লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: খর-তপ্ত জমিন। মানুষ-জন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, তৃণ-লতা সব কিছু একপশলা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে। হঠাৎ আকাশ জুড়ে শুরু হল মেঘের আনাগোনা। মুশলধারে বৃষ্টি বর্ষণ হল। প্রাণে প্রাণে জাগল জীবনের স্পন্দন। আবার কলকাকলিতে ভরে উঠল পৃথিবী। মাহে রমজানের উদাহরণ অনেকটা এমনই। পৃথিবী যখন পাপ-পঙ্গিলতায় ভারি হয়ে উঠে। গুমোট অস্থিরতায় সমগ্র পৃথিবী কাঁপতে থাকে। ঠিক এমন সময় আল্লাহ তাআলা মাহে রমজানকে উপহার হিসেবে দেন বিশ্ববাসীর নিকট। যেন তারা তাদের পেছনে ফেলে আসা পাপ-পঙ্কিলতায় সিয়াম, কিয়াম ও অন্যান্য নেকি অর্জনের মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে পারে। আল্লাহর অশেষ রহমতের বারি ধারায় সিক্ত হয়ে শুরু করতে পারে নতুন ভাবে পথ চলা।
প্রিয় ভাই, এই রমজান আমাদের মাঝে সমাগত। নিঃসন্দেহে রমজান মুসলমানদের জন্য এক বিরাট কল্যাণের মাস। এ মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা পালন করা ফরজ। এ রোজা ইসলামের ৫টি রোকন (স্তম্ভ) এর মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তাআলা এ মাসে মানব জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য মহা গ্রন্থ আল কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেছেন। এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হল, রমজানের শেষ দশকের কদরের রাত বা শবে কদর। কুরআন-সুন্নায় এ মাসের মর্যাদা এবং এতে ইবাদত-বন্দেগি করার ব্যাপারে অনেক আলোচনা এসেছে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসে আলোকে অতি গুরুত্ব পূর্ণ একটি আলোচনা উপস্থাপনা করা হল। শেষে রয়েছে রমজানকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে প্রচলিত কতিপয় বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ।
আসুন, আমরা রমজানের যথাযথ আদব রক্ষা করে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ তাআলার নিকট গুনাহ-খাতা মোচন করিয়ে নেই এবং সেই সাথে দু হাত ভরে উপার্জনের চেষ্টা করি পরকালের পাথেয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
❑ রমজান মাসের মর্যাদা ও রোজার গুরুত্ব
◆ ১. মুসলিমদের জন্য রমজানের রোজা রাখা ফরজ:
রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ হওয়ার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।” (সূরা বাকারা: ১৮৩)
◆ ২. রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ:
ক) আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمداً رسول الله ،وإقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، والحج، وصوم رمضان
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। লা ‘ইলা হা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত প্রদান করা, হজ্জ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা।[1]
খ) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের সামনে ছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান কী? তিনি উত্তরে বললেন,
الإيمان أن تؤمن بالله ، وملائكته ، وبلقائه ، ورسله، وتؤمن بالبعث
“ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর রসুলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কী? তিনি বললেন,
الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان
“ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর সাথে শিরক করবে না, নামাজ পড়বে, ফরজ জাকাত দিবে এবং রমজান মাসে রোজা রাখবে।”
লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান কী? তিনি বললেন,
أن تعبد الله كأنك تراه ، فإن لم تكن تراه فإنه يراك
“ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ মনোভাব রাখবে) যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন…।”[2]
গ) আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক বেদুইনের কথোপকথন:
তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক বেদুঈন আগমন করল। তার মাথার চুল ছিল উসকো-খুসকো। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসুল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কী পরিমাণ নামাজ ফরজ করেছেন? তিনি বললেন, “পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়তে পার।”
লোকটি বলল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কী পরিমাণ রোজা ফরজ করেছেন? তিনি বললেন, “রমজান মাসের রোজা। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল রোজা রাখতে পার।”
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কী পরিমাণ জাকাত ফরজ করেছেন?
