বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকে টাকা রাখা এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা গ্রহণের বিধান

প্রশ্ন: আমি প্রতিমাসে বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকে কিছু টাকা রাখি। ইসলামি ব্যাংক নাকি অন্য ব্যাংকগুলোর মতো লাভ দেয় না। যতটুকু শরিয়তসম্মত ততটুকুই দেয়। এখন প্রশ্ন হলো, ইসলামি ব্যাংকে টাকা রাখলে কি গুনাহ হবে? এই ব্যাংকে যে লাভটা দিবে তা কি হালাল? আর ওই টাকা কি আমি আমার নিজের কাজে ব্যয় করতে পারবো?
উত্তর: নিম্নে কয়েকটি পয়েন্টে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

❂ ১. ইসলামি ব্যাংকিং কি সত্যিই সুদমুক্ত?

ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতি প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকিং থেকে ভিন্ন, কারণ এটি মুরাবাহা, মুদারাবা, ইজারা, মুশারাকা ইত্যাদি ইসলামি বিনিয়োগের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এর মূলনীতি হলো, ব্যাংক গ্রাহকের টাকাকে কোনো সুদভিত্তিক লেনদেনে ব্যবহার করবে না বরং ব্যবসা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করবে এবং সেই লাভ থেকে গ্রাহকদের অংশ প্রদান করবে।

তবে বাস্তবে ইসলামি ব্যাংকগুলো কতটা শরিয়াহসম্মতভাবে পরিচালিত হয়, তা নির্ভর করে তাদের শরিয়াহ বোর্ড, কার্যপ্রণালি এবং বিনিয়োগের বাস্তবায়নের ওপর। বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকের একটি শরিয়াহ বোর্ড রয়েছে, যারা ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। যদি তারা প্রকৃতপক্ষে শরিয়াহ মোতাবেক বিনিয়োগ করে এবং মুনাফা প্রদান করে, তাহলে এটি বৈধ বলে গণ্য হবে।

❂ ২. ইসলামি ব্যাংকের লাভ কি সুদ (রিবা)?

ইসলামি ব্যাংকে রাখা সঞ্চয় হিসাব বা মুদারাবা হিসাবের ওপর প্রাপ্ত টাকা যদি ব্যবসার প্রকৃত লাভ থেকে আসে এবং আগেই নির্দিষ্ট সুদের মতো কোনো প্রতিশ্রুতি না থাকে তাহলে এটি বৈধ।

কিন্তু যদি ব্যাংক প্রকৃত ব্যবসা না করে কেবল সুদের মতো নির্দিষ্ট হারে লাভ দেয় তাহলে এটি শরিয়াহ অনুযায়ী সুদ (রিবা) হিসেবে গণ্য হবে।

সুতরাং ইসলামি ব্যাংকের প্রকৃত কার্যপ্রণালি বোঝার জন্য তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন, শরিয়াহ বোর্ডের পর্যবেক্ষণ এবং ফতোয়া পর্যালোচনা করা উচিত।

❂ ৩. ইসলামি ব্যাংকের লাভ কি ব্যবহার করা বৈধ?

যদি ইসলামি ব্যাংকের কার্যক্রম সত্যিই শরিয়াহসম্মত হয় এবং ব্যবসার প্রকৃত লাভের ওপর ভিত্তি করে মুনাফা দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ বৈধ এবং আপনি সেই টাকা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু যদি কোনো সন্দেহ থাকে যে, ব্যাংক আসলেই সুদভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাহলে সেখান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া যে কোনো ইসলাম বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দিতে হবে।

❑ আপনার করণীয় কী?

✅ ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের ফতোয়া এবং তাদের বিনিয়োগ পদ্ধতি যাচাই করুন।
✅ যদি নিশ্চিত হন যে, তারা প্রকৃত ব্যবসার মাধ্যমে লাভ করে তাহলে সেই টাকা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
✅ যদি সন্দেহ থাকে যে ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে সুদভিত্তিক ব্যবস্থায় চলে তাহলে সেই টাকা নিজের বা নিজের পরিবারের কাজে ব্যয় না করে এলাকার এতিমখানা, মাদরাসা, মসজিদ বা মসজিদের টয়লেট, ওজুখানা বা অন্য যে কোনো কাজে অথবা গরিব-অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করে দিবেন কিন্তু সওয়াবের নিয়ত থেকে বিরত থাকবেন।
মোটকথা, ইসলামি ব্যাংকের কার্যপ্রণালি পুরোপুরি শরিয়াহভিত্তিক কি না সেটি ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি। আপনি ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন, তাদের শরিয়াহ বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং আলেমদের মতামত দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: