মুসলিমদের জন্য তুলসী পাতা ব্যবহারের বিধান এবং এর অভাবনীয় সব উপকারিতা

প্রশ্ন: কাশির ঔষধে উপাদান হিসাবে তুলসী পাতা থাকলে সে ঔষধ কি মুসলিমরা খেতে পারবে? কেননা আমরা জানি, হিন্দুরা তুলসী গাছের পূজা করে। দয়া করে এ বিষয়ে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: তুলসী অত্যন্ত উপকারী একটি সুগন্ধযুক্ত ভেষজ বা ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ। আল্লাহ তায়ালা এতে মানবজাতির জন্য অনেক উপকার দিয়েছেন। অতএব স্বাস্থ্য রক্ষা বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পাতার ব্যবহার মোটেও দোষণীয় নয়। যদিও হিন্দুরা এটিকে পূজনীয় মনে করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, স্কন্দ পুরাণে ‘লক্ষ্মীস্বরূপ’, চকর সংহিতায় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ঋকবেদে ‘কল্যাণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (বাংলা উইকিপিডিয়া)

কিন্তু মুসলিমরা এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি, বস্তু, জীব-জন্তু, জড়পদার্থ, গাছ-মাছ, পথর ইত্যাদিকে পূজনীয় মনে করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনও কিছুর পূজা-উপাসনা করা শিরক-যা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ও কঠিন তম ভয়াবহ অপরাধ। কোনও মুসলিম জেনে-বুঝে ও ইচ্ছাকৃত ভাবে শিরক করলে সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায় এবং চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামি হয়ে যায়। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)

যাহোক, তুলসী গাছের ব্যাপারে হিন্দুদের বিশ্বাস যাই থাক না কেন এ কারণে তা থেকে উপকৃত হওয়া নিষিদ্ধ নয়। কেননা এটি মহান আল্লাহর একটি সৃষ্টি যাতে তিনি মানবজাতির জন্য দান করেছেন অসংখ্য উপকারিতা।
সুতরাং মুসলিমগণ তা চাষাবাদ বা উৎপাদন করতে পারে এবং ডাক্তারি নির্দেশনা মোতাবেক তা বিভিন্ন চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করতে পারে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এতে কোন বাধা নেই আল হামদুলিল্লাহ।

❑ নিম্নে সংক্ষেপে তুলসী পাতার কতিপয় ঔষধি গুণাগুণ ও ব্যবহার বিধি তুলে ধরা হলো:

তুলসী পাতার উপকারিতার প্রায় সবারই জানা। তবে তুলসী পাতা কোন কোন ক্ষেত্রে উপকারী, তা অনেকেও জানা না-ও থাকতে পারে। সবুজ রঙের গুল্মজাতীয় একটি উপকারী উদ্ভিদ এটি। শুধু এর পাতা নয়, তুলসী গাছের বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতি প্রয়োজনীয়। ফুসফুসের দুর্বলতা, কাশি, কুষ্ঠ, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বর, চর্মরোগ, বক্ষ বেদনা ও হাঁপানি, হাম, বসন্ত, কৃমি, ঘামাচি, রক্তে চিনির পরিমাণ হ্রাস, কীটের দংশন, কান ব্যথা, ব্রংকাইটিস, আমাশয় ও অজীর্ণে তুলসী দিয়ে তৈরি ওষুধ বিশেষভাবে কার্যকর। বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যেসব রোগ সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক। এছাড়া মশার কামড় থেকে বাঁচতে হলে মশারি টানানো, অ্যারোসল স্প্রে করা অথবা তীব্র ধোঁয়াযুক্ত কোয়েল জ্বালানোর প্রয়োজন পড়বে না। যদি তুলসী থাকে ঘরে।

জেনে নেওয়া যাক, তুলসী পাতার নানা গুণাগুণ ও ব্যবহার বিধি:

☄️সর্দি-কাশির যম:

শিশুদের সর্দি-কাশির জন্য তুলসী পাতা মহৌষেধের মতো কাজ করে। যেকোনো বয়সের মানুষই এ থেকে উপকার পাবেন। শিশুর সর্দি-কাশি থাকলে শিশুকে আধা চা চামচ মধু এবং তুলসী পাতার রস খাওয়ালে কাশি কিছুটা কমবে।

☄️ব্যথা উপশম করে:

মাথা ব্যথা ও শরীর ব্যথা কমাতে তুলসী খুবই উপকারী। এর বিশেষ উপাদান মাংশপেশির খিঁচুনি রোধ করতে সহায়তা করে।

☄️গলা ব্যথা উপশমে:

গলা ব্যথার সমস্যার মোক্ষম সমাধান তুলসী পাতা। এছাড়া শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে তুলসী পাতা বেশ উপকারী। কয়েকটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।

☄️রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তুলসী পাতা। অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি মোকাবিলায় কাজ করে এই পাতা। জ্বর সারাতেও তুলসী পাতা সমান উপকারী। তুলসী পাতা ও এলাচ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে খুব সহজেই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা দ্রুত শুকায়।

☄️পোকার কামড়:

তুলসী পাতা হলো, প্রোফাইল্যাক্টিভ যা পোকামাকড় কামড় দিলে উপশম করতে সক্ষম। পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার তাজা রস লাগিয়ে রাখলে কামড়ের ব্যথা ও জ্বলা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।

☄️ত্বকের সমস্যা:

তুলসী পাতার রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এছাড়াও তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগালে ত্বকের যেকোনো সমস্যায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ত্বকের কোনও অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে এবং সেখানে কোনও দাগ থাকবে না ৷

☄️ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:

তুলসী পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। তুলসী অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসীতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়াবেটিস রোধ করতে কার্যকরী।
নিয়মিত তুলসী পাতার রস সেবনে রোগ-বালাই থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়। তাই সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে তুলসী পাতা খাওয়া উচিৎ। নিয়মিত তুলসী পাতা পেতে ঘরের বারান্দায় কিংবা বাড়ির উঠোনে একটি তুলসী গাছ লাগিয়ে নিতে পারেন। [channel24bd]

❑ তুলসী পাতার আরও কিছু উপকারিতা ও তা ব্যবহারে সতর্কতা:

এই বিষয়ে অনলাইন পোর্টাল dhakapost লিখেছে:

তুলসী পাতা উপকারী এ কথা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু তুলসীপাতা খেলে কোনও উপকারগুলো পাওয়া যায় সেকথা অনেকেরই অজানা। ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার বেশ পুরনো। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। এটি নানা গুণে অনন্য বলেই হাজার বছর ধরে যোগ আছে ওষুধের তালিকায়।
জেনে নিন তুলসী পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-

▪️ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

ক্যান্সার এক মরণঘাতি অসুখের নাম। এই অসুখ দূরে রাখতেও সাহায্য করে তুলসী পাতা। এই পাতায় আছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এতে আরও আছে ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন। এসব উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে কার্যকরী। অগ্নাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয় তা দূর করতেও তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। পাশাপাশি দূরে রাখে ব্রেস্ট ক্যান্সারও।

▪️ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তুলসী পাতা। অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি মোকাবিলায় কাজ করে এই পাতা। জ্বর সারাতেও তুলসী পাতা সমান উপকারী। তুলসী পাতা ও এলাচ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে খুব সহজেই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা দ্রুত শুকায়।

▪️ ওজন কমায়:

তুলসী পাতা খেলে তা রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল দুটোই রোধ করে। তাই খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসী দিয়ে তৈরি ২৫০ মিলিগ্রামের একটি ক্যাপসুল প্রতিদিন খাওয়ার ফলে ওবেসিটি ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

▪️ ডায়াবেটিস দূরে রাখে:

তুলসী পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। তুলসী অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধের কাজ করে। তুলসীতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়াবেটিস রোধ করতে কার্যকরী।

তুলসী পাতা উপকারী। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাওয়া বা না খাওয়াই উত্তম। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এড়িয়ে চলবেন:

– গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময়:

সামান্য তুলসী পাতা খেলে তা ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে এসময় নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসী এড়িয়ে চলাই উত্তম। অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে তা নারীর ক্ষেত্রে হতে পারে বন্ধ্যত্বের কারণ। তাই পরিমিত গ্রহণ করতে হবে।

– রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে

তুলসী পাতা অতিরিক্ত খেলে তা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা। যেকোনো সার্জারির দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ রাখুন।

– নিম্ন রক্তচাপ:

তুলসী পাতায় থাকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। তাই কারও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। এই ক্ষেত্রগুলোতে সতর্ক থাকলেই তুলসী পাতা খাওয়া নিরাপদ। এর অনন্য সব উপকারিতার জন্য নিয়মিত খেতে পারেন।

নিশ্চয় আল্লাহ গাছপালা ও লতাপাতা ইত্যাদিতে মধ্যে মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য খাদ্য উপাদান ও নানা ঔষধি গুণাগুণ দান করেছেন। আমাদের উচিত, সঠিক নিয়মে সেগুলোর ব্যবহার করা এবং আল্লাহর এই নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার। সৌদি আরব।

Share: