বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা এবং বিড়াল প্রতিপালন

বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা এবং বিড়াল প্রতিপালন: বাড়াবাড়ি পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন: আমরা যে বিড়ালগুলো ঘরে রেখে পালন করি সাধারণত সেগুলোর জন্য আলাদাভাবে মাছ কিনে সিদ্ধ করে ভাত দিয়ে মেখে খেতে দেই। সবসময় ঘরে থাকার কারণে এবং মানুষের সংস্পর্শে থাকার কারণে বাহিরের অন্যান্য বিড়ালদের মতো করে এই পোষ মানা বিড়ালগুলো নিজেদের খাবার খুঁজে নিতে পারে না। তাই যাতে তারা পেট ভরে খেতে পারে এজন্য আলাদাভাবে মাছ কিনে সিদ্ধ করে ভাত দিয়ে মেখে খেতে দেওয়া হয়। এতে কি অতিরঞ্জন করা হয়?
উত্তর: আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসে বিড়ালকে পাক-পবিত্র প্রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং আল্লাহর সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া করা এবং সেগুলোকে কষ্ট না দেওয়ার প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তবে অবশ্যই তা হতে হবে সীমার মধ্যে। এতে ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা যাবে না।
যাহোক, প্রশ্নের আলোকে বলব, কোন বিড়াল যদি নিজে নিজে খাবার সংগ্রহ করে খেতে অভ্যস্ত না হয় বা এমন সুযোগ না থাকে তাহলে বাড়াবাড়ি বা অতিরঞ্জন ব্যতিরেকে তার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী তাকে খাবার সরবরাহ করতে কোন বাধা নেই। সে হিসেবে বিড়ালকে আলাদা ভাবে মাছ সিদ্ধ করে ভাত খাওয়ানো অতিরঞ্জন নয় যদি কারো সামর্থ্য থাকে। কেননা পোষা প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করা মালিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যেহেতু সাধারণত শহরের বাসা বাড়িতে থাকা বিড়ালরা বাহির থেকে প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংগ্রহ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে সেই সুযোগ থাকে না তাই তাদের জন্য মালিকের পক্ষ থেকে সুষম খাবার সরবরাহ করা প্রয়োজন। মাছ সিদ্ধ করে ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো একটি সাধারণ এবং স্বাস্থ্যকর উপায়। বিশেষ করে যদি এটি বিড়ালের পছন্দ অনুযায়ী হয়। তবে নিশ্চিত হতে হবে যে বিড়ালের খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ফ্যাট, এবং ভিটামিন-খনিজ আছে। শুধুমাত্র ভাত এবং মাছ যথেষ্ট নয়; মাঝে মাঝে বিড়ালের জন্য সঠিক পুষ্টি সম্পন্ন খাবারও দেওয়া উচিত। এটা অতিরঞ্জন নয় বরং দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয়। সাধারণভাবে বিড়াল প্রতিপালনে সেগুলোর প্রতি যত্ন নেওয়া ভালো। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এমন কয়েকটি উদাহরণ হলো:
◍ ১. অত্যধিক বিলাসবহুল খাবার সরবরাহ করা:
বিড়ালের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল বা মানুষের জন্য তৈরি খাবার কেনা, যা তাদের পুষ্টির চাহিদার চেয়ে বেশি। যেমন: চড়া মূল্যে আমদানিকৃত বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার, প্রতিদিন স্টিক, চিজ বা অন্যান্য দামী খাবার খাওয়ানো।
◍ ২. ব্যয়বহুল খেলনা ও সরঞ্জাম কেনা:
বিড়ালের জন্য অত্যন্ত দামী ইলেকট্রনিক খেলনা, ক্যাট ট্রি, পিং পিং বল, মাল্টি সাউন্ড যুক্ত খেলনা, বিভিন্ন ধরনের স্প্রিং, বিশেষায়িত আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয় করা।
◍ ৩. বিড়ালের জন্য ডিজাইনার পোশাক বা গয়না কেনা:
অনেক সময় মানুষ বিড়ালকে মানুষের মতো পোশাক পরানোর প্রবণতা দেখায়, যা প্রয়োজনীয় নয়। বিশেষ করে বিড়ালের জন্য দামী ডিজাইনের পোশাক বা অলঙ্কার কিনে দেওয়া বাড়াবাড়ি।
◍ ৪. অতিরিক্ত চিকিৎসা বা সৌন্দর্য চর্চার পেছনে খরচ করা:
গৃহপালিত পশু পাখির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি হলেও অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী সার্ভিস, স্পা ট্রিটমেন্ট বা ফ্যান্সি হেয়ার কাট ইত্যাদিতে অনেক টাকা খরচ করা বাড়াবাড়ি হতে পারে।
◍ ৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য অপ্রয়োজনীয় শো অফ:
বিড়ালকে বিখ্যাত করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সেটের মতো পরিবেশ তৈরি করা, প্রফেশনাল ফটো শুট করানো বা অপ্রয়োজনীয় ভিডিও প্রোডাকশন করাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি।
◍ ৬. বিড়ালের জন্য আলাদা ঘর বা অত্যন্ত দামী আবাস তৈরি করা:
অনেক সময় বিড়ালের জন্য আলাদা এয়ার-কন্ডিশন্ড রুম, দামী বিছানা বা বিশেষ ঘর তৈরি করা হয়-যা বাড়তি খরচ।
◍ ৭. কুকুর বিড়াল ইত্যাদির পেছনে এতটাই ব্যতিব্যস্ত থাকা যে, নিজের পেশাগত বা সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন না করা। পরিবারকে ঠিকমতো সময় না দিয়ে এগুলোর পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা।
◍ ৮. এগুলোর পেছনে ব্যস্ত থাকার কারণে সালাত, দুআ, জিকির, কুরআন তেলাওয়াত, ইলম চর্চা ইত্যাদির ব্যাপারে গাফেল থাকা। এগুলো অগ্রহণযোগ্য আচরণ এবং বাড়াবাড়ি পর্যায়ের কাজ।
◍ ৯. কিছু মানুষ বিড়াল-কুকুরের পেছনে অঢেল অর্থ খরচ করে। কিন্তু বাড়ির পাশে অসহায়-দরিদ্র মানুষ, এতিম শিশু অথবা বিধবা মহিলাটির জন্য সামান্য কিছু খরচ করতে কার্পণ্য করে। এগুলো সবাই বাড়াবাড়ি উদাহরণ যা অবশ্যই নিন্দনীয়।
বিড়াল এবং অন্যান্য হালাল পোষা প্রাণীর প্রতি সঠিক যত্ন নেওয়া এবং সেগুলোকে ভালোবাসায় দোষ নেই। তবে বাড়াবাড়ি না করে তাদের প্রকৃত প্রয়োজন বুঝে খরচ এবং যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তৌফিক দানকারী।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
Share: