প্রশ্ন: ‘বিনয়’ অর্থ কি, ইসলামের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কিভাবে ‘বিনয়ী’ হওয়া যায়?
উত্তর:
নিন্মে বিনয়ের অর্থ, এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস এবং বিনয়ী হওয়ার কতিপয় উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
🔷 বিনয় অর্থ:
বিনয় ও নম্রতা দু’টি সমার্থক শব্দ। বিনয়ী অর্থ: ঔদ্ধত্য হীন, নিরহঙ্কার, অবনত, নরম, কোমল, শান্ত-শিষ্ট ইত্যাদি।
🔷 বিনয়-নম্রতা প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস:
বিনয় মানব জীবনের একটি অত্যন্ত মহৎ গুণ এবং আকর্ষণীয় চারিত্রিক ভূষণ। বিনয়ী ব্যক্তি যেমন আল্লাহর নিকট ভালবাসার পাত্র তেমনি মানুষের কাছেও প্রিয়ভাজন।
নিন্মে এর গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
▪ আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللهُ عَبْداً بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزّاً وَمَا تَواضَعَ أحَدٌ للهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ رواه مسلم
“দানে সম্পদ কমে না এবং ক্ষমায় আল্লাহ তা‘আলা সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে, আল্লাহ তার সম্মান বাড়িয়ে দেন।” (মুসলিম ৬৭৫৭)
▪ তিনি আরও বলেছেন:
وَإِنَّ اللهَ أَوْحَى إِلَىَّ أَنْ تَوَاضَعُوْا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلاَ يَبْغِىْ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ
”আল্লাহ তা‘আলা আমার প্রতি ওহী করেছেন যে, তোমরা পরস্পর বিনয় প্রদর্শন করবে, যাতে কেউ কারো উপর বাড়াবাড়ি ও গর্ব না করে।” (মুসলিম হা/২৮৬৫; আবু দাঊদ হা/৪৮৯৫; সহীহুল জামে‘ হা/১৭২৫; সহীহাহ হা/৫৭০।)
▪তিনি বিনয়ী ও ভদ্র লোকদের প্রশংসায় বলেছেন:
, الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ ‘
“মুমিন ব্যক্তি নম্র ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও চরিত্রহীন হয়।” (তিরমিযী হা/১৯৬৪; মিশকাত হা/৫০৮৫।)
▪ মনিষীগণ বলেন: ”বিনয় এমন একটি গুণ যা দেখে কেউ হিংসা করে না।” সুতরাং বিনয়ী ব্যক্তি যেমন আল্লাহ নিকট প্রিয় তেমন মানুষের কাছেও প্রিয়।
🔷 কিভাবে বিনয়ী হওয়া যায়?
নিম্নে বিনয়ী হওয়ার ২০টি উপায় প্রদান করা হল:
১. অন্তর থেকে অহংকারকে বিদায় জানানো।
২. সত্যকে ও হককে গ্রহণ করা যদিও তা বয়স, জ্ঞান-গরিমা ও পদমর্যাদায় ছোট কোন ব্যক্তির নিকট থেকে পাওয়া যায়।
৩. কাউকে হেয় না করা বা ছোট নজরে না দেখা।
৪. ভুল হলে নি:সঙ্কোচে স্বীকার করা। ভুল স্বীকার করলে মানুষের সম্মান কমে না বরং বৃদ্ধি পায়।
৫. যথাসাধ্য মানুষের উপকার করা এবং এ জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা বা প্রতিদান পাওয়ার আশা না করা।
৬. কেউ উপকার করলে তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা।
৭. মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা।
৮. ধনী-গরিব সবার সাথে মিলমিশ ও উঠবস করা।
৯. নিজের অর্থ-সম্পদ, জ্ঞান-গরিমা, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, সৌন্দর্য, পোশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে অন্যের উপর নিজেকে শ্রেষ্ঠ না ভাবা।
১০. কেউ উপকার করলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং কখনো তা না ভোলা।
১১. কারো উপকার করলে কখনই তা কারো সামনে উচ্চারণ না করা।
১২. অন্যের কষ্ট, শ্রম ও অবদানের স্বীকৃতি দেয়া।
১৩. বিপদগ্রস্তকে নি:স্বার্থ ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা।
১৪. মানুষের সাথে আচার-আচরণ ও কথা-বার্তা বলার সময় নম্রতা, ভদ্রতা, শালীনতা ও শিষ্টতা বজায় রাখা।
১৫. অন্যের মতামত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা এবং তা মূল্যায়ন করা।
১৬. কোনো বিষয়ে নিজের মধ্যে দুর্বলতা থাকলে তা স্বীকার করতে সংকোচ না করা।
১৭. কোনো বিষয় না জানলে ’জানি না’ বলতে সঙ্কোচ না করা।
১৮. আইনকে শ্রদ্ধা করা।
১৯. মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে বিলম্ব না করা।
২০. লজ্জাবোধ থাকা এবং নিষ্প্রয়োজনীয় কোনো কথা বা কাজ না করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিনয় নামক অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মহৎ গুণ দ্বারা আমাদের চরিত্রকে সুসজ্জিত করার তাওফিক দান করুন। আমীন
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব।।