবানী সিলসিলা সহীহাহ গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসে শাইখাইন তথা ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হা/৬৪৩)
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ে কেবল রাতের বেলা ১০০টি আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে। নামাযের ভিতরে না কি বাইরে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয় নি। তাহলে আশা করা যায়, নামাযের ভিতরেই হোক অথবা বাইরে হোক রাতে একশত আয়াত পড়া হলে উক্ত মর্যাদা লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন : উক্ত মর্যাদা লাভের জন্য কি রাতের সালাতে পড়া আবশ্যক?
উত্তর : কিছু হাদিসে রাতের সালাতের কথা উল্লেখ আছে। অর্থাৎ কেউ যদি রাত্রে নফল সালাতে ১০০ টি আয়াত পাঠ করে তাহলে সে এই মর্যাদা লাভ করবে। যেমনটি বলেছেন, ইমাম ইবনে হাজার সহ অন্যান্য আলেমগণ।
তবে কিছু হাদিসে সালাতের কথা উল্লেখ নেই। এ কারণে কিছু আলেমের মতে, সালাতের বাইরে পড়লেও এই মর্যাদা লাভ হবে। যেমনটি মিশকাতুল মাসাবিহ-এর ভাষ্যগ্রন্থ মিরআতুল মাফাতীহ (مرعاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح)-এর লেখক আল্লামা উবায়দুল্লাহ মোবারকপুরি ইমাম তীবীর সূত্রে এ মত উল্লেখ করেছেন।
وحاصله أن الحديث مطلق غير مقيد لا بصلاة ولا بليل، فينبغي أن يحمل على أدنى مراتبه، ويدل عليه قوله لم يكتب من الغافلين
সুতরাং এমতানুযায়ী যদি সালাতের বাইরেও আয়াতুল কুরসি, সূরাতুল ইখলাস, সূরাতুল ফালাক, সূরাতুন নাস, সুরাতুল মুলক ইত্যাদি পাঠ করে তাহলে এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে সালাতের মধ্যে পাঠ করা নিঃসন্দেহে আরও বেশি মর্যাদাপূর্ণ। এতে সালাতের মর্যাদার পাশাপাশি এই ১০০ আয়াত পাঠের মর্যাদা উভয়টি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলাম ওয়েবের ফতোয়ায় লেখা হয়েছে,
فإن المقصود يحصل بقراءة الآيات في الصلاة ـ سواء قرأها في ركعة واحدة أو أكثر ـ ويحتمل حصوله بمجرد التلاوة ـ ولو لم يكن في صلاة ـ لما في الحديث: من قرأ عشر آيات في ليلة لم يكتب من الغافلين. رواه الحاكم وقال صحيح على شرط مسلم، وقال فيه الألباني: صحيح لغيره.
ولكن الأولى أن يكون ذلك في الصلاة، لما في الحديث: من صلى في ليلة بمائة آية لم يكتب من الغافلين. رواه ابن خزيمة والحاكم وصححاه.
“উদ্দেশ্য হলো, উক্ত মর্যাদা লাভ হবে যদি তা সালাতে পড়া হয়। চাই এক রাকাতে পড়ুক কিংবা একাধিক রাকাতে পড়ুক। এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, কেবল তিলাওয়াতের মাধ্যমেই এই মর্যাদা অর্জিত হবে যদিও সালাতে না পড়ে। কেননা এক হাদিসে এসেছে,
من قرأ عشر آيات في ليلة لم يكتب من الغافلين
“যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে সে গাফিলদের দলভুক্ত হিসেবে নথিভুক্ত হবে না।”
[ইমাম হাকেম হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, সহিহ মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ। শাইখ আলবানি বলেন, সহিহ লিগাইরিহী।]
তবে উত্তম হলো, সালাতে পাঠ করা। কেননা অন্য হাদিসে এসেছে যে,
من صلى في ليلة بمائة آية لم يكتب من الغافلين
“যে ব্যক্তি রাতের সালাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করবে সে গাফিলদের মধ্যে নথিভুক্ত করা হবে না।”
[ইবনে খুযায়মা ও হাকেম। তারা উভয়েই হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।] আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❖❖❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।