বর্ণনাকারী বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন। অতঃপর লোকটি বলল, সে প্রভুর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর যা ফরজ করেছেন তা থেকে কোন কিছুই কমও করব না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সে সত্য বলে থাকলে সফল হবে।” অথবা তিনি বলছেন: “সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।”[3]
◆ ৩. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজান আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে: “যখন রমজান আগমন করে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়।”[4]
◆ ৪. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ছাড়া অন্য কখনো পুরো মাস রোজা রাখতেন না:
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ، ويفطر حتى نقول لا يصوم ، وما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان ، وما رايته أكثر صياماً منه في شعبان-متفق عليه
“রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নফল রোজা রাখা শুরু করলে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর রোজা বাদ দিবে না। আবার রোজা বন্ধ করলে আমরা ধারণা করতাম হয়ত তিনি আর রোজাই রাখবেন না। আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমজান ছাড়া অন্য কখনো সারা মাস ধরে রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসে তার চেয়ে বেশি আর কাউকে রোজা রাখতে দেখিনি।” [5]
◆ ৫. এক রমজান অন্য রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সংঘটিত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন,
الصلوات الخمس ، والجمعة إلى الجمعة ، ورمضان إلى رمضان ، مكفرات ما بينهن ، إذا اجتنب الكبائر
“পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মোচন হয়ে যাবে যদি কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) থেকে বেঁচে থাকা হয়।” [6]
◆ ৬. মাহে রমজানে মহাজাগতিক অভূতপূর্ব পরিবতর্ন:
إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن ، وغلقت أبواب النيران فلم يفتح منها باب ، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب ، وينادي مناد يا باغي الخير أقبل ، ويا باغي الشر أقصر ، والله عتقاء من النار وذلك كل ليلة
“রমজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান এবং উচ্ছৃঙ্খল জিনদেরকে শিকল বন্দী করে ফেলা হয়, জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়-যার একটিও খোলা রাখা হয় না এবং জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেওয়া হয়- যার একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আর এক আহ্বানকারী আহবান করতে থাকে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। হে অন্যায়-অপকর্ম কারী, বিরত হও। আর আল্লাহ তাআলা অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর তা রমজানের প্রতি রাতেই।” [7]
◆ ৭. একই বছরে রমজান এবং জিলহজ মাস একসাথে অপূর্ণ হবে না:
আবু বাকরা রা. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
شهران لا ينقصان ، شهر عيد : رمضان وذو الحجة
“দুটি মাস (একই বছরে) অপূর্ণ হবে না। সেগুলো হল: ঈদের দু মাস তথা রমজান এবং জিলহজ।” [8] অর্থাৎ এ দুটি মাস একই বছরে এক সাথে অসম্পূর্ণ হবে না। একটি ২৯ দিনে হলে অন্যটি অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। আরেকটি মত হল, হাদিসটির অর্থ এ দুটি মাসে আমলের সাওয়াব কম হবে না। [9]
❑ রমজান মাসে ইবাদত করার মর্যাদা:
◈ ১. রমজান মাসে রোজা রাখলে পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মোচন হয়ে যায়:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় শবে কদরে কিয়ামুল লায়ল করবে তার পূর্বে সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেওয়া হবে।” [10]
◈ ২. রমজান মাসে রোজা রাখা জান্নাতে প্রবেশের একটি বিরাট মাধ্যম:
ক) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। এক বেদুইন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা করলে আমি জান্নাতে যেতে পারব। তিনি বললেন,
تعبد الله لا تشرك به شيئاً ، وتقيم الصلاة المكتوبة ، وتؤدي الزكاة المفروضة ، وتصوم رمضان . قال : والذي نفسي بيده لا أزيد على هذا . فلما ولى قال النبي صلى الله عليه وسلم : من سره أن ينظر إلى رجل من أهل الجنة فلينظر إلى هذا
“আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কাউকে শরিক করবে না। ফরজ নামাজ আদায় করবে, ফরজ জাকাত দিবে, রমজানে রোজা রাখবে।” লোকটি বলল, ঐ স্বত্বার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ এর চেয়ে বেশি আমি কিছুই করব না। অত:পর লোকটি চলে গেলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেউ জান্নাতি লোক দেখতে চাইলে যে যেন এ লোকটিকে দেখে।” [11]
খ) মুআজ বিন জাবাল রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে ছিলাম। পথে চলতে চলতে আমি তাঁর নিকটে এসে পৌঁছলাম। এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর নবি, আমাকে এমন আমলের কথা বলুন যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে যেতে পারব এবং জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে পারব। তিনি বললেন,
لقد سألت عن عظيم وإنه ليسير على من يسره الله عليه، تعبد الله ولا تشرك به شيئاً، وتقيم الصلاة ، وتؤتي الزكاة، وتصوم رمضان، وتحج البيت
“তুমি অনেক বড় জিনিসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছ। তবে আল্লাহ তাআলা যার জন্যে সহজ করে দেন তার জন্য তা সহজ। আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে কোন কিছুকে শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে, রমজান মাসে রোজা রাখবে এবং কাবা ঘরের হজ্জ আদায় করবে… । [12]
◈ ৩. তারাবির নামাজ আদায় করা গুনাহ মাফের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায়:
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল বা তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত (ছোট) গুনাহ মোচন হয়ে যাবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
✪ তারবির নামাজ সম্পর্কিত কিছু কথা:
◆ ক. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ হওয়ার আশংকায় দুই বা তিন রাতের বেশি জামাতের সাথে আদায় করেননি:
উম্মুল মুমেনিন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একরাতে নামাজ আদায় করলেন। অন্যান্য লোকেরাও তার সাথে নামাজ আদায় করলেন। পরের রাতেও তিনি নামাজ পড়লেন। তাতে প্রচুর পরিমাণ লোকের সমাগম হল। অতঃপর তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে নামাজের জন্য লোকজন একত্রিত হল কিন্তু তিনি বাড়ি থেকে বের হলেন না। সকাল হলে তিনি বললেন,
« قَدْ رَأَيْتُ الَّذِى صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِى مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلاَّ أَنِّى خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ
“তোমরা রাতে যা করেছ তা আমি দেখেছি। কিন্তু এ নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যেতে পারে এ আশংকায় তোমাদের নিকট আসা হতে বিরত ছিলাম।” এটা ছিল রমজান মাসে। [13] অন্য বর্ণনায় রয়েছে: আর যদি এটা ফরজ করে দেওয়া হয় তবে তোমরা তা পালন করতে পারবে না।”[14]
◆ খ. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের নামাজ কত রাকাত কিভাবে পড়তেন?
আবু সালামা আব্দুর রাহমান উম্মুল মুমেনিন আয়েশা রা.কে জিজ্ঞেস করলেন: রমজান মাসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ কেমন ছিল? তিনি বললেন,
مَا كَانَ يَزِيدُ فِى رَمَضَانَ ، وَلاَ فِى غَيْرِه عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّى ثَلاَثًا
“তিনি রমজান বা অন্য কোন মাসে এগার রাকাতের বেশি নামাজ পড়তেন না। (দুই সালামে) চার রাকআত পড়তেন এত সুন্দর এবং দীর্ঘ করে সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস কর না। আবার চার রাকআত পড়তেন এত সুন্দর করে ও দীর্ঘ করে যে, সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস কর না। এর পর তিন রাকআত (বিতর) পড়তেন।” [15]
◆ গ. উমর রা.-এর যুগে পুনরায় জামাতবদ্ধভাবে তারাবিহ-এর নামাজ চালু হয়:
আব্দুর রাহমান বিন আব্দুল কাদেরি বলেন, রমজানের এক রাতে আমি উমর রা. এর সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে নামাজ পড়ছে। কেউ একাকী নামাজ আদায় করছে। কেউবা কয়েকজনকে নিয়ে জামাত করছে। এ অবস্থা দেখে উমর রা. বললেন, এ সমস্ত লোককে একজন কারীর পেছনে নামাজ পড়ার জন্য একত্রিত করা হলে তা হবে অতি উত্তম। অতঃপর তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এবং উবাই ইবনে কাব রা. এর পেছনে নামাজ পড়ার জন্য লোকজনকে একত্রিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
এরপর আর এক রাতে তাঁর সাথে বের হলাম। এ সময় লোকেরা তাদের উক্ত কারীর পেছনে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। এটা দেখে উমর রা. বললেন, “এ নতুন পদ্ধতিটি কত চমৎকার! যারা এখন ঘুমাচ্ছে (কিন্তু শেষ রাতে আদায় করবে) তারা এখন যারা পড়ছে তাদের চেয়ে উত্তম। এ সময় মানুষ প্রথম রাতেই কিয়ামুল লাইল করত।” [16]
❑ রমজানের শেষ দশক:
◈ ক) রমজানের শেষ দশকে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রী-পরিবার সহ রাত জেগে ইবাদত করতেন:
উম্মুল মুমেনিন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ
“রমজানের শেষ দশক প্রবেশ করলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে সারা রাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।” [17]
◈ খ) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত:
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহ তাআলা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু অবধী পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।” [18]
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেননি। তাই যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন। [19]
◈ লাইলাতুল কদর (শবে কদর)
লাইলাতুল কদর (শবে কদর) রমজানের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাতে হবে:
◆ ১. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত:
« تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর।”[20]
◆ ২. আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
« أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ
“আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেওয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।” [21]
◆ ৩. ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। কয়েকজন সাহাবি স্বপ্ন মারফত রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর হতে দেখেছেন। অতএব কেউ এ রাতটির সন্ধান পেতে চাইলে সে যেন রমজানের শেষ সাত দিনে তা খোঁজ করে।” [22]
➧ একটি মাসআলা: রমজানে সফরকারীর জন্য রোজা ভেঙ্গে ফেলা বৈধ:
ক. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে মক্কা (বিজয়ের উদ্দেশ্যে) বের হলেন। তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু কুদাইদ (মক্কা থেকে মদিনার দিকে ৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি স্থানের নাম) পৌঁছে রোজা ভেঙ্গে ফেললেন এবং তার সাথে যে সকল সাহাবি ছিলেন তারাও রোজা ভাঙ্গলেন। [23]
খ. আবুদ দারদা রা. বলেন, আমরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে কোন এক সফরে বের হলাম। সে দিনটি ছিল প্রচণ্ড গরম। প্রচণ্ড গরমের কারণে কেউ কেউ মাথায় হাত রাখছিল আর আমাদের মধ্যে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. ছাড়া কেউ রোজা ছিল না।” [24]
গ. আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (রমজান মাসে) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সফরে যেতাম। কিন্তু তিনি আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজা রাখত তাকে দোষারোপ করতেন না আবার যে ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গতেন তাকেও দোষারোপ করতেন না।” [25]
❑ রমজান মাসে কতিপয় বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যক্রম: (১০টি)
রমজান মাসে সমাজে একাধিক বিদআত প্রচলিত রয়েছে। যেগুলো এক জায়গায় এক রকম, অন্য জায়গায় আর এক রকম। এক দেশের লোকাচার অন্য দেশ থেকে ভিন্ন। নিম্নে আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত এ সংক্রান্ত কিছু বিদআতি কাজের চিত্র তুলে ধরব।
◈ ১) রমজানের নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে বিদআত:
রমজানের নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু লোক চাঁদের দিকে হাত উঁচু করে শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করে থাকে। এটা বিদআত। কেননা কুরআন-সুন্নায় এর কোন ভিত্তি নাই। তবে নতুন চাঁদ দেখলে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করা সুন্নত:
اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالإِيمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالإِسْلاَمِ رَبِّى وَرَبُّكَ اللَّهُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম। রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহ”। [26]
অর্থ: হে আল্লাহ, এ চাঁদকে আমাদের মাঝে বরকত, ঈমান, শান্তি-নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে উদিত কর। আমার ও তোমার রব আল্লাহ।”
◈ ২) সেহেরি সংক্রান্ত বিদআত:
দেখা যায়, রমজান মাসে শেষ রাতে মুয়াজ্জিনগণ মাইকে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত, গজল, ইসলামি সঙ্গীত ইত্যাদি গাওয়া শুরু করে। অথবা টেপ রেকর্ডার চালিয়ে বক্তাদের ওয়াজ, গজল বাজাতে থাকে। সেই সাথে অনবরত ডাকাডাকি চলতে থাকে: ভায়েরা আমার, বনেরা আমার, উঠুন, সেহরির সময় হয়েছে, রান্নাবান্না করুন, খাওয়া-দাওয়া করুন” ইত্যাদি। অথবা কোথাও বা কিছুক্ষণ পরপর উঁচু আওয়াজে হুইসেল বাজানো হয়।
এর থেকে আরও আজব কিছু আচরণ দেখা যায়। যেমন: এলাকার কিছু যুবক রমজানের শেষ রাতে মাইক নিয়ে এসে সম্মিলিত কণ্ঠে গজল বা কাওয়ালী গেয়ে মানুষের বাড়ির দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে চাঁদা আদায় করে। অথবা মাইক বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। এ ছাড়াও এলাকা ভেদে বিভিন্ন বেদাতি কার্যক্রম দেখা যায়।
আমাদের জানা উচিত, শেষ রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন। এটা দুআ কবুলের অন্যতম একটি সময়। আল্লাহ তাআলার নিকট এ সময় কেউ দুআ করলে তিনি তা কবুল করেন। মুমিন বান্দাগণ এ সময় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন, কুরআন তেলাওয়াত করেন, মহান আল্লাহ তাআলা তাআলা দরবারে রোনাজারি করে থাকেন।
সুতরাং এ সময় মাইক বাজিয়ে, গজল গেয়ে বা চাঁদা তুলে এ মূল্যবান সময়ে ইবাদতে বিঘ্নিত করা নিঃসন্দেহে গুনাহর কাজ। এতে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো হয়। যার ফলে অনেকের সেহরি এমনকি ফজরের নামাজ পর্যন্ত ছুটে যায়। এই কারণে অনেক রোজাদারগণ সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব না করে আগে ভাগে সেহরি শেষ করে দেয়। এ সবগুলোই গুনাহের কাজ।
➧ তাহলে আমাদেরকে জানতে হবে ক্ষেত্রে সুন্নত কী?
এ ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে, ফজরের আগে সেহরির জন্য আলাদা একটি আজান দেওয়া। এই আজান হল সেহরি খাওয়ার জন্য এবং তারপর ফজর সালাতের জন্য আরেকটি আজান দেওয়া। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে দু জন মুয়াজ্জিনও নিয়োগ করা ছিল। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
« إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ »
“বেলাল রাতে আজান দেয়। অতএব তোমরা বেলালের আজান শুনলে পানাহার করতে থাক ইবনে উম্মে মাকতুমের আজান দেওয়া পর্যন্ত।” [27]
সুনানে নাসাঈর হাদিসে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ لِيُوقِظَ نَائِمَكُمْ وَلِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ وَلَيْسَ أَنْ يَقُولَ هَكَذَا يَعْنِي فِي الصُّبْحِ
“বেলাল আজান দেয় এজন্য যে, যেন ঘুমন্ত লোক জাগ্রত হয় আর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ফিরে আসে অর্থাৎ নামাজ বাদ দেয় এবং সেহরি খায়।”
সুতরাং এ দুটির বেশি কিছু করতে যাওয়া বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। এজন্যই ওলামাগণ বলেছেন, “যেখানে একটি সুন্নত উঠে যায় সেখানে একটি বিদআত স্থান করে নেয়।” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তাই। সুন্নত উঠে গিয়ে সেখানে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতি স্থান দখল করে নিয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় সুন্নতের দিকে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে এলাকায় দুটি আজান দেওয়ার প্রচলন নেই সেখানে রমজান মাসে হঠাৎ করে দুটি আজান দেওয়া ঠিক নয়। কেননা, এতে মানুষের মাঝে সেহরি খাওয়া ও ফজর সালাতের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
◈ ৩) সেহেরি খাওয়ার সময় মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত:
সেহরি খাওয়া একটি ইবাদত। আর যে কোন ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত অপরিহার্য শর্ত। কারণ, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
« إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ »
সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহিহ বুখারি) তাই রোজা রাখার জন্য নিয়ত থাকা অপরিহার্য। তাই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ لَمْ يُبَيِّتْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ
“যে রাতে (ফজরের আগে) রোজা রাখার নিয়ত করে নি তার রোজা হবে না।” (সুনান নাসাঈ, আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।) কিন্তু জানা দরকার, নিয়ত কী বা কীভাবে নিয়ত করতে হয়?
➧ নিয়ত কী বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়?
ইমাম নববী রাহ. বলেন, মনের মধ্যে কোন কাজের ইচ্ছা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই নিয়ত বলা হয়। সুতরাং রোজা রাখার কথা মনে মধ্যে সক্রিয় থাকাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। কেননা, ইসলামি শরিয়তে কোন ইবাদতের নিয়ত মুখ দিয়ে উচ্চারণের কথা আদৌ প্রমাণিত নয়।
অথচ আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ওজুর নিয়ত, নামাজের নিয়ত, সেহরি খাওয়ার নিয়ত ইত্যাদি চর্চা করা হয়। নামাজ শিক্ষা, রোজার মসায়েল শিক্ষা ইত্যাদি বইতে এ সব নিয়ত আরবিতে অথবা বাংলা অনুবাদ করে পড়ার জন্য জনগণকে শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দ্বীনের মধ্যে এভাবে নতুন নতুন সংযোজনের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন,
« مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ »
“যে আমাদের এই দ্বীনে এমন নতুন কিছু তৈরি করল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা পরিত্যাজ্য।” (বুখারি ও মুসলিম)
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হল, দলীল-প্রমাণ ছাড়া গদ বাধা নিয়ত সহ সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম পরিত্যাগ করা এবং সুন্নতকে শক্তভাবে ধারণ করা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
◈ ৪) বিলম্বে ইফতার করা:
কিছু রোজাদারকে দেখা যায়, স্পষ্টভাবে সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও অতি সর্তকতার কারণে আরও কিছুক্ষণ পরে ইফতার করে। এটি স্পষ্ট সুন্নত বিরোধিতা। কারণ, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
« لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ »
“মানুষ ততদিন কল্যাণে উপর থাকবে যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
◈ ৫) তারাবিহ নামাজ সংক্রান্ত বিদআত:
অনেক মসজিদে দেখা যায়, তারাবিহর নামাজের প্রতি চার রাকাত শেষে মুসল্লিগণ উঁচু আওয়াজে ‘সুবাহানা জিল মুলকে ওয়াল মালাকূতে…” দুআটি পাঠ করে থাকে। এভাবে নিয়ম করে এই দুয়া পাঠ করা বিদআত। অনুরূপভাবে এ সময় অন্য কোন দুআ এক সাথে উঁচু আওয়াজে পাঠ করাও বিদআত। কারণ, এ ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহিহ হাদিস নেই। বরং নামাজ শেষে যে সকল দুআ সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পাঠ করা সুন্নত। যেমন: তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ”, একবার আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম ওয়ামিন্কাস সালাম, তাবারাক্তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকারাম” ইত্যাদি। এ দুয়াগুলো প্রত্যেকেই চুপি স্বরে নিজে নিজে পাঠ করার চেষ্টা করবে। (অবশ্য অনেক আলেমের মতে এ দুআগুলো কেবল ফরজ সালাতের সালামান্তে পঠনীয়। কিন্তু আল্লামা বিন বাজ রাহ. সহ কিছু আলেম, এই দুআগুলো যে কোনও সালাতের পরে পাঠ করার কথা বলেছেন। আল্লাহ ভালো জানেন)
◈ ৬) তারাবির নামাজে খুব তাড়াতাড়ি কুরআন তেলাওয়াত করা বা তাড়াহুড়া করে নামাজ পড়া:
অনেক মসজিদে রমজানে তারাবির নামাজে খুব তাড়াতাড়ি কুরআন তেলাওয়াত করা বা তাড়াহুড়া করে নামাজ শেষ করা। যার কারণে তেলাওয়াত ঠিক মত বুঝাও যায় না। নামাজে ঠিকমত দুআ-জিকির পাঠ করা যায় না। এটা নি:সন্দেহে সুন্নত পরিপন্থী। কেননা, আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের কিয়ামুল লাইল হত অনেক দীর্ঘ এবং ধীর স্থির।
৭) বদর দিবস পালন করা বিদআত:
২য় হিজরির রমজানের সতের তারিখে বদরের প্রান্তরে মক্কার মুশরিক সম্প্রদায় এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার জানবাজ সাহসী সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এক যুগান্তকারী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল অস্ত্র-সম্ভার এবং জনবলে এক অসম যুদ্ধ। মুসলমানগণ অতি নগণ্য সংখ্যক জনবল আর খুব সামান্য অস্ত্র-শস্ত্র সহকারে কাফেরদের বিশাল অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর প্রতিরোধ করেছিলেন এবং আল্লাহ তাআলা সে দিন অলৌকিকভাবে মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছিলেন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য মিথ্যার মাঝে চূড়ান্ত পার্থক্য সূচিত হয়েছিল।
