ভিপিএন VPN ব্যবহারের বিধিবিধান

প্রশ্ন: ভিপিএন ব্যবহারের বিধান কী?
উত্তর: VPN (virtual personal network) ব্যবহারের ব্যাপারে কথা হলো, যদি বৈধ উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করা হয় তাহলে বৈধ আর অবৈধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে অবৈধ। যেমন:
অনেক সময় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মবিশ্বাস গত মতপার্থক্য কিংবা বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক অথবা পার্থিব উপকারী কিছু ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্লক করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে VPN ব্যবহার করা জায়েজ। কিন্তু সরকার যদি বৃহত্তর জনস্বার্থে কিংবা দেশ, জাতি বা ইসলামের জন্য ক্ষতিকর কোন ওয়েবসাইট/অ্যাপ বন্ধ করে তাহলে তা ভিপিএন ব্যবহার করে সেগুলো খোলা জায়েজ নেই। যেমন: পর্ণ বা অশ্লীল ওয়েবসাইট, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাস প্রচারকারী ওয়েবসাইট/অ্যাপ ইত্যাদি।

– আর ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে যদি কোন অবৈধ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে অবশ্যই তা হারাম। যেমন: ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানির বা রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করা বা কারো অধিকার নষ্ট করা। উদাহরণ হিসেবে, বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ভিপিএন-এর সাহায্যে বিশেষ পদ্ধতিতে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর-এর সিম থেকে ফ্রি ইন্টারনেট ডাটা বিক্রয় করে থাকে। অতএব তা বিক্রয় করা যেমন হারাম তেমনি ব্যবহার করাও হারাম। কেননা তা মানুষের হক নষ্ট করার শামিল। একই ভাবে দেশ, জাতি বা মানব সমাজ ও মানব সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কন্টেন্ট বা ওয়েব সাইটের অ্যাক্সেস পাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিপিএন ব্যবহার করা হারাম।

প্রশ্ন: VPN ব্যবহার কি সরকারের আনুগত্য পরিপন্থী?
উত্তর: যেমনটি আমরা জানি যে, অনেক সময় অমুসলিম, জালিম বা বিদআতি সরকার শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার স্বার্থে কোনও কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক/উপকারী ওয়েব সাইট, অ্যাপ বা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে যদি ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত ওয়েব সাইট/অ্যাপ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা হারাম হবে না বা এ কারণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার গুনাহ হবে না। কারণ সরকারের আনুগত্য নিঃশর্ত নয়। অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। আর তা হলো, আনুগত্য হবে কেবল ভালো কাজে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لا طَاعَةَ في مَعْصِيَةٍ، إنَّما الطَّاعَةُ في المَعروفِ

“(আল্লাহর) অবাধ্যতায় কোনও আনুগত্য নেই। আনুগত্য হবে কেবল ভালো কাজে।” [সহিহ বুখারি, হা/৭২৫৭]

অনুরূপভাবে সাইবার নিরাপত্তা তথা হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যার অ্যাটাক থেকে আত্মরক্ষার জন্য সরকার অনুমোদিত VPN ব্যবহারের সুযোগ আছে। ভিপিএন-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে সুরক্ষিত করে থাকে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রাইভেট নেটওয়ার্কগুলোকে নিরাপদে সংযুক্ত করার জন্য ভিপিএন-এর বিকল্প নেই।
শরিয়তের দৃষ্টিতে এমন ভিপিএন ব্যবহারে কোনও আপত্তি নেই।

◆ ◆ সতর্কী করণ: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ। এসব দেশে অবৈধ ভাবে তা ব্যবহার কারীদের জন্য জেল, অর্থ দণ্ড ও নানা ধরণের শাস্তি রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা কাম্য।

❑ ভিপিএন-এর মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে নিষিদ্ধ স্থানে হালাল ব্যবসা করার হুকুম কী?
ভিন্ন বিদেশি অনলাইন মার্কেট প্লেসে তাদের নিজেদের দেশের লোক ছাড়া অন্য কোন দেশের লোক ব্যবসা করতে পারে না। তখন ঐ সমস্ত মার্কেট প্লেসে বাইরের দেশের অনেক লোক ভিপিএন-এর মাধ্যমে নিজ কম্পিউটারের আইপি এড্রেস এবং নিজ দেশের পরিচয় হাইড করে দিয়ে ঐ দেশের আইপি এড্রেস এবং পরিচয় গ্রহণ করে নিজেকে উক্ত দেশের নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঐ সমস্ত মার্কেট প্লেসে ব্যবসা করে থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এ কাজটি ধোঁকাবাজি ও মিথ্যা ও প্রতারণা বলে গণ্য হবে। সুতরাং এ পদ্ধতিতে ব্যবসা করা হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَاجْتَنِبُواْ قَوْلَ الزُّورِ
“এবং মিথ্যা কথা থেকে বাঁচো।” [সূরা হজ: ৩০]
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا »
“যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [সহিহ মুসলিম, হা/ ১০১] অর্থাৎ সে ইসলামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত।
তবে বিক্রিত পণ্য যদি হালাল হয় এবং হালাল পদ্ধতিতে বিক্রয় করা হয় তাহলে বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা হালাল। কিন্তু অবৈধ পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে গুনাহগার হতে হবে। এ জন্য তওবা করে দ্রুত এই ব্যবসা পরিহার করা আবশ্যক।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: