ফরজ নামাজের পর মাঝেমধ্যে একক ভাবে হাত তুলে দুআ-মুনাজাত করা জায়েজ এবং হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন জিকির, তাসবিহ, আয়াতুল কুরসি, সূরাতুল ইখলাস, সূরাতুল ফালাক, সূরাতুন নাস ইত্যাদি পাঠ করা সুন্নত। কিন্তু ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা কোনো সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। যার কারণে বিজ্ঞ ইমামগণের অনেকেই এটিকে অপছন্দ করেছেন ও বিদআত বলেছেন।
নিম্নে এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত ও বিশ্লেষণের পাশাপাশি মুনাজাতপন্থীগণ তাদের পক্ষে যে সব সংশয় উপস্থাপন করে থাকে সেগুলো জবাব প্রদান করা হল:
❑ ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত করা প্রসঙ্গে বিজ্ঞ আলেমদের কয়েকটি অভিমত:
◈ মুহাম্মদ বিন আহমাদ আল মালেকী বলেছেন,
قال القرافي: كره مالك وجماعة من العلماء لأئمة المساجد والجماعات الدعاء عقب الصلوات المكتوبة جهرًا. الدر الثمين: ١/٣٠٩
আল কারাফী বলেছেন, “ইমাম মালিক রাহ. এবং উলামাগণের একটি জামাত মসজিদের ইমাম ও জামাতের ইমামের জন্য ফরজ নামাজের পর উচ্চস্বরে দুআ করা অপছন্দ করেছেন।” [আদ্দুররুস সামীন: ১/৩০৯]
◈ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন,
اما دعاء الإمام والمأمومين جميعا عقيب الصلاة فهو بدعة لم يكن على عهد النبي صلى الله عليه وسلم بل إنما كان دعاؤه في صلب الصلاة فإن المصلى يناجي ربه فإذا دعا حال مناجاته له كان مناسبا. وأما الدعاء بعد انصرافه من مناجاته و خطابه فغير مناسب و إنما المسنون عقيب الصلاة هو الذكر الماثور عن النبي صلى الله عليه وسلم من التهليل والتحميد والتكبير. مجموع الفتاوى لابن تيمية: ٢٢/٥١٩
নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সবাই একত্রিত হয়ে দুআ করা বিদআত। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর দুআ ছিল নামাজের অভ্যন্তরে। কেননা একজন নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে তার রবের সাথে সঙ্গোপনে কথা বলে। সুতরাং রবের সাথে সঙ্গোপনে কথা বলার সময় দুআ করা অধিক উপযুক্ত। নিভৃত কথপোকথন শেষ করার পরে দুআ করা উপযুক্ত নয়।
বরং নামাজ শেষ করার পর সুন্নত হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত জিকির-আজকার তথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর ইত্যাদি পাঠ করা।” [মাজমুউল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়াহ, ২ ২/৫১৯]
◈ ইমাম ইবনুল কায়্যেম আল জাওযিয়্যাহ বলেছেন,
أما الدعاء بعد السلام من الصلاة مستقبل القبلة أو المأمومين فلم يكن ذلك من هديه صلى الله عليه وسلم. زاد المعاد,١/٢٤٩
“অতঃপর সালামের পর কিবলামুখী হয়ে দুআ করা অথবা মুক্তাদিগণের দুআ করা। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ ছিল না।” [যাদুল মাআদ: ১/২৪৯]
◈ আহমদ বিন গানিম আল মালেকী বলেছেন,
أن المطلوب بإثر الصلاة المفروضة الذكر وأما الاشتغال بالدعاء زيادة على ذلك فقال إنه بدعة لم يرد به عمل عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن السلف الصالح.الفواكه الدوانية: 1/214
“ফরজ নামাজের পর জিকির ও তাসবিহ করা কাঙ্খিত। আর দুআ করার দ্বারা ব্যস্ত থাকা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সালাফে সালেহ তথা পূর্বসূরীদের থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি।” [আলফাওকিহুদ দাওয়ানী: ১/২১৪]
◈ ইমাম আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
أما دعاء الإمام والمأمومين جميعا عقيب الصلاة فهو بدعة ، لم يكن على عهد النبي صلى الله عليه وسلم ، بل إنما كان دعاؤه في صلب الصلاة ؛ فإن المصلي يناجي ربه ، فإذا دعا حال مناجاته له كان مناسبا . مجموع الفتاوى,٢٢/٥١٩.
“অতঃপর ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সবাই একত্রিত হয়ে দুআ করা বিদআত। তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না বরং তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআ ছিল নামাজের মধ্যে। সুতরাং মুনাজাতের অবস্থায় দুআ করা তার জন্য উপযুক্ত হবে।” [মাজমুউল ফাতুয়া: ২২/৫১৯]
◈ শায়েখ সালিহ আলফাওযান বলেছেন,
أما الدعاء الجماعي بعد الصلاة فهو بدعة لأنه لم يرد عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن صحابته ولا عن القرون المفضلة أنهم كانوا يدعون دعاء جماعيا بأن يرفع الإمام يديه، ثم يرفعون أيديهم ويدعو، وهم يدعون معه، هذا من البدع. فتاوى صالح الفوزان: ٢/٦٨٠.
“নামাজের পর জামাতবদ্ধ দুআ করা বিদআত। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগণ হতে বর্ণিত হয়নি। এমনকি সোনালী যুগের কারো থেকে প্রমাণিত নাই যে, তাঁরা জামাতবদ্ধ দুআ করতেন এভাবে যে, ইমাম তার দুই হাতকে উত্তোলন করতেন, এরপর তারা (মুক্তাদিগণ) তাদের দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং দুআ করতেন ও তারা তার সাথে দুআ করতেন। এটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।” [ফাতাওয়া সালিহ আলফাওযান: ৬৮০]
◈ সাউদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড বলেছে,
ليس الدعاء بعد الفرائض بسنة إذا كان برفع الأيدي ، سواء كان من الإمام وحده أو المأموم وحده ، أو منهما جميعا ، بل ذلك بدعة ؛ لأنه لم ينقل عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن أصحابه رضي الله عنهم. ” انتهى . فتاوى اللجنة الدائمة” (7/103).
“ফরজ নামাজের পর দুআ করা সুন্নাত নয় যখন তা হবে হাত সমূহ উত্তোলনের দ্বারা- তা শুধু ইমামের পক্ষ থেকে হোক অথবা মুক্তাদির পক্ষ থেকে হোক অথবা উভয়ের পক্ষ থেকে হোক। বরং এটা বিদআত। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ রাযি আল্লাহু আনহুম হতে বর্ণিত হয়নি।” [ফাতাওয়া লাজনাতুদ দায়েমাহ: ৭/১০৩]
❑ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাতের পক্ষে যে সমস্ত দলিল পেশ করা হয় নিম্নে সেগুলো উল্লেখ পূর্বক অতিসংক্ষেপে সেগুলোর জবাব দেওয়া হল:
✪ ১) ইমাম তাবারী বলেছেন,
فإذا فَرغت من صلاتك، فانصب إلى ربك في الدعاء، وسله حاجاتك. تفسير الطبري
“অতঃপর যখন তুমি তোমার নামাজ থেকে অবসর হবে তুমি তোমার রবের দিকে দুআতে মনোযোগ দাও এবং তোমার প্রয়োজন চাও।” [তাফসীরু তাবারী, ২৪/৪৯৬]
◆ জবাব: এখানে সম্মিলিত মুনাজাতের কথা কোথায় আছে? বরং এখানে ফরজ সালাতের পর মাসনুন দুআ (হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বর্ণিত দুআ) তাসবিহ পাঠ এবং তিলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে।
✪ ২) ইবনুল জাওযী বর্ণনা করেছেন,
إن النبي صلى الله عليه وسلم: كان إذا دعا رفع يديه . اعلام العالم: ٤٠٣
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দুআ করতেন তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন।” [ইলামুল আলিম: হাদিস নম্বর: ৪০৩]
◆ জবাব: এখানে কি বলা হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামাজের পর হাত তুলেছেন? বরং এর ব্যাখ্যা অন্যান্য হাদিস যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুনুতে নাজেলা, বিতর নামাজ, বৃষ্টির জন্য দুআ করা, আরাফাহ ময়দানে দুআ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি দুই হাত উত্তোলন করেছেন।
সুতরাং যেখানে তিনি দুই হাত তুলেছেন সেখানে দুই হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। কিন্তু ফরজ নামাজের পর হাত উত্তোলন করেছেন মর্মে যেহেতু কোন সহিহ হাদিস নাই সেহেতু তা বিদআত।
✪ ৩) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
اذا سألتم الله فاسالوه ببطون اكفكم . رواه الحاكم في المستدرك: ١٩٦٨.
“তোমরা যখন আল্লাহর নিকটে চাইবে তখন তোমরা তাঁর নিকটে হাতের তালুর পেটের দ্বারা চাইবে।” [আলমুসতাদরাকু: ১৯৬৮]
◆ জবাব: এটা দুর্বল হাদিস। যেমন: ইবনু হাজার বলেছেন,
قال أبو داؤود: روي من طرق كلها واهية. التلخيص الحبير: ١/٤٥١.
“আবু দাউদ বলেছেন, এটি অনেকগুলো সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সবগুলোই ভিত্তিহীন।” [আততালখীসুল হাবীরু: ১/৪৫১]
“এর সনদে সালিহ বিন হাসান আছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা কারী থেকে জাল হাদিস বর্ণনা করেন।” [আততালখীসুল হাবীরু: ১/৪৫১] তারপরও এর দ্বারা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা কীভাবে সাব্যস্ত হয়? বরং এখানে সাধারণ ভাবে দুআ করার আদব সাব্যস্ত হয়েছে।
✪ ৪) ইমাম ইবনু কাসীর বর্ণনা করেছেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم: رفع يده بعد ما سلم . تفسير ابن كثير: ٢/٣٤٥.
রসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরানোর পর তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন।” [তাফসীরু ইবনে কাসীর: ২/৩৪৫]
◆ জবাব: এই হাদিসটির সনদে আলী বিন যায়েদ বিন জাদ্আন আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। [তুহফাতুল আহওযী: ২/১৭০]
ইজালী বলেন,, “তিনি শক্তিশালী নন। তিনি শিয়া মতবাদের দিকে ধাবিত ছিলেন।” [আসসিকাতু লিল আজালী: ২/১৫৪]
✪ ৫) ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন,
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم: لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من من صلاته . رواه الطبراني: ١٤٠٩٧.
“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ থেকে অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন না।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ১৪৯০৭] এই হাদিসকে হাফিয হায়সামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য।
◆ জবাব: এর সনদে আল ফুযাইল বিন সুলায়মান আছেন। তার ব্যাপারে ইবনু শাহিন আল বাগদাদী বলেছেন, ইমাম আহমাদ বলেছেন,
الفضيل بن سليمان ليس بشيء.
“আল ফাজল বিন সুলায়মান কিছুই নন। (অর্থাৎ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।)” [তারীখ আসমাউ ওয়াল কাযযাবীন: ১/১৫৬]
ইমাম নাসায়ী বলেছেন, “তিনি শক্তিশালী নয়।” [আলজামে ফিলজারহে ওয়াত তাদীলে: ২/৩৬৫] সুতরাং হাদিসটি সহিহ নয়। অধিকাংশ আলেম এটিকে দুর্বল বলেছেন। [সিলসিলাতু আহাদিসিস যাঈফাহ: ৬/৫৬।]
✪ ৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا يَجْتَمِعُ مَلأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلا أَجَابَهُمُ اللَّهُ. الطبراني: (3536). ورواه الحاكم في المستدراك: ٥٤٧٨
“কিছু মানুষ একত্রিত হবে অতঃপর তাদের কেউ দুআ করবে এবং তাদের সবাই আমীন বলবে তবে আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ৩৫৩৬। আলমুসতাদরাকু লিলহাকিম হাদিস নম্বর: ৫৪৭৮] হাফিজ হায়সামি বলেছেন, ইবনু লাহিয়াহ ব্যতীত এর বর্ণনাকারীগণ সহিহ বুখারীর বর্ণনা কারী। আর ইবনু লাহিয়াহ হাসানুল হাদিস।
◆ জবাব: এই হাদিসটিকে কেউ কেউ সহিহ বলেছেন। কিন্তু এই হাদিসে ইবনু লাহিয়াহ আছেন। তিনি দুর্বল যেমন: ইমাম তিরমিযী বলেছেন,
وابن لهيعة ضعيف عند أهل الحديث، ضعفه يحيى بن سعيد القطان وغيره . سنن الترمذي: ١/٦١.
