বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে বা বিশেষ কোনও ক্ষতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে পোষা বিড়ালকে বন্ধ্যা (neutering) করায় আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ; অন্যথায় তা হারাম। কেননা বিনা দরকারে আল্লাহর সৃষ্টি জীবের জন্ম বিস্তার রোধ এবং তাকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়।
ফতওয়ায়ে হিন্দিয়ায় এসেছে,
وَأَمَّا فِي غَيْرِهِ مِنْ الْبَهَائِمِ فَلَا بَأْسَ بِهِ إذَا كَانَ فِيهِ مَنْفَعَةٌ، وَإِذَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَنْفَعَةٌ أَوْ دَفْعُ ضَرَرٍ فَهُوَ حَرَامٌ،
“আর (মানুষ ও ঘোড়া ছাড়া) অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এতে (বন্ধ্যা করণে) যদি উপকার হয় তাতে দোষের কিছু নেই এবং যদি তাতে কোনও উপকার না হয় বা ক্ষতি প্রতিহত না করা হয় তাহলে তা হারাম।” [ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩৫৭, দারুল ফিকর প্রকাশনী]
➤ উল্লেখ্য যে, জীব-জন্তুর বন্ধ্যা করণে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে জইফ (দুর্বল)। হাদিসটি হল,
نَهى رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلمَ عن إخصاءِ الخيلِ والبهائمِ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়া এবং জীব-জন্তুকে বন্ধ্যা করতে নিষেধ করেছেন।”
– আহমদ শাকের বলেন, এর সনদ দুর্বল। [মুসনাদে আহমদ ৭/৬]
– শুয়াইব আরবাবুত বলেন,
إسناده ضعيف وقد روي مرفوعا وموقوفا وموقوفه هو الصحيح
“এর সনদ দুর্বল। এ হাদিসটি মারফু তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ নিঃসৃত হাদিস হিসেবে এবং মাউকুফ তথা সাহাবির উক্তি হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু (মারফু সূত্রে তা জইফ) আর মাওকুফ (তথা সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর উক্তি) হিসেবে সহিহ।
– মোবারক পূরী বলেন, এর সনদ দুর্বল। [তুহফাতুল আহওয়াযি, ৩/৫৩৬]
❑ বিড়াল বন্ধ্যা করণ সম্পর্কে জরুরি কিছু তথ্য-যেগুেলো আগ্রহীদের জানা থাকা প্রয়োজন:
◈ স্পে বা নিউটার কি?
Spaying এবং Neutering হচ্ছে ছোট এক ধরনের অস্ত্রোপচার যার মাধ্যমে পশু চিকিৎসক (Veterinarian) বিড়ালের প্রজননতন্ত্র ফেলে দেয়। যার ফলে তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। মেয়ে বিড়ালের অস্ত্রোপচারকে বলে Spay আর ছেলে বিড়ালের অস্ত্রোপচারকে বলে Neuter। Spaying এর মাধ্যমে মেয়ে বিড়ালের প্রজননতন্ত্র যেমন- ovaries, fallopian tubes and uterus ফেলে দেওয়া হয়। Neutering এর মাধ্যমে ছেলে বিড়ালের testicles ফেলে দেওয়া হয়।
◈ Spaying এবং Neutering এর উপকারিতা:
• Spaying এবং Neutering একধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চার সংখ্যা কমে যায়।
• বিড়াল Heat এ আসে না ফলে মেয়ে বিড়াল ছেলে বিড়ালকে আকর্ষণ করবে না।
• বিড়ালের আক্রমণাত্মক আচরণ কমিয়ে বিড়ালকে শান্ত করে তোলে।
• মেয়ে বিড়ালকে Spay করালে বিড়ালের মরণ ঘাতী কিছু অসুখ Mammary Gland Tumors, Ovarian or Uterine Cancer, Breast Cancer ইত্যাদি থেকে বিড়ালকে রক্ষা করা যায়।
• ছেলে বিড়ালকে Neuter করালে testicular cancer এবং prostate disease এর ঝুঁকি কমে।
• ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমে। ফলে অন্য বিড়ালের সাথে ঝগড়া হয় না এবং অন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটে না।
• বিড়ালের Spraying বন্ধ করে।
• বিড়ালকে দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ রাখে।
◈ কখন করাবেন?
বিড়ালের বয়স যখন চার–পাঁচ মাস এবং বিড়ালের ওজন অবশ্যই ২ কেজির উপরে হয়, তখনই Spay অথবা Neuter করানোর সঠিক সময়। সাধারণত চার–পাঁচ মাস বয়সে বিড়াল sexually mature হয় অর্থাৎ heat এ আসে। তবে এটা নির্ভর করে breed এর উপর, যেমন- Persian জাতের বিড়াল ১০মাসের বেশি বয়সে heat এ আসে।
◈ কোথায় Spay এবং Neuter করানো হয়?
বাংলাদেশের প্রায় সব পশু চিকিৎসক Spay এবং Neuter করে থাকেন। আপনার পরিচিত কোনো সুদ চিকিৎসকের কাছ থেকে সেখানে নিয়ে গিয়ে Spay এবং Neuter করাতে পারেন।
[source: Banasree foster care]
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।