এতো ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু প্রতি বছর রমজানের সতের তারিখে এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য লোকজন একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। তারপর বদরের বিভিন্ন ঘটনা, সাহবিদের সাহসিকতা ইত্যাদি আলোচনা কর হয়। এভাবে প্রতি বছর এই দিনে ‘বদর দিবস’ পালন করা হয়। এটি যদিও আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটির প্রচলন তেমন নেই। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের কিছু ইসলামি সংগঠন প্রতি বছর বেশ জোরে শোরে সাংগঠনিক কার্যক্রম হিসেবে এই বিদআত পালন করে থাকে। অথচ উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার সর্বোত্তম আদর্শ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এবং সালাফে সালেহীন থেকে এ জাতীয় অনুষ্ঠান পালনের কোন ভিত্তি নাই। বদরের এ ঘটনা নি:সন্দেহে মুসলমানদের প্রেরণার উৎস। এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এভাবে দিবস পালন করা শরিয়ত সম্মত নয়।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়ত জীবনে রয়েছে অনেক বক্তৃতা, সন্ধি-চুক্তি এবং বিভিন্ন বড় বড় ঘটনা-যেমন: বদর, হুনাইন, খন্দক, মক্কা বিজয়, হিজরত মুহূর্ত, মদিনায় প্রবেশ, বিভিন্ন বক্তৃতা যেখানে তিনি দ্বীনের মূল ভিত্তিগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তিনি তো এ দিনগুলোকে আনন্দ-উৎসব হিসেবে পালন করা আবশ্যক করেন নি। বরং এ জাতীয় কাজ করে খৃষ্টানরা। তারা ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। অনুরূপভাবে ইহুদীরাও এমনটি করে। ঈদ-উৎসব হল শরিয়তের একটি বিধান। আল্লাহ তাআলা শরিয়ত হিসেবে যা দিয়েছেন তা অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় এমন নতুন কিছু আবিষ্কার করা যাবে না যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [28]
মূলত: এ জাতীয় কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের শরিয়ত থেকে দূরে রাখার একটি অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং শরিয়ত যে কাজ করতে আদেশ করে নি তা হতে দূরে অবস্থান করে রমজান মাসে অধিক হারে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ আদায় করা, জিকির-আজকার এবং অন্যান্য এবাদত-বন্দেগি বেশি বেশি করা দরকার। কিন্তু মুসলমানদের অন্যতম সমস্যা হল শরিয়ত অনুমোদিত ইবাদত বাদ দিয়ে নব আবিষ্কৃত বিদআতি আমল নিয়ে ব্যস্ত থাকা। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।
◈ ৮) ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে, সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদত। যে কোন মুসলমানই তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরিয়তে নেই।
◈ ৯) জুমাতুল বিদা পালনের বিদআত:
জুমাতুল বিদা কী? জুমাতুল বিদা পালন করার গুরুত্ব কতটুকু?
জুমাতুল বিদা বলতে বুঝায়, রমজানের শেষ জুমা সালাতের মাধ্যমে রমজানকে বিদায় জানানো। আমাদের দেশে দেখা যায়, রমজানের শেষ শুক্রবারকে খুব গুরুত্বের সাথে ‘জুমাতুল বিদা’ হিসেবে পালন করা হয়। এ উপলক্ষে জুমার নামাজে পরিলক্ষিত হয় প্রচুর ভিড়। অনেক মানুষ এ দিনে বিশেষভাবে দুআ করে, কেউ কেউ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে, কেউ কেউ এ দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছু নামাজ পড়ে, ইফতার পার্টি করে..ইত্যাদি। পরের দিন পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে নিউজ আসে “যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে সারা দেশে ‘জুমাতুল বিদা’ পালিত হয়েছে”!! অথচ রমজানের শেষ জুমার দিনে এমন কিছু বিশেষ আমল করতে হবে কুরআন-সুন্নায় এ ব্যাপারে কোন ধারণা পাওয়া যায় না।
আমাদের কর্তব্য, প্রত্যেক জুমার দিনকে গুরুত্ব দেওয়া। সকল জুমার দিন ফজিলত পূর্ণ। রমজানের প্রতিটি দিন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রমজানের শেষ জুমার বিশেষ কোন ফযিলত আছে বলে কুরআন-সন্নায় কোন প্রমাণ নাই। সুতরাং এ দিনটিকে বিশেষ ফজিলত পূর্ণ মনে করে ‘জুমাতুল বিদা’ পালন করা বিদআত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল প্রকার বিদআত থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
◈ ১০) ফিতরা প্রদানের ক্ষেত্রে সুন্নতের বরখেলাপ:
খাদ্য দ্রব্য না দিয়ে টাকা দিয়ে অথবা কাপড় কিনে ফিতরা দেওয়া সুন্নতের বরখেলাপ। কারণ, হাদিসে ফিতরা হিসেবে খাদ্য দ্রব্য প্রদান করার কথাই বর্ণিত হয়েছে । যেমন: ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ أَوْ عَبْدٍ ، ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى ، مِنَ الْمُسْلِمِينَ
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন, দাস, পুরুষ অথবা নারী সকলের উপর এক সা (প্রায় আড়াই বা তিন কেজি) পরিমাণ খেজুর অথবা জব জাকাতুল ফিতর হিসেবে আবশ্যক করেছেন।” (বুখারি ও মুসলিম) এখানে খাদ্য দ্রব্যের কথা সুস্পষ্ট।
তা ছাড়া নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও দিনার-দিরহামের প্রচলন ছিল কিন্তু তিনি অথবা তার কোন সাহাবি দিনার-দিরহাম দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন বলে কোন প্রমাণ নাই। তাই সুন্নত হল, আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য দ্রব্য (যেমন: চাল) দ্বারা ফিতরা আদায় করা। আরেকটি বিষয় হল: হাদিসে বর্ণিত এক সা’র পরিবর্তে আধা সা ফিতরা দেওয়াও সুন্নতের বরখেলাপ। যেমনটি উপরোক্ত হাদিসে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে। যদিও আমাদের সমাজে আধা সা ফিতরা দেওয়ার মাসআলাই দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবির সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
তথ্যসূচী:
————————-
[1] বুখারি ও মুসলিম।
[2] বুখারি ও মুসলিম।
[3] বুখারি, সওম অধ্যায় এবং মুসলিম, ঈমান অধ্যায়।
[4] সহিহ বুখারি, কিতাবুস সাওম। সহিহ মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
[5] বুখারি ও মুসলিম।
[6] সহিহ মুসলিম। পবিত্রতা অধ্যায়।
[7] তিরমিজি, রোজা অধ্যায়। মুসতাদরাক হাকেম। আল্লামা আলবানি রাহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দেখুন: সহিহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব। হাদিস নম্বর: ৯৯৮।
[8] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: রোজা। সহিহ মুসলিম অধ্যায়: রোজা।
[9] সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাত্হুল বারী। অধ্যায়: দু মাস এক সাথে কম হবে না। ১৭৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যা।
[10] বুখারি ও মুসলিম।
[11] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: জাকাত। সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান।
[12] মুসনাদ আহমদ, ৫/২৩১, সুনান তিরমিজি, ঈমান অধ্যায়। ইমাম তিরমিজি বলেন, “হাদিসটি হাসান-সহিহ। সুনান ইবনে মাজাহ্, অধ্যায়: ফিতনা-ফ্যাসাদ।
[13] বুখারি, অধ্যায়: তাহাজ্জুদ। মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরদের নামাজ।
[14] বুখারি,অধ্যায়: তারাবিহর নামাজ। মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরদের নামাজ।
[15] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: তারাবিহর নামাজ। অনুচ্ছেদ: রমজান মাসে রাতের নামাজ পড়ার ফজিলত।
[16] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: ইতিকাফ এবং সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।
[17] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: শবে কদরের ফজিলত। সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।
[18] সহিহ বুখারি
[19] মুসনাদ আহমদ,৫/ সুনান আবুদাউদ, অধ্যায়: রোজা, তিরমিজি, অধ্যায়: রোজা অনুচ্ছেদ। আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
[20] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: লাইলাতুল কদরের ফজিলত। সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: রোজা।
[21] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: লাইলাতুল কদর-এর ফজিলত।
[22] বুখারি, অধ্যায়: লাইলাতুল কদর-এর ফজিলত। মুসলিম, অধ্যায়: রোজা।
[23] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: রোজা অধ্যায়। সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: রোজা। তবে সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, সাহাবিগণ সকল ক্ষেত্রে সর্ব শেষ বিধানের রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করতেন।
[24] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: রোজা, সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: রোজা।
[25] সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সাওম। সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: সিয়াম। তবে সহিহ মুসলিমের ভাষ্য হল: “আমরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে রমজান মাসে সফরে যেতাম…”।
[26] মুসনাদ আহমদ, তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ থেকে বর্ণিত (৩/৪২০), তিরমিজি, অনুচ্ছেদ: চাঁদ দেখার সময় কী বলবে? আল্লামা আলবানি রাহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ।
[27] বুখারি, অনুচ্ছেদ: ফজরের আগে আজান দেওয়া। মুসলিম: অনুচ্ছেদ: ফজর উদিত হলে রোজা শুর হবে…।
[28] ইকতিযাউয সিরাতিল মুস্তাকীম [২/৬১৪ ও ৬১৫]
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।