“হাদিসের বিদ্বানগণের নিকটে ইবনু লাহিয়াহ দুর্বল। তাকে দুর্বল বলেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান।” [সুনানু তিরমিযী: ১/৬১]
সুতরাং এটা দুর্বল হাদিস। শাইখ আলবানি বলেছেন, এই সনদে ইবনু হুবায়রাহ নামক যে বর্ণনাকারী আছে তার নাম আব্দুল্লাহ আবু হুবায়রাহ। যদিও তিনি নির্ভরযোগ্য কিন্তু তিনি হাবিব বিন মাসলামাহকে পাননি। কেননা তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন ৪১ হিজরিতে আর হাবিব বিন মাসলামাহ তার এক বছর পর মৃত্যু বরণ করেছেন। সুতরাং এই সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। সম্ভবত এ কারণে ইমাম হাকিম এবং ইমাম যাহাবী এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। [সিলসিলাত আহাদিসেস জঈফাতে ওয়াল মওজুআতে: ১২/৯৪০।
✪ ৭) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,
قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ . والحديث حسنه الترمذي .سنن الترمذي: (3499).
“বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল, কোন সময়ের দুআ কবুলের অধিক নিকটবর্তী? তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যবর্তী সময়ে এবং ফরজ নামাজ সমূহের পর।” এই হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন। [সুনানু তিরমিযী: ৩৪৯৯]
◆ জবাব: এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণের সম্মিলিত দুআ করার কথা নেই বরং এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর দুআ কবুলের সময়ের দিকে ইঙ্গিত আছে। যেমন: উবায়দুল্লাহ মুবারাকপুরী বলেছেন,
ودبر الصلوات المكتوبات من أوقات الإجابة. مرعاة المفاتيح: ٣/٣٢٦
“এবং ফরজ নামাজের পর (অথবা নামাজ ফরজ সালাতের শেষাংশ তথা সালাম ফেরানোর আগের সময়টা) দুআ কবুলের সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম।” [মিরআতুল মাফাতীহে: ৩/৩২৬]
✪ ৮) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,
«لَا يَؤُمُّ رَجُلٌ قَوْمًا فَيَخُصُّ نَفْسَهُ بِالدُّعَاءِ دُونَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ» رواه الترمذي (357). وقال حديث ثوبان حديث حسن .
“সেই ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করবে না যে দুআর ব্যাপারে নিজেকে খাস করে এবং অন্যদেরকে বাদ দেয়। আর যদি এটা করে তাহলে সে তাদের সাথে খেয়ানত করবে।” [সুনানুত তিরমিযী: ৩৫৭, তিনি বলেছেন, সাওবানের হাদিসটি হাসান]
◆ জবাব: এখানে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কোন কথা নাই। বরং বলা হয়েছে, ইমাম নামাজের মধ্যে যে দুআ করবেন তাতে মুক্তাদিদেরকেও শামিল করবে। যেমন: মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল আমীর আসসান্আনী বলেছেন,
إذا كان في الصلاة لا في الدعاء خارجها. التنوير شرح الجامع الصغير
“এ দুআ যখন নামাজের মধ্যে হবে; নামাজের বাইরের দুআয় নয়।” [আততানবীরু শরহুল জামে আসসগীরু: ৫/১৮৭]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন,
فالمراد به الدعاء الذي يؤمِّنُ عليه المأموم: كدعاء القنوت . مجموع الفتاوى: ٢٣ /١١٨
“অতঃপর এ দ্বারা উদ্দেশ্য সেই দুআ যাতে মুক্তাদিগণ আমীন বলবে। যেমন: কুনুতের দুআ।” [মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৩/১১৮]
✪ ৯) আমর বিন আওফ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন,
إن دوسا عصت فادع الله عليها فاستقبل القبلة ورفع يديه فقال اللهم اهد دوسا . صحيح البخاري: 2937.
“নিশ্চয়ই দাউস গোত্র অবাধ্য হয়েছে। সুতরাং আপনি তাদের উপর বদ দুআ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলামুখি হয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাউস গোত্রকে হেদায়েত কর।” [সহীহুল বুখারী: ২৯৩৭]
◆ জবাব: এই হাদিসে দুআ করা ফরজ নামাজের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এই দুআ আম (ব্যাপক) ভাবে দুআ করার অন্তর্ভুক্ত। ফরজ নামাজের পর দুআ করা খাস বিষয়। তাছাড়া এখানে একাকী দুআর কথা এসেছে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদেরকে ডেকে সম্মিলিতভাবে দাউসের বিরুদ্ধে বদদুআ করেননি।
✪ ১০) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,
عن سلمان رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «إن ربكم حيي كريم يستحيي من عبده إذا رفع يديه إليه أن يردهما صفرًا» رواه أبو داود والترمذي: (٣٥٥٦) وحسنه، وجود إسناده الحافظ.
“নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা চিরঞ্জীব এবং অতি আত্মসম্মানের অধিকারী। বান্দা তাঁর দিকে দুই হাত উত্তোলন করে দুআ করলে তিনি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।” [সহিহ ইবনে মাজাহ: ৩১৩১]
◆ জবাব: এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কোন ইংগিতও নাই।
✪ ১১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ما من عبد بسط كفيه في دبر كل صلاة…. إلا كان حقا على الله عز وجل أن لا يرد يديه خائبتين . اليوم والليلة للنبوي: ١ /٣٨ .
“কোন বান্দা প্রত্যেক নামাজের পর দুই হাত প্রসারিত করলে আল্লাহ তাআলার উপর কর্তব্য, তিনি তাকে শুণ্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ে নিরাশ করবেন না।” [১/৩৮]
◆ জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল। যেহেতু এর সনদে আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান আল কুরাশী আছেন। তিনি দুর্বল এবং মাতরুক (পরিত্যাজ্য)। [তুহফাতুল আহ্ওযী: ৩/১৭১, নুযহাতুল আলবাবে: ২/৮৫৯]
✪ ১২) ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন,
عَن سلمَان رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: ما رفع قوم أكفهم إلى اللهِ عزَّ وجلَّ يسألونه شيئا إلا كان حقا على الله أن يضع في أيديهم شيئا الذي سألوا . رواه الطبراني: ٦١٤٢.وقال الهيثمي في المجمع: رِجَاله رجال الصَّحِيح. مجمع الزوائد: ١٧٣٤١.
সালমান রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন কওম তাদের হাত তুলে আল্লাহর নিকটে দুআ করে কোন কিছু চাইলে আল্লাহর উপর তাদের হক যে, তিনি তাদের হাতে কিছু রাখবেন যা তারা চেয়েছে।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ৬১৪২]
এই হাদিসটির ব্যাপারে হাফিজ হায়সামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগণ বুখারীর বর্ণনাকারী। [মাজমুউয যাওয়ায়েদ: ১০/১৬৯]
◆ জবাব: এই হাদিসে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কথা কোথায় আছে? বরং বলা হয়েছে, কোন কওম দুআ করলে আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন। তাছাড়া এই হাদিসটির সনদে সাঈদ বিন ইয়াস আল জুরায়রী আছেন। তার ব্যাপারে আল্ আজালী বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। তবে শেষ জীবনে সংমিশন করে দিয়েছেন। [আলজামে ফিলজারহে ওয়াতাদীলে: ১/২৯০]
এ ছাড়া এর সনদে শাদ্দাদ বিন সাঈদ আররাসেবী আছেন। কোন কোন ইমাম তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তবে ইমাম বুখারী তাকে দুর্বল বলেছেন। [আততারীখুল কাবীরু: ৪/২২৭]
মোটকথা, এ হাদিস দ্বারা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা প্রমাণিত হয় না।
✪ ১৩) ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন,
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إذا أمن القارئ فأمنوا، فإن الملائكة تؤمن، فمن وافق تأه تأمين الملائكة، غفر له ما تقدم من ذنبه». أخرجه البخاري (٦٤٠٢).
আবু হুরায়রাহ রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন কুরান পাঠকারী (ইমাম) আমিন বলে, তখন তোমরাও আমিন বলো। যার আমিন বলা ফেরেশতাদের আমিন বলার সাথে হয়, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।” [সহীহুল বুখারী হাদিস নম্বর: ৬৪০২]
◆ জবাব: এটি সালাতের ভেতরের বিষয়। যেমন: ইমাম যখন গাইরিল মাগযুবি আলাইহিম পড়ে তখন মুক্তাগিণ আমিন বললে এই মর্যাদা লাভ হয় যা অন্য হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে। সুতরাং এর দ্বারা ফরজ সালাতের পরে ইমাম-মুক্তাদির সমন্বয়ে দু হাত তুলে মুনাজাত সাব্যস্ত হয় না।
✪ ১৪) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন:
عن عمر بن الْخطاب رَضِي الله عَنهُ قَالَ: «كَانَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم اذا رفع يَدَيْهِ فِي الدُّعَاء لم يحطهما حَتَّى يمسح بهما وَجهه». أخرجه الترمذي: ٣٣٨٦.
উমার বিন আলখাত্তাব রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দুআতে তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন তখন তিনি উভয় হাতকে রাখতেন না যতক্ষণ না তিনি উভয় হাত দ্বারা তাঁর মুখমণ্ডলকে মাসেহ করতেন।” [সুনানু তিরমিযী হাদিস নম্বর: ৩৩৮৬]
◆ জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল। কেননা এর সনদে
حماد بن عيسى و هو لين الحديث. مسند البزار: ١/٢٤٣.
“হাম্মাদ বিন ঈসা আছেন। তিনি হাদিসে দুর্বল।” [মুসনাদুল বাযযার: ১/২৪৩]
ইবনুল জাওযী বলেছেন, “এই হাদিসটি সহিহ নয়।” [আল্ইলালুল মুতানাহিয়্যা। ফিল্আহাদিসেল ওয়াহিয়্যা।: ২/৩৫৬]
ইমাম নববী বলেছেন, শায়েখ আব্দুল হক তার কিতাব আল্ আহকামে বলেছেন, ইমাম তিরমিযী বলেন, “এই হাদিসটি সহিহ।” তিনি ভুল বলেছেন যে, ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি সহিহ হাদিস বরং তিনি বলেছেন, এটি গরিব হাদিস। [আল্ মাজমু শরহুল মুহাযযাব: ৩/৫০১]
ইমাম যাহাবী বলেছেন,
وما هو بالثابت لأنهم ضعفوا حمادا. تذكرة الحفاظ: ٣/٦٨.
“এটি প্রমাণিত হাদিস নয়। কেননা তারা (মুহাদ্দিসগণ) সবাই হাম্মাদকে দুর্বল বলেছেন।” [তাযকিরাতুল হুফফাজ: ৩/৬৮]
✪ ১৫) ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন,
عَن عَائِشَة رضي الله عنها قَالَت: «رَأَيْت النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رَافعا يَدَيْهِ حَتَّى بدأ ضبعيه يَدْعُو». رواه البخاري في جزء
رفع اليدين ص: ٥٩.
আয়েশা রাযি আল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দু হাতকে উঁচু করা অবস্থায় এমনভাবে দুআ করতে দেখেছি যে, হাত উঠানোর কারণে তাঁর বাহু প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে।” [জুয্উ রফ্উল ইয়াদাইন: ৫৯ পৃষ্ঠা]
◆ জবাব: এই হাদিস দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুই হাতকে উঁচু করে দুআ করা সাব্যস্ত হয়। কিন্তু ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত করা সাব্যস্ত হয় না।
✪ ১৬) ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন,
عن محمد بن أبي يحيى قال: رأيت عبد الله بن الزبير رضي الله عنه ورأى رجلًا رافعًا يديه يدعو قبل أن يفرغ من صلاته، فلما فرغ منها قال: «إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته». رواه الطبراني: (١٤٩٠٧) وقتل الألباني: قال الهيثمي في مجمع الزوائد: (١٧٣٤٥) رجاله ثقات
মুহাম্মাদ বিন আবু ইয়াহ্ইয়া হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাযি আল্লাহু আনহুকে আর তিনি এক ব্যক্তিকে দুই হাত তুলে দুআ করতে দেখছেন তার নামাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পূর্বেই। অতঃপর তিনি যখন নামাজ শেষ করলেন তখন তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নামাজ থেকে ফারিগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন না।” [তাবারানী হাদিস: ১৪৯০৭]
আলবানি বলেছেন, হাফিজ হায়সামী মাজমাউয যাওয়েদ বলেছেন, এর বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য। [সিলসিলাতুস আহাদিসেস জ্ঈফাতে: ১৪/৩১০]
◆ জবাব: এই হাদিসের সনদে ফুজাইল বিন সুলায়মান আছেন। তিনি দুর্বল। ইবনু শাহীন আল বাগদাদী বলেছেন,
الفضيل بن سليمان يعني النمري ليس بشيء . تاريخ أسماء الضعفاء والكذابين: ١٥٦ ص.
ফুযাইল বিন সুলায়মান (অর্থাৎ আননামরী)। কিছুই নয় (অর্থাৎ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।) [তারিখু আসমায়ে যুআফায়ে ওয়াল কাযযাবীন: ১৫৬ পৃষ্ঠা]
ইয়াহ্ইয়া বিন মুঈন বলেছেন,
الفضيل ليس بثقة. تاريخ ابن معين: ٤ /٢٢٦.
“ফুযাইল নির্ভরযোগ্য নন।” [তারিখে ইবনে মুইন: ৪/২২৬]
✪ ১৭) ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,
عن الفضل بن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الصلاة مثنى مثنى، تشهد في كل ركعتين، وتخشع وتضرع وتمسكن، ثم تقنع يديك، يقول ترفعهما إلى ربك مستقبلًا ببطونهما وجهك، وتقول يا رب يا رب، ومن لم يفعل ذلك فهو كذا وكذا»، وفي رواية: «فهو خداج». رواه الترمذي وصححه. سنن الترمذي: ٣٨٥.
ফজলত বিন আব্বাস রাযি আল্লাহ আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজ দুই রাক্আত দুই রাক্আত করে আদায় করতে হবে। তুমি প্রত্যেক দুই রাক্আতে তাশাহহুদ পাঠ করবে। নামাজে বিনয়, নম্রতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করবে। এরপর তুমি দুই হাতকে তোমার পালন কর্তার দিকে উত্তোলন করবে কিবলামুখি হয়ে উভয় হাতের পেটকে (তালু) তোমার মুখের দিকে করে বলবে: হে আমার রব, হে আমার পরোওয়ারদেগার! আর যে ব্যক্তি এটা করবে না তার দুআ এমন এমন। অপর বর্ণনায় এসেছে: অসম্পূর্ণ (অর্থাৎ যে এভাবে দুআ করবে না তার দুআ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে) ইমাম তিরমিযী উহাকে বর্ণনা করেছেন ও সহিহ বলেছেন। [সুনানু তিরমিযী, হাদিস নম্বর: ৩৮৫। আরও বর্ণনা করেছেন আহমদ ও তাবারানী এবং নাসায়ী সহ অন্যান্য ইমামগণ]
◆ জবাব: এই হাদিসটি দুর্বল। এতে আব্দুল্লাহ বিন নাফে বিন আল্ উম্ইয়া আছেন। তার ব্যাপারে হাফিয ইবনে হাজার বলেছেন, ইবনুল মাদিনী বলেছেন, “সে অপরিচিত।”
ইমাম বুখারী বলেছেন, “তার হাদিস সহিহ নয়।” [তাহযীবুত তাহযীবুত: ৬/৫০]
ইমাম তিরমিযী বলেন,,
سمعت محمد بن اسماعيل البخاري يقول: روى شعبة هذا الحديث عن عبد ربه بن سعيد فأخطا في مواضع. سنن الترمذي: ٣٨٥.
আমি মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল অর্থাৎ ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, “এই হাদিসকে শুবাহ বর্ণনা করেছেন আব্দে রাব্বিহি বিন সাঈদ হতে। কিন্তু তিনি কয়েকটি স্থানে ভুল করেছেন।” [সুনানু তিরমিযী: ৩৮৫]
✪ ১৮) ইবনুল আরাবী বর্ণনা করেছেন,
عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: ما من عبد يبسط كفّيه في دبر كل صلاة ثم يقول: اللهم إلهي وإله إبراهيم وإسحاق ويعقوب، وإله جبريل وميكائيل وإسرافيل، أسألك أن تستجيب دعوتي فإني مضطر. معجم ابن العربي: ١٢٠٤
আনাস রাযি আল্লাহ আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলছেন, কোন বান্দা প্রত্যক নামাজের পর তার দুই হাতকে প্রসারিত করবে এরপর সে বলবে: “হে আল্লাহ, আপনি আমার ইলাহ। আপনি ইব্রাহিম, ইসহাক এবং জিবরাইল, মিকাইল ও ইস্রাফিলের মাবুদ। আমি আপনার নিকটে প্রার্থনা করছি, আপনি আমার দুআ কবুল করুন। কারণ আমি নিতান্ত অসহায়।” [মুজামু ইবনে আরাবী: ১২০৪]
◆ জবাব: এই হাদিসটিও দুর্বল। যেহেতু এর সনদে আছে, আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান আলবালসী, তিনি খুসাইফ হতে।
ইমাম আহমাদ তাকে অভিযুক্ত করেছেন এবং তার হাদিসকে পরিত্যাগ করেছেন।
ইমাম নাসায়ী বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। [আযযিয়াদাতু আলাল মওজু আতে: ২/৭৩০]
✪ ১৯) ইবনু আবী শায়বাহ বর্ণনা করেছেন,
عن جابر بن يزيد بن الأسود العامري، عن أبيه، قال: «صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انحرف ورفع يديه ودعا»
أخرجه ابن أبي شيبة في مصنفه (٣٠٩٣) وسنده جيد
জাবির বিন ইয়াযিদ বিন আল্আস্ওয়াদ হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন তার পিতা হতে। তিনি বলেন,, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম-এর পেছনে ফজর নামাজ আদায় করেছি। তিনি যখন সালাম ফিরালেন তখন তিনি তাঁর দুই হাত উত্তোলন করে দুআ করলেন।” [মুসান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নম্বর: ৩০৯৩]
◆ জবাব: এই সনদ সহিহ কিন্তু হাদিসের শেষের অংশ “তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করে দুআ করলেন” এটি মুসান্নাফে নাই এবং এর কোন সনদও নাই। এ কারণে শাইখ আলবানি বলেছেন,
وفيه كذب و خطأ مكشوفان. سلسلة الأحاديث الضعيفة و الموضوع: ١٢/٤٥٣.
“এতে উন্মুক্ত মিথ্যা এবং ভুল আছে।” [সিলসিলাতুল আহাদিসাহ: ১২/৪৫৩]
আল্লামা মুবারাকপুরী বলেছেন,
الحديث رواه ابن أبي شيبة في مصنفه، كذا ذكر بعض الأعلام هذا الحديث بغير سند، وعزاه إلى المصنف. ولم أقف على سنده. فالله تعالى أعلم كيف صحيح أو ضعيف؟. تحفة الاحوذي: ٢/١٧١
ইবনু আবী শায়বাহ তার মুসান্নাফে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ কিছু বিদ্বানগণ এই হাদিসকে সনদ বিহীন বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে মুসান্নাফের দিকে সম্পর্কিত করেছেন। আমি এর সনদ অবগত হতে পারিনি। সুতরাং আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত যে, কিভাবে উহা সহিহ অথবা দুর্বল? [তুহফাতুল আহ্ওয়াজি: ২/১৭১]
পরিশেষে উল্লেখিত হাদিস দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণের সম্মিলিত মুনাজাত করা প্রমাণিত হয় না। বরং তা সাধারণ ভাবে দুআ করা সাব্যস্ত হয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিগণ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে দুই হাত উত্তোলন করে দুআ করেন নাই। সুতরাং উহা না করাই সুন্নাত।
▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
প্রস্তুত করণে: শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন মুসলিম শেখ আল মাদানী।